ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:৫৪:০৪ পিএম

জ্বালানি সংকটে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত, তবে নতুন কেন্দ্র উৎপাদনে যাচ্ছে

৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:২১ এএম

জ্বালানি সংকটে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত, তবে নতুন কেন্দ্র উৎপাদনে যাচ্ছে

ছবি: সংগ্রহ

দেশে জ্বালানি সংকটের কারণে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদন বজায় রাখতে পারছে না। একই সময়ে, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মিত আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির ১,৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন শুরু হতে যাচ্ছে ডিসেম্বরে, তবে এর প্রথম ইউনিট (৬৬০ মেগাওয়াট) আগামী মার্চে চালু হবে।

 

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্তমান পরিস্থিতি

 

দেশে বর্তমানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন সক্ষমতা ৫,৯৯২ মেগাওয়াট। পটুয়াখালীর নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে এই সক্ষমতা ৭,৩১২ মেগাওয়াটে পৌঁছাবে। তবে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই এখন জ্বালানি সংকটে বন্ধ রয়েছে।

  • মাতারবাড়ী ১,২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্র,
  • বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ারের ৩০৭ মেগাওয়াট কেন্দ্র, এবং
  • রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনো পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করছে না।

 

এছাড়া, ভারত থেকে আদানির একক ইউনিট থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

 

নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তুতি

 

আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল) যৌথভাবে নির্মিত এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য ইতিমধ্যে ১,২৮,০০০ টন কয়লা মজুদ করা হয়েছে। তবে, বিপিডিবি এবং বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরই এটি জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হবে। দৈনিক ১২,০০০ টন কয়লা প্রয়োজন হবে এই কেন্দ্রটির উৎপাদন চালানোর জন্য। তবে, ব্যাকফিড পাওয়ার না পাওয়া পর্যন্ত উৎপাদন শুরু করা সম্ভব নয়।

 

জ্বালানি সংকটের কারণ

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সংকটের প্রধান কারণ হলো, জ্বালানি আমদানির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য এসব আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কেন্দ্রগুলো অনুমোদন করা হলেও, প্রয়োজনীয় কয়লার যোগান এবং অর্থের সরবরাহ সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা হয়নি। ফলে, এসব কেন্দ্র এখন চালানো যাচ্ছে না এবং দেশ ব্যাপক লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছে।

 

ভবিষ্যত পরিকল্পনা

 

এদিকে, আরএনপিএল জানিয়েছে যে, তাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হবে। তবে, বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবে কেন্দ্রটির উৎপাদন শুরু হতে চার মাসের দেরি হয়েছে।

 

আরএনপিএল সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য সংস্থাটি ১ থেকে ৮ নভেম্বর পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইনের শাটডাউন চেয়েছিল। কিন্তু সঞ্চালন লাইনটি এখন পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎ সঞ্চালনে নিয়োজিত রয়েছে। এ অবস্থায় তা বন্ধ করে আরএনপিএলের বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্রিডে সংযুক্ত করার সুযোগ নেই বলে জানায় বিপিডিবি। এ বিষয়ে সংস্থাটির বক্তব্য হলো পায়রার বিদ্যুৎ বন্ধ হলে সারা দেশে ব্যাপকহারে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

 

সংকটের সমাধান

 

বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিপিডিবি জানিয়েছে, পায়রার বিদ্যুৎ সঞ্চালন স্থগিত রাখতে গেলে দেশে লোডশেডিং আরও বাড়বে। তাই, নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন শুরুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় লাগবে।

 

সর্বশেষ, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে, তবে জ্বালানি সংকটের সমাধান না হলে পুরো খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

জ্বালানি সংকটে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত, তবে নতুন কেন্দ্র উৎপাদনে যাচ্ছে