ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:৪০:৪৭ এএম

জানুয়ারির মধ্যে মূল্যস্ফীতি না কমলে সুদহার বাড়বে: গর্ভনর

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:৪০ এএম

জানুয়ারির মধ্যে মূল্যস্ফীতি না কমলে সুদহার বাড়বে:  গর্ভনর

ছবি: সংগ্রহ

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী জুনের মধ্যে দেশে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নেমে আসবে। দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হিসেবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান, এ লক্ষ্যে কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক তুলে দেওয়া হয়েছে।


গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শেরাটন হোটেলে ব্র্যাক ইপিএল ও এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্স আয়োজিত বিনিয়োগকারী সম্মেলনে এসব কথা বলেন গভর্নর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, ড. মাসরুর রিয়াজ, অধ্যাপক মোস্তাক হোসেন খান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন।

 

গভর্নর বলেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যা যা করার প্রয়োজন, তা ইতোমধ্যেই করা হয়েছে। পণ্য সরবরাহ সংকট, বিশেষত মৌলিক খাদ্যপণ্যের ঘাটতি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পথে বড় চ্যালেঞ্জ।” তিনি উল্লেখ করেন, বন্যা ও দীর্ঘ বর্ষাকালের কারণে পেঁয়াজ, আলু ও শীতকালীন শাকসবজি বাজারে আসতে দেরি হয়েছে। তবে আগামী দুই মাসের মধ্যে এই পণ্যগুলোর দাম স্থিতিশীল হবে বলে আশা করেন তিনি।


গভর্নর বলেন, “বর্তমানে নীতি সুদহার ১০ শতাংশ এবং ঋণের সুদহার ১৪ শতাংশের কাছাকাছি। জানুয়ারির মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি কমার প্রবণতা দেখা না গেলে, মুদ্রানীতি আরও কঠোর করা হবে। এর মানে নীতি সুদহার আরও বাড়বে এবং ঋণের সুদহারও বেড়ে যাবে।”


অতীতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক খাত থেকে অর্থ লুটপাটের কারণে সমস্যাগুলো সমাধান কঠিন বলে মন্তব্য করেন গভর্নর। তিনি জানান, ব্যাংক পুনরুদ্ধার আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যাংক অবসায়ন, একীভূতকরণ এবং নতুন মূলধন সংগ্রহে বাধ্য করার ক্ষমতা দেওয়া হবে।

 

এলসি বিল পরিশোধের বিষয়ে তিনি বলেন, “একটিও এলসি বিল অপরিশোধিত রাখা হবে না। ইতোমধ্যে ২৫০ কোটি ডলারের বকেয়া বিল ৩০ কোটি ডলারে নামানো হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটি শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে।”


বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ। ড. মনসুর বলেন, “আমরা ইউরোপীয় সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রোগ্রাম এবং বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা পাচ্ছি। মার্কিন ট্রেজারি ইতোমধ্যে দুইবার পরিদর্শন করেছে এবং জানুয়ারিতে তারা আবার আসবে।”


মূল প্রবন্ধে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বাজার পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। অধ্যাপক মোস্তাক হোসেন খান দুর্নীতির প্রধান কারণ হিসেবে সুশাসনের অভাবকে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, “বিগত সরকারের সময় ব্যবসায়িক ফোরামগুলো রাজনীতিকীকরণ হয়েছিল, যা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নষ্ট করেছে।”


ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন জানান, গত আগস্টের অভ্যুত্থানের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তিনি বলেন, “প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স আসছে। কিছু ব্যাংক সমস্যায় থাকলেও অধিকাংশ ব্যাংকের তারল্য সংকট নেই।”

 

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আশা প্রকাশ করেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং কঠোর নীতিমালার প্রয়োগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য স্থিতিশীল অবস্থায় রেখে যাওয়া সম্ভব হবে।

জানুয়ারির মধ্যে মূল্যস্ফীতি না কমলে সুদহার বাড়বে:  গর্ভনর