ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৮:০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
টিসিবির ১২ হাজার কোটি টাকার সঠিক ব্যবহার করা হবে
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৮:০ পিএম
![টিসিবির ১২ হাজার কোটি টাকার সঠিক ব্যবহার করা হবে](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/12/11/20241211144930_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে ভোগ্যপণ্য দেওয়া হয়। এ জন্য বছরে টিসিবি ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। এর মধ্যে সরকার ভর্তুকিই দেয় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। অথচ এত টাকা ব্যয় করা হয় যাদের জন্য, সেই স্বল্প আয়ের মানুষরা এতদিন তার সুফল পাননি। বর্তমান সরকার টিসিবির ওই ১২ হাজার কোটি টাকার সঠিক ব্যবহার যাতে করা যায় সে চেষ্টা করবে। দেশের প্রকৃত স্বল্প আয়ের মানুষ যাতে টিসিবির পণ্য পায় আমরা সে ব্যবস্থা করব।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, ইআরএফ আয়োজিত ‘ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ প্রেসিডেন্ট রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
সেখ বশির উদ্দিন বলেন, টিসিবি সারা দেশে যে কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যপণ্য বিতরণ করে, সেটি তাত্ত্বিকভাবে সুন্দর একটি প্রকল্প। তবে বিগত সরকারের সময়ে এই কার্ড বিতরণ এবং ডিলার নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। বর্তমান সরকার এসব অনিয়মকে চিহ্নিত করতে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে যেভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, টিসিবির জন্য বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেট রয়েছে। টিসিবিকে সরকার সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা শুনে অবাক হবেন, সারা দেশে টিসিবির ১৬টি অফিস রয়েছে; যাতে ড্রাইভার-দারোয়ানসহ সব মিলিয়ে ১৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এই জনবল ও কার্যক্রমের জন্য ১১ হাজার কোটি টাকার বাজেট থাকার বিষয়টি হাস্যকর।’
সেখ বশির উদ্দিন জানান, ইতিমধ্যে এক কোটি পরিবারের কার্ডের মধ্যে ৫৬ থেকে ৫৭ লাখ কার্ডধারীকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বাকি কার্ডগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুরোনো কার্ডের পরিবর্তে নতুন স্মার্ট কার্ড আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেশের বেশ কয়েকটি গ্রামে ব্যক্তিগতভাবে দেখতে যাব, কারা এসব কার্ড গ্রহণ করছেন এবং কারা বিতরণ করছেন। আশা করছি চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে কার্ড বিতরণে একটা স্থিতি আনতে পারব। রাষ্ট্রীয় অর্থ যেন ইনসাফের সঙ্গে ব্যয় হয়, সেটি নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য।’
এক দিন আগে সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে ৮ টাকা বাড়ানোর ব্যাখ্যায় সেখ বশির উদ্দিন বলেন, সিন্ডিকেট বলতে যা হচ্ছে তা চিনি হোক, চাল হোক, পেঁয়াজ হোক তা মুষ্টিমেয় কয়েকজন উৎপাদক, সরবরাহকারী নিয়ন্ত্রণ করেন।
এস আলম গ্রুপের দিকে তিনি ইঙ্গিত করে বলেন, এর মধ্যে তেলের সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেট পালিয়ে গেছে, তাই আপনারা প্রভাবটা সেভাবে টের পাচ্ছেন না। তিনি বাজারের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন, আট-দশটা ব্যাংকও তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ায় যে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব কিন্তু আপনারা (ভোক্তা) টের পাচ্ছেন না। আমাদের চেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে। দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় সরবরাহকারী চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো হাতছাড়া হওয়ায় গ্রুপটির ভোগ্যপণ্য ব্যবসাও থমকে আছে। সেদিকে ইঙ্গিত করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ১৫ বছরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুকুরচুরির মধ্য দিয়ে বিপুল অর্থ দেশের বাইরে পাচার হয়েছে।
বিগত সরকারের সময়ে ‘সাগরচুরি’ করতে গিয়ে সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এর হাত থেকে কিছুই বাদ রাখা হয়নি। প্রতিটি জায়গায় গুটিকয় মানুষের একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করা হয়েছিল। কৃষিতে গর্ব করার মতো আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ফলে এখন কৃষি বা অন্যান্য খাতের তথ্যে অসামঞ্জস্যতার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা হয়।
সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘ইতিমধ্যে অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এটি দেড় বছরের জাতীয় আয়কে একত্র করলে তার সমান হয়। গুটিকয় মানুষ অর্থ চুরি করে নিয়ে গেছেন। এটি অবশ্যই নাগরিক হিসেবে আমাদের জন্য অসম্ভব চিন্তার বিষয়।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘তেল বা চিনির বাজারে মুষ্টিমেয় কয়েকজন স্থানীয় আমদানিকারক রয়েছেন। এর মধ্যে একজন সর্ববৃহৎ লোক দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, যিনি বাজারের একটা বৃহৎ অংশ এবং আট-দশটা ব্যাংকও নিজে ম্যানেজ করতেন। এই যে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ফলে একটা সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়েছে, ওই তুলনায় কিন্তু আপনারা বাজারে রিঅ্যাকশন টের পাচ্ছেন না।’
বর্তমান বাস্তবতা মেনে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী রমজানে খেজুর, ছোলা, তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল থেকে নিম্নগামী থাকবে বলে আশা করছি। আলুর ক্ষেত্রে আমাদের একটু ব্যর্থতা আছে। তবে আগামী বছর যেন এমন পরিস্থিতি না হয় সে জন্য বর্তমান থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি।’
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের চেয়ে আয়তনে ছোট নেদারল্যান্ডস প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার এবং পার্শ্ববর্তী থাইল্যান্ড ৩৬ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। সেখানে আমাদের কৃষিপণ্যের মাত্র ১ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত হয়। কেন আমরা পিছিয়ে, সেসব বিষয় নিয়ে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘পণ্যের দাম কমাতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই সরকারের মতো ট্রান্সপারেন্ট (স্বচ্ছ) সরকার আগে কখনো ছিল না। পূর্ববর্তী সরকার উন্নয়নের গল্প করতে গিয়ে বাজারে ভুল তথ্য ছড়িয়ে গেছে।’
![টিসিবির ১২ হাজার কোটি টাকার সঠিক ব্যবহার করা হবে](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)