ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:২২:০৫ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৫:৩০ এএম

অনলাইন সংস্করণ

জনতা ব্যাংক বেক্সিমকো গ্রুপকে নির্ধারিত নিয়মের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত ঋণ দিয়েছে

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৫:৩০ এএম

জনতা ব্যাংক বেক্সিমকো গ্রুপকে নির্ধারিত নিয়মের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত ঋণ দিয়েছে

ছবি: সংগ্রহ

গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হন তার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো মেয়াদে ঋণ অনিয়মের অসংখ্য অভিযোগ ছিল।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম থাকা সত্ত্বেও নতুন নতুন ঋণ নিয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ। তাদের সেই প্রভাব যেন এখনও ভর করে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর।

 

সম্প্রতি বেক্সিমকোর কারখানা চালু রাখা এবং শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে জনতা ব্যাংকের কাছে ৬৯ কোটি ৫ লাখ টাকার ঋণ সহায়তা চেয়ে আবেদন করে গ্রুপটি।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, শ্রমিকদের আগস্টের বেতন-ভাতা পরিশোধে ৬৯.০৫ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে ১ সেপ্টেম্বর বিআরপিডির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঋণের জন্য জনতা ব্যাংকে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক তহবিল বিতরণ করেনি; যার ফলে শ্রমিকদের নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

 

এমন পরিস্থিতে জনতা ব্যাংকে দ্রুত তহবিল ছাড়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আহ্বান জানানো হয়েছে। সূত্র জানান, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনুসর, জনতা ব্যাংকের এমডি মো. আবদুল জব্বার ও বেক্সিমকো গ্রুপের একজন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে দেশের সার্বিক দিক বিবেচনা করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ঋণ ছাড় করতে জনতা ব্যাংকে নির্দেশ দেন গভর্নর।

 

জানা যায়, গ্রুপটির অনুকূলে ইতোমধ্যে ৫৫ কোটি টাকার ঋণ ছাড় করেছে জনতা ব্যাংক। একটি খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে ব্যাংক কোম্পানির আইন ভঙ্গ করেছে জনতা ব্যাংক। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ ছাড় করতে অনাপত্তি দিয়েও নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। 

 

খেলাপি হওয়ার পরও গ্রুপটিকে নিয়ম ভেঙে ঋণ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গত বৃহস্পতিবার জনতা ব্যাংকের এমডি মো. আবদুল জব্বার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নিয়ম করা হয় প্রতিষ্ঠানের জন্যই। বর্তমান রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নিয়ম মানতে গেলে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। কারণ বেক্সিমকোয় ৩০-৪০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে না পারলে গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে। তাই দেশের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ দেয়ার অনুমোদন দিয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ৫৫ কোটি টাকা ঋণ ছাড় করেছি।’ যদিও বৃহস্পতিবারই তার নিয়োগ বাতিল করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

 

 

জনতা ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে জনতা ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের নেয়া মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধনের প্রায় ৯৫০ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী, একজন বা একক ঋণগ্রহীতাকে ব্যাংকগুলো তাদের পরিশোধিত মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ দিতে পারবে না। সেখানে জুন শেষে জনতার পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। অথচ নথিতে দেখা যায়, জনতা থেকে নেয়া বেক্সিমকোর ঋণের ৭২ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।


আরও জানা গেছে, জনতার বিতরণ করা ৯৮ হাজার কোটি টাকার ঋণের ২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ বেক্সিমকোর মালিকানাধীন ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। এই ৩০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬টি একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার সীমা লঙ্ঘন করেছে।

 

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির বোর্ডের সাবেক ও বর্তমান একাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে ঢাকা-১  আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সালমান এফ রহমান ব্যাংকিং বিধিবিধানকে পাশ কাটিয়ে জনতা বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহায়তায় বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছেন।

 

এছাড়া গত তিন বছরে জনতা ব্যাংকের ঋণ বেড়েছে দ্রুত গতিতে। ২০১৫ সালে জনতার কাছে বেক্সিমকো ও এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৫ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালে যা বেড়ে দাঁয়ায় ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকায়। সর্বশেষ এ বছরের জুন শেষে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

 

 জনতার একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার সীমা লঙ্ঘন করলেও গত বছরের ১ আগস্ট বেক্সিমকোকে আরও ৪৭৯ কোটি টাকা ঋণ দিতে অনাপত্তিপত্র দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

 

জনতার কর্মকর্তারা জানান, সালমান এফ রহমান সবসময় ঋণ পুনঃতফসিল করতেন এবং বেক্সিমকোকে খেলাপিদের তালিকাভুক্ত না করতে তার রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করতেন।

 

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, পিপিই, সিরামিক, রিয়েল এস্টেট, কনস্ট্রাকশন, ট্রেডিং, মেরিন ফুড, আইসিটি, মিডিয়া, ডিটিএইচ, ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও এনার্জি খাতের এ ব্যবসায়ী গ্রুপটি তাদের ঋণের একটি বড় অংশ ২০২২ সালের জুনে এবং বাকিটা গত বছরের জুনে পুনঃতফসিল করেছে।

 

এসব ঋণের বড় অংশ খেলাপি হওয়ায় গত ৩০ জুলাই ব্যাংকটির পর্ষদ সভায় নতুন করে পুনঃতফসিল প্যাকেজ উপস্থাপন করা হয়। নথিতে দেখা যায়, সেই প্রস্তাব অনুমোদন পায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনতার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ কারণে বেক্সিমকোর প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ মন্দ ঋণ হয়ে গেছে।’

জনতা ব্যাংক বেক্সিমকো গ্রুপকে নির্ধারিত নিয়মের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত ঋণ দিয়েছে