ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ
জানুয়ারি-জুন সময়ে নীতি সুদহার স্থির রাখতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আজ (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৭ এএম
![জানুয়ারি-জুন সময়ে নীতি সুদহার স্থির রাখতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2025/02/10/20250210100730_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
ক্রমাগত বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি কমার আভাস দেওয়ায় কন্ট্রাকশনারি মনিটারি পলিসির (সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি) অংশ হিসেবে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধেও নীতি সুদহার (পলিসি রেট) না বাড়িয়ে ১০ শতাংশেই রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর বাইরে এক্সচেঞ্জ রেটেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। একইসঙ্গে, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মতোই রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
আজ মঙ্গলবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২৫ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য নতুন মুদ্রানীতির অনুমোদন দেওয়া হবে।
পরে দুপুরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তখন মুদ্রানীতি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
নীতি সুদহারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সামগ্রিক অর্থনীতির সুদের হারকে প্রভাবিত এবং একইসঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চেষ্টা করে। এটি রিপারচেজ এগ্রিমেন্ট বা রেপো রেট নামেও পরিচিত।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ওভারনাইট ধার নেওয়ার জন্য রেপো রেট চার্জ করা হয়। রেপো রেট বেড়ে গেলে অর্থ ধার করার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর খরচ বেড়ে যেতো। যার ফলে সেটি লেন্ডিং রেট (ঋণের সুদ) এবং ডিপোজিট রেটকে (আমানতের সুদ) বাড়িয়ে দিতো।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপো রেট না বাড়ানোর ফলে ব্যাংক ও গ্রাহককে এখন নতুন করে বাড়তি সুদের চাপ নিতে হবে না। বর্তমানে ব্যাংকগুলো আমানতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ এবং ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশ অফার করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "পলিসি রেট বাড়ানো হবে কিনা- এ সিদ্ধান্ত নিতে জানুয়ারি মাসের মূল্যস্ফীতি হারের দিকে আমরা নজর দিচ্ছিলাম। জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে আমাদের নীতি সুদহার ১০ শতাংশ। সেদিক থেকে দেখতে গেলে নীতি সুদহার মূল্যস্ফীতির চেয়ে অল্প উপরে রয়েছে। ফলে, আমরা নীতি সুদহার স্থির রাখার জন্য সুপারিশ দিয়েছি।"
খাদ্য মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ফলে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি জানুয়ারিতে ০.৯৫ শতাংশ কমে ৯.৯৪ শতাংশে নেমে এসেছে–যা ডিসেম্বরে ১০.৮৯ শতাংশ ছিল। তিন মাসের মধ্যে এই প্রথম মুদ্রাস্ফীতি সিঙ্গেল ডিজিটে ফিরে এসেছে। এর আগে, শেষবার মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে ছিল ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে- তখন এই হার ছিল ৯.৯২ শতাংশ। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ফাহমিদা খাতুন টিবিএসকে বলেন, "চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেশ কয়েক দফায় পলিসি রেট বাড়ানো হয়েছে। এখন আমাদের পলিসি রেট বাড়ানোর আপাতত কোনো প্রয়োজন দেখছি না।"
নীতি সুদহার বাড়ানোর পরেও মূল্যস্ফীতি কমছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমাদের অর্থনীতিতে একবার নীতি সুদহার বাড়ানোর পর সেটা ইকনোমিতে ট্রান্সমিশন হতে প্রায় ১ বছরের মতো সময় প্রয়োজন হয়। ফলে আমাদের এখন অবজার্ভেশন করতে হবে।"
তিনি বলেন, "এছাড়া শুধুমাত্র নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব নয়। এর সঙ্গে ডলারের রেটে স্থিতিশীলতা, সাপ্লাই সাইড ইন্টারভেনশনসহ অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সবমিলিয়ে ২০২৪ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত নীতি সুদহার ৭.৭৫ শতাংশ থেকে ২.২৫ পারসেন্টেজ পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে দুইবার নীতি সুদহার বাড়ানো হয়। গতবছরের অগাস্টে অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার ছিল ৮.৫০ শতাংশ। সেটিকে তিনধাপে বাড়িয়ে সর্বশেষ গতবছরের অক্টোবরে ১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়।
সে হিসাবে নীতি সুদহার বাড়ানোর প্রভাব বুঝতে অন্তত আগামী জুন-জুলাই মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত দুইমাস ধরে মূল্যস্ফীতি কমার ধারায় রয়েছে, তবে সেটি স্থিতিশীল কিনা তা বুঝতে আরও অপেক্ষা করতে হবে মন্তব্য করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, "বিশ্বের অনেক দেশেই একবার নীতি সুদহার বাড়ানোর পর সেটি কমানোর আগে অন্তত এক বছর সময় নেয়। আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার কমানো শুরু করার আগে এক বছরের বেশি সময় নিয়েছে। ফলে আমাদের মূল্যস্ফীতি টলারেবল স্টেটে আসার পরই নীতি সুদহার কমানোর চিন্তাভাবনা করতে হবে।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৬-৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণের কথা জানিয়েছেন।
নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি (ক্রেডিট গ্রোথ) আগের মুদ্রানীতির মতোই রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ২০২৫ অর্থছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে করা মানিটারি পলিসিতে বেসরকারি খাতের ক্রেডিট গ্রোথ প্রজেকশন বা অনুমান করা হয়েছিল ৯.৮ শতাংশ। তবে বাস্তবে গত ডিসেম্বর মাসে এটি ৭.২৪ শতাংশ–যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
আগামী ছয় মাসে লক্ষ্য অনুযায়ী বেসরকারি খাতের ক্রেডিট গ্রোথ অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো ইনভেস্টররাই নতুন ইনভেস্টমেন্টে যাচ্ছেন না। আগামী নির্বাচনের আগে এই পরিস্থিতি বদল হওয়ার সম্ভাবনাও কম। কারণ, বিনিয়োগকারী সাধারণত একটা দীর্ঘ সময় ধরে স্থিতিশীল পরিবেশের নিশ্চয়তা চান। সবমিলিয়ে ক্রেডিট গ্রোথ টার্গেট বাস্তবের সঙ্গে মিলছে না বলেই মনে হচ্ছে।"
নতুন মুদ্রানীতিতে এক্সচেঞ্জ রেট বা বিনিময় হার নিয়েও নতুন নির্দেশনা থাকার সম্ভাবনা কম বলে জানা গেছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোকে মৌখিক নির্দেশে ডলারের দাম ১২২ টাকা রাখার জন্য বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডলারের স্পট রেট এর মধ্যেই রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১২২.৫০ টাকা দরে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে।
![জানুয়ারি-জুন সময়ে নীতি সুদহার স্থির রাখতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)