ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১০:৩৬:৫৪ এএম

জনবান্ধব বাজেট ও কদম আলী | মোঃ আলীমুজ্জামান

২ জুন, ২০২৪ | ২:১০ পিএম

জনবান্ধব বাজেট ও কদম আলী | মোঃ আলীমুজ্জামান

চালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, যত নামী দামি সরকার বা সেরা অর্থনীতিবিদের নিয়ে বাজেট তৈরি করলেও সেটা জনবান্ধব হতে পারে না। বিশ্বের যুদ্ধ পরিস্থিতি, রিজার্ভ সংকট, রপ্তানি আয়, রেমিটেন্স, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি সহ সকল বিষয় সমূহের ইমপ্যাক্ট জনবান্ধব বাজেট তৈরি অসম্ভব করে তুলেছে। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলেও, ডলারের দাম বাড়ার কারণে দাম বেড়ে গেল। যা সকল কিছুর উপর প্রভাব বিস্তার করে মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে।

 

কদম আলীকে থামিয়ে বললাম, মানলাম কিন্তু প্রতি বছর বিদেশে পাচার হয় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। বাড়ছে ঋণ খেলাপির পরিমাণ, দুর্নীতির কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যাংকিং সেক্টরে, আস্থার সংকট মুলে ঋণ খেলাপির শাস্তি না হওয়া ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে  সঞ্চয় করতে না পাড়া। বাজেটে কিভাবে এগুলো রোধ করা যায় বা এদের শাস্তির আওতায় এনে আদায়ের ব্যবস্থা করতে পারলে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রয়োজন পড়তো না।

 

ও বলল, মানলাম, মধ্যম আয়ের দেশে ৩৭ লাখ মানুষ কর দেয়? কম পক্ষে এক কোটি আয়কর রিটার্ন জমা হলে, মন্ত্রীর বলা কথা সত্য ভাবা যায়, দেশে চার  কোটি মানুষ ইউরোপ আমেরিকার মতো জীবন যাপন করে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও জনবান্ধব বাজেট সম্ভব।

বললাম, তুমি শুরু করলে কি দিয়ে, আর বলছো কি? মাথা ঠিক আছে তো? গরম বাড়ার সাথে উল্টো পাল্টা বলছো না তো?

 

ও বলল, মাথায় হিটার বসালেও, সেই এক কথা বলব।  ধর খেলাপি ঋণের অর্ধেক আদায় করা গেলে তারল্য সংকট কমবে। রেমিটেন্স আসা প্রথম দশটা দেশে থাকা মানুষের  সুবিধা অসুবিধা শোনা ও সেগুলো সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনায় সমাধান করলে তারা নৈতিক ভাবে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাবে। রপ্তানি মনিটরিং করা, যে পরিমাণ পণ্য যাচ্ছে, তার বিপরীতে ডলার আসছে কিনা। বৈধ পথে রেমিটেন্স ও রপ্তানির দ্বারা রিজার্ভ সংকট কাটবে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করতে আয়করের আওতা বাড়ানো। যদি দুই কোটি মানুষকে আয়করের আওতায় আনা যায় এবং বাকিরা  যদি গড়ে ১০ হাজার টাকা ট্যাক্স দেয় তাহলে অধিক আদায় হবে ১৬.৩০ হাজার কোটি টাকা। আয়কর থেকে চাইলে অধিক ৩২ হাজার কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব।

 

বললাম, ভালোই তো বললা, এগুলো করতে যে পরিমাণ কষ্ট ও ত্যাগ শিকার করতে হবে সেটা কি তুমি করবা? বুদ্ধি দেওয়া সহজ, বাস্তবায়ন করা বহু কষ্টের ও চালেঞ্জিং। তবে বলতে হবে, তোমার ইনোভেটিভ পাওয়ার আছে।

 

ও বলল, তোমরা কষ্টও করবা না, আবার জনবান্ধব বাজেট চাইবা সেটা সম্ভব নয়। আসলে শুরুতে জেনে বুঝে বলেছি জনবান্ধব বাজেট সম্ভব না। সহজে রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা, ডিউটি বাড়ানো, আয়কর হার বৃদ্ধি, ভ্যাট অব্যাহতি বাদ, হার ও নতুন কিছু পণ্যের ভ্যাট বৃদ্ধি হলে কোন ভাবে মুদ্রাস্ফীতি কমানো সম্ভব না। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নেয় বাবসায়ীগন, তাদের টাকা ট্যাক্সের বাহিরে থাকে ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট করতে না পারায়। সেটা কালো টাকা নয়, কালো টাকা সেই গুলো যা দুর্নীতির মাধামে আয় করা হয়। তারা কিন্তু কেউ সে সুযোগ নেয় না।

 

বললাম, এ ধরনের সুযোগ নিয়মিত টাক্স প্রদানকারীদের নিরুৎসাহিত করে। প্রশ্ন ছাড়া বৈধ  করার সুযোগ দিলেও হয়রানিতে পরতে হয় রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়। ভয় দেখানো হয় পাঁচ বছরের ট্যাক্স ফাইল রিওপেন করার।

 

ও বলল, যারা রাজস্ব আদায়ের পলিসি করে, তাদের তো সেটা মানতে হয় না। বিগত অর্থ বছরে বিদেশে পাচার করা অর্থ  দেশে অনলে সাড়ে সাত শতাংশ টাক্স দিয়ে বৈধ করার আইন ছিল। একজনও সে সুযোগ গ্রহণ না কড়ায়, এবার বাতিল হবে। বিদেশে অর্থ পাচার করেছে কি ফেরত আনতে? তাও সেটার  উপর ট্যাক্স দিয়ে বৈধ করার আইন কল্পনা করা যায় কিন্তু বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয়। কালো টাকা সাদা করার অর্থ কিন্তু জিডিপি তে সঞ্চালিত হয়। শর্টেজ হয় বিদেশে পাচার করা অর্থ, কিছু ট্যাক্স আদায় বৃদ্ধির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পাচার বন্ধ করা। পত্রিকার খবর অনুসারে এরকম চার পাঁচ জন মিলে দেশের এক বছরের বাজেট বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা রাখে বলে মনে করা হয়।

 

বললাম, এভাবে বললে চাকরি চলে যাবে। পাচার কেন হয়, কারা ও কিভাবে করে সেটা জানা জরুরি হয়তবা জানাও আছে। থাক সেসব কথা, চলো অটো রিক্সায় চড়ে হাওয়া খেয়ে আসি। এটার উপর আবার ট্যাক্স বসানোর চিন্তা করো না। বহু অসহায় পরিবার চলে।

ও বলল, অটো রিক্সা তো বন্ধ করেছিলো, চালু কবে হল। পারও রে ভাই তোমরা। চল বের হই।

জনবান্ধব বাজেট ও কদম আলী | মোঃ আলীমুজ্জামান