ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৪:৫১:০২ পিএম

জানুয়ারিতে মৃতপ্রায় ব্যাংক সতেজ করার ফর্মুলা দেবে টাস্কফোর্স

২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১২:৪৯ পিএম

জানুয়ারিতে মৃতপ্রায় ব্যাংক সতেজ করার ফর্মুলা দেবে টাস্কফোর্স

ছবি: সংগ্রহীত

আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম আর্থিক খাত। ব্যাংক থেকে বিতরণ করা ঋণ যথাসময়ে ফেরত না আসা এবং বিদেশে পাচারের কারণে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক মারাত্মক সংকটে পড়েছে।

 

 

বর্তমানে এসব ব্যাংকের অনেকেই গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ঋণ বিতরণও প্রায় বন্ধ। মৃতপ্রায় এসব ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে জানুয়ারি মাসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোন ব্যাংকগুলো একীভূত (মার্জ) হবে কিংবা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিতরণ করা ঋণ পর্যায়ক্রমে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে এ সমস্যার প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পায়।

 


সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, এ হার ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ তদারকি জোরদার করেছে। এ লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা ব্যাংকের সম্পদের মান পরীক্ষা করছে। প্রথমে ১২টি এবং পরে ২০টি ব্যাংক পর্যালোচনায় আনা হবে। জানুয়ারি মাসেই দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র উদ্ঘাটিত হবে।

 

 

আওয়ামী লীগ আমলে নতুন শেয়ার হোল্ডারদের ঋণ প্রদান ও আমদানি চালানে অতিমূল্যায়নের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার ৬৭০ কোটি ডলার (প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা) বিদেশে পাচার হয়েছে। এর ফলে কমপক্ষে ১০টি ব্যাংক কার্যত দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক এবং বেসিক ব্যাংক উল্লেখযোগ্য।

 

 

এসব ব্যাংক নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে এবং গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতেও ব্যর্থ হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত নগদ সহায়তা দিয়ে এসব ব্যাংককে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।

 


সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘‘ব্যাংক খাতের সমস্যা স্বীকার করা এবং তা সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়াকে ইতিবাচক উদ্যোগ বলা যায়। তবে এটি একদিনে সমাধান সম্ভব নয়।’’

 

 

তিনি আরও বলেন, ‘‘খেলাপি ঋণ ইচ্ছাকৃত এবং অনিচ্ছাকৃত দুটো দিক বিবেচনায় এনে কার্যকর নীতিমালা তৈরি করতে হবে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে হবে।’’

 


অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ব্যাংক খাত সংস্কারে সুস্পষ্ট নীতিমালা এবং দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। ব্যাংক একীভূত করা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং নতুন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, ঋণ তদারকি এবং নতুন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব।

 

 

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ফেরাতে এবং স্থিতিশীলতা আনতে এ উদ্যোগকে আশাব্যঞ্জক মনে করা হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানুয়ারিতে মৃতপ্রায় ব্যাংক সতেজ করার ফর্মুলা দেবে টাস্কফোর্স