বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে নামবে, এমন পূর্বাভাস দিয়েছে মাস্টার কার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউট (এমইআই)। দেশের মূল্যস্ফীতি ও নীতি সুদহার নিয়েও পূর্বাভাস দিয়েছে এমইআই। তারা বলেছে, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৮ শতাংশে নেমে আসবে, যা বর্তমানে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এ ছাড়া নীতি সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৯ শতাংশে।

আরও পড়ুন

জিডিপিতে চীনকে ছাড়াবে বাংলাদেশ: আইএমএফ

সাময়িক হিসাবে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। একই সময়ে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরে এ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক। পণ্য রফতানি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। প্রবাসী আয় আসার হারও বাড়ছে। তবে দেশের লেনদেনের ভারসাম্য এখন দুর্বল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম, এটি বড় চ্যালেঞ্জ।

রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার আয়োজিত ‘গ্লোবাল অ্যান্ড বাংলাদেশ আউটলুক অ্যান্ড রিস্ক’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এমইআইয়ের পূর্বাভাস প্রকাশ করা হয়। তা তুলে ধরেন এমইআইয়ের এশিয়া প্যাসিফিক, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভিড ম্যান। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন মাস্টার কার্ডের এ দেশীয় ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।

এমইআই বলেছে, চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি গত বছরের মতোই থাকবে। অভ্যন্তরীণ ভোক্তা চাহিদা তুলনামূলক কম থাকলেও পণ্য রফতানি শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ডেভিড ম্যান বলেন, চলতি অর্থবছরে এ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক। পণ্য রফতানি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। প্রবাসী আয় আসার হারও বাড়ছে। তবে দেশের লেনদেনের ভারসাম্য এখন দুর্বল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম, এটি বড় চ্যালেঞ্জ।

দেশের মানুষের মধ্যে ক্যাশলেস তথা নগদবিহীন ডিজিটাল লেনদেন বাড়ছে। এমইআইয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের মার্চের তুলনায় চলতি বছরের মার্চে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিত্যপণ্যে ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, গাড়ির তেলে ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং কাপড় ও জুয়েলারি পণ্য কেনায় কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। তবে মুদি, বিমানের টিকেট ও হোটেল ভাড়া, ঘরের সামগ্রী এবং খাওয়া-দাওয়ায় কার্ডের ব্যবহার কমেছে।

অন্যদিকে বিত্তশালীদের মধ্যে গাড়ির তেল কেনায় বাড়লেও নিত্যপণ্য, মুদি, খাওয়া-দাওয়া, কাপড় ও জুয়েলারি, বিমানের টিকেট এবং হোটেল ভাড়ায় কার্ডের ব্যবসা কমেছে।

বিত্তশালীদের নিত্যপণ্য কেনায় কার্ডের ব্যবহার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ, মুদি পণ্যে পৌনে ৪ শতাংশ, বিমানের টিকেট ক্রয় ও হোটেল ভাড়ায় ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ, খাওয়া-দাওয়ায় ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং পোশাক ও জুয়েলারি পণ্য কেনায় ৯ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মূলত তিনটি কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে। প্রথমত, সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা। দ্বিতীয়ত, শক্তিশালী মুদ্রানীতি। তৃতীয়ত, অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধার।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উর রহমান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক এমডি আরফান আলী প্রমুখ।