ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৮:৪১:৫৩ এএম

জার্মানির অর্থনৈতিক সংকট আরো গভীরে

১১ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:৩৯ এএম

জার্মানির অর্থনৈতিক সংকট আরো গভীরে

ছবি: সংগ্রহ

ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানি টানা দ্বিতীয় বছরের মতো সংকোচনের দিকে যাচ্ছে বলে এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে দেশটির সরকার। বলা হচ্ছে, কাঠামোগতভাবে শিল্পোৎপাদনে পতন ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকায় পর পর মন্দা পোহাতে হচ্ছে দেশটিকে। এখানে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করছে। তবে ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধির ধারা ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।


জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থমন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক এক বিবৃতিতে পূর্বাভাস সংশোধন করে জানান, দেশটির অর্থনীতি ২০২৪ সালে দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। এর আগে দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় বছর অর্থনীতি সংকোচনের পথে রয়েছে।


এ পূর্বাভাসের কারণে জি৭ অর্থনীতিতে জার্মানিকে ব্যতিক্রম ধরা হচ্ছে। জোটটির অন্য কোনো দেশ সংকোচনের আশঙ্কার মাঝে নেই। এর আগে ২০২৩ সালের জার্মানির অর্থনীতি দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল।

 

পূর্বাভাসে সুখবরও রয়েছে। এ অনুসারে, জার্মান অর্থনীতি আগামী বছর প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসবে। এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১ দশমিক ১ শতাংশ, যা আগের পূর্বাভাস ১ শতাংশ থেকে কিছুটা বেশি। ২০২৬ সাল নাগাদ অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ১ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছতে পারে। ব্যক্তিগত ভোগ বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীলতার মাধ্যমে এ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। তবে এ পূর্বাভাস সফল কাঠামোগত সংস্কার এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভরশীল।

 

রবার্ট হ্যাবেকের মতে, অর্থনীতির গতি ফেরাতে ৪৯টি পদক্ষেপের একটি প্যাকেজ বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর লক্ষ্য হলো বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং দীর্ঘস্থায়ী কাঠামোগত সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা। তার মতে, পরিকল্পনাটি সফলভাবে কার্যকর হলে ‘অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং আরো বেশি মানুষ শ্রমবাজারে ফিরে আসবে’।

 

এদিকে জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বলছে, এ পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন ও বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য আরো সংস্কার প্রয়োজন। সংস্থার প্রধান নির্বাহী মার্টিন ওয়ানসলেবেন বলেছেন, জার্মানিতে এর আগে একবার পরপর দুই বছর মন্দা দেখেছে। ২০০২ ও ২০০৩ সালে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় এ সমস্যায় পড়ে জার্মানি। বর্তমানে দেশটির জিডিপি কভিড-১৯ মহামারীর আগের স্তরের মাত্র দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে রয়েছে।

 

প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাসে সংশোধন করেছে জার্মানি। আশা করা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে এ বছর ২ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসবে, যা ২০২৬ সাল নাগাদ ১ দশমিক ৯ শতাংশে স্থিতিশীল হতে পারে। মূলত প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে ভোক্তা ব্যয়ের পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ চালক হিসেবে পতনশীল মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি প্রাধান্য পাচ্ছে মজুরি বৃদ্ধি ও কর প্রণোদনা।

 

এদিকে গবেষণা সংস্থা আইফো ইনস্টিটিউটের মতে, জার্মানির অর্থনৈতিক সংকটগুলোর ওপর চাহিদা, ভোক্তা ব্যয়ের মতো স্বল্পমেয়াদি চক্রাকার জটিলতা এবং কর্মীদের বয়স, সেকেলে ধাঁচের শিল্প বা নিয়ন্ত্রক সমস্যার মতো দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমস্যা প্রভাব ফেলছে। সংস্থার উপপরিচালক অধ্যাপক ড. টিমো ওলমারশাউসার বলেন, ‘যখন অন্য দেশগুলোর উত্থান হচ্ছে, তখন জার্মান অর্থনীতি আটকে আছে এবং মন্দার মধ্যে নিমজ্জিত।’

 

এদিকে ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স বা পিএমআই অনুসারে, গত সেপ্টেম্বরে জার্মানির সূচক ৪০ দশমিক ৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে, যা ছিল টানা সংকোচনের ২৭তম মাস। শিল্পোৎপাদনে এত খারাপ পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার গৃহযুদ্ধপীড়িত মিয়ানমারের পর আরো কোথাও দেখা যায়নি। এছাড়া সাম্প্রতিক দশকগুলোয় জার্মানিতে রফতানি ক্রয়াদেশের দীর্ঘস্থায়ী মন্দা নজিরবিহীন।

 

চীনের অভিঘাতকে অর্থনৈতিক পতনের মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরেন হামবুর্গ কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. সাইরাস দে লা রুবিয়া। তিনি জানান, স্বয়ংস্ক্রিয় প্রযুক্তি ও যান্ত্রিক প্রকৌশলের মতো খাতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে লড়াই করছে জার্মানি।

 

মন্দাজনিত চ্যালেঞ্জের মধ্যে জার্মান করপোরেট কোম্পানিগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে বিদেশী ক্রেতার দিকে ঝুঁকছে। সম্প্রতি দেশটির জাতীয় রেলওয়ে অপারেটর ডয়েচে বাহন সম্প্রতি নিজেদের লজিস্টিক সাবসিডিয়ারি শেনকারকে ডেনিশ কোম্পানি ডিএসভির কাছে ১ হাজার ৪০০ কোটি ইউরোয় বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে। বিদেশী অধিগ্রহণের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে উঠেছে জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম বেসরকারি ঋণদাতা কমার্জব্যাংক। এছাড়া কিছু জার্মান কোম্পানি তাদের বিনিয়োগ বিদেশে স্থানান্তর করছে।

জার্মানির অর্থনৈতিক সংকট আরো গভীরে