ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:১২:১৮ পিএম

জাহাজ চলাচল কমা সত্ত্বেও আয় বেড়েছে পানামা খালে

২৯ অক্টোবর, ২০২৪ | ৮:৩৯ এএম

জাহাজ চলাচল কমা সত্ত্বেও আয় বেড়েছে পানামা খালে

ছবি: সংগ্রহীত

কয়েক বছর ধরে পানামা খালের পুনরুজ্জীবন বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় সমস্যা হয়ে ঝুলে রয়েছে। কেননা বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানি-রফতানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এ সংক্ষিপ্ত রুট। বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টার মাঝে গত বছর পানামা খালের খরা পরিস্থিতি তীব্র রূপ ধারণ করে। এ অবস্থায় জাহাজ চলাচল কমা সত্ত্বেও গত সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া ২০২৪ অর্থবছরে পানামা খালের নিট আয় প্রায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৩৪৫ কোটি ডলার হয়েছে। পানামা খাল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

 


পানামা খালের ইতিহাসে এটি তৃতীয় শুষ্কতম বছর। পানির অভাবে ২০২৩ সালের শেষ থেকে চলতি বছরের প্রথম ভাগ পর্যন্ত এ রুটে প্রতিদিন জাহাজ চলাচলের অনুমতি কমাতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অপেক্ষাকৃত বড় পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছিল।

 

 


এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে বেশকিছু জাহাজের পণ্য সরবরাহে দীর্ঘ বিলম্বের সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে অনেক জাহাজ বিকল্প রুট খুঁজতেও বাধ্য হয়। পরে অবশ্য বৃষ্টি হওয়ায় ওই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়।

 

 

২০২৪ অর্থবছরে এ জলপথে পার হয়েছে ৪২ কোটি ৩০ লাখ টন কার্গো, অন্যদিকে দৈনিক গড়ে পার হয়েছে ২৭ দশমিক ৩টি জাহাজ। আগের অর্থবছরে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৬টি জাহাজ এ পথ পাড়ি দিয়েছে। তবে একই সময়ে পানামা খালের পরিচালন ব্যয় কমেছে ৫ শতাংশ, যা খরার আর্থিক প্রভাব কমাতে সাহায্য করেছে। একই সঙ্গে আয় ও নিট আয় বাড়িয়ে দিয়েছে।

 

 

পানামা খাল কর্তৃপক্ষের আর্থিক বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ভিয়াল সাংবাদিকদের জানান, আগের বছর থেকে আয় ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৯৯ কোটি ডলার হয়েছে। এছাড়া ট্রানজিট ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরছে।

 

 

গত অর্থবছরে খরা বেশি হওয়ায় পানামা খাতে ট্রানজিট ২০২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২১ শতাংশ কমে আসে। এ সময় ট্রানজিট করে ৯ হাজার ৯৯৪টি জাহাজ। যার মধ্যে ২ হাজার ৮৫৬টি ছিল নিও-পানামাক্স জাহাজ, এ বড় জাহাজগুলো শুধু সম্প্রসারিত পানামা খালের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। এ সময় মূল জলপথে ট্রানজিট কমেছে ২৯ শতাংশ।

 

 

পানামা খাল কর্তৃপক্ষের প্রশাসক রিকাউর্ট ভাস্কেজ জানান, পরিবেশগত উদ্যোগ ও আর্থিক কৌশল একই সঙ্গে সামনে রেখে কাজ করছেন তারা। এতে খালের স্থায়িত্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি ভবিষ্যতের বিনিয়োগ শক্তিশালী হবে।

 

 

তিনি আরো জানান, স্বাদু পানি ব্যবহারের ওপর সারচার্জ, উন্নত পানি ব্যবস্থাপনা ও উন্নত সংরক্ষণ ব্যবস্থার মতো কৌশল বাস্তবায়নের কারণে জাহাজ চলাচল কমলেও আয় বেড়েছে।

 

 

এদিকে ২০২৫ অর্থবছরে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ। এ অর্থবছরে পানামা খাল হয়ে ট্রানজিট করতে পারে ১২ হাজার ৫৮২টি জাহাজ। এ সময় ৫২ কোটি পণ্য পারাপার করবে এবং আয় ৫৬২ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

 

 

বর্তমানে পানামা খালের দৈনিক ৩৬টি প্যাসেজ স্লটের মধ্যে বেশির ভাগ পূর্ণ হচ্ছে না। তাই খাল কর্তৃপক্ষ কিছু জাহাজকে পুরনো এ রুটে ফিরে আসতে উৎসাহিত করছে, বিশেষ করে বাল্ক ক্যারিয়ার ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ট্যাংকারকে। সেই সঙ্গে আগামী সাত বছরে নতুন অবকাঠামোসহ ৮৫০ কোটি ডলার খরচে প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ।

 

 

চরম আবহাওয়ার সঙ্গে মোকাবেলার জন্য পানামা খাল কর্তৃপক্ষ দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে রিও ইন্ডিও নদীতে ১৬০ কোটি ডলারের একটি বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। এতে নতুন জলাধার তৈরি হলে খালের এলাকার আশপাশে বসবাসকারী শতশত পরিবারকে স্থানান্তর করা হতে পারে।

 

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানামা খালের সমস্যার সঙ্গে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ এর পানিপ্রবাহ মূলত বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খালে পানি সরবরাহ কমেছে। ২০২৩ সালে খরা ও এল নিনোর প্রভাবে ১১০ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় শুষ্কতম বছর দেখেছে পানামা খাল। ২০২৩ সালের অক্টোবর ছিল ওই অঞ্চলের জন্য সবচেয়ে শুষ্ক মাস, যখন স্বাভাবিকের চেয়ে ৪১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে আটলান্টিক-প্রশান্ত মহাসাগরীয় রুটের ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের কার্গো পরিবহন ব্যাহত হয়েছিল।

 

স্বাভাবিক সময়ে বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রায় ৫ শতাংশ সংক্ষিপ্ত এ রুট ধরে পরিচালিত হয়। মার্কিন কনটেইনারের ৪০ শতাংশই খালটি ব্যবহার করে।

 

জাহাজ চলাচল কমা সত্ত্বেও আয় বেড়েছে পানামা খালে