ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১২:৫২:৩৮ পিএম

ট্রাম্পের ডিক্রিতে প্রশস্ত হলো মুসলিম নিষেধাজ্ঞা

২৭ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৭:০ পিএম

ট্রাম্পের ডিক্রিতে প্রশস্ত হলো মুসলিম নিষেধাজ্ঞা

ছবি: সংগ্রহ

অভিবাসন নিয়ে একটি ডিক্রি তথা নির্বাহী আদেশে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নতুন আদেশটির আওতায়, ভিসা সংক্রান্ত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান ও ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের অপসারণের আওতা সম্প্রসারিত হবে। এর মধ্যে দিয়ে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

গত সোমবার এই নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়, এর আওতায় ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে যারা সোচ্চার- বিদেশি এমন শিক্ষার্থীরাও পড়বে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থী বিদেশি নাগরিক হলে, তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে পারবে সরকার। আর যেহেতু, মুসলমানদের মধ্যে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন বেশি তাই পক্ষান্তরে এটি ‘মুসলিম ব্যান’ এর রাস্তাই প্রশস্ত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। খবর আলজাজিরার।

 

ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্টের (আইআরএপি) আইনজীবী দীপা আলগেসান বলেন, ২০১৭ সালে প্রথম মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের সময় ট্রাম্প বেশকিছু মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞাটি আরও বৈষম্যমূলক এবং আগের চেয়েও খারাপ। এর আওতাও অনেক বড়।

 

তিনি বলেন, সবচেয়ে খারাপ অংশটি হলো-শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিদের ওপরই তা কার্যকর হবে না, বরং একই যুক্তি দেখিয়ে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা ব্যক্তিদেরও বের করে দেওয়া যাবে। ট্রাম্প সোমবার উল্লিখিত নির্বাহী আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার, গোয়েন্দা ও স্বরাষ্ট্রবিষয়ক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ৬০ দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। যেসব দেশের যাচাই-বাছাই ও তল্লাশি করার প্রক্রিয়া ‘ত্রুটিপূর্ণ’, সেসব দেশ এই সময়ের মধ্যে চিহ্নিত করতে হবে। ওইসব দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর আংশিক বা সম্পূর্ণ স্থগিতাদেশ জারি করার জন্য এই প্রক্রিয়া চালানো হবে।

 

আরব বংশোদ্ভূতদের প্রতি বৈষম্যবিরোধী সংগঠন আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটি (এডিসি) বলেছে, ২০১৭ সালের নিষেধাজ্ঞাটিকে ন্যায্যতা দিতে যে আইন ও বিধি অনুসরণ করা হয়েছিল, সেগুলোর ওপর নির্ভর করে নতুন আদেশটি দেওয়া হয়েছে। এর আওতায়, ভিসা সংক্রান্ত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান ও ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের অপসারণের সুযোগ আরও বিস্তৃত হবে।

 

নতুন আদেশে বলা হয়েছে, যেসব মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠাকালীন নীতির প্রতি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করবে, তাদের ভিসা বা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হবে। ‘প্রটেক্টিং দ্য ইউনাইটেড স্টেটস ফ্রম ফরেন টেরোরিস্টস আন্ড আদার ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড পাবলিক সেফটি থ্রেটস’ শীর্ষক এই ডিক্রিকে ‘ভীতিকর’ বলে উল্লেখ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। দীপা আলগেসান বলেন, অভিবাসী পরিবারগুলোকে এটি ২০১৭ সালের নিষেধাজ্ঞার চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ২০১৭ সালের ওই নিষেধাজ্ঞা ‘মুসলিম ব্যান’ নামে কুখ্যাত হয়েছিল।

 

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের ডিক্রির ভাষায় যেভাবে অস্পষ্টতা রয়েছে সেটা সবচেয়ে ‘আতঙ্কজনক’। ট্রাম্প প্রশাসন যেসব ব্যক্তিকে টার্গেট করতে চায়, সরকারি সংস্থাগুলোকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলারই যেন ঢালাও নির্দেশ এটি।

 

আরব বংশোদ্ভূতদের প্রতি বৈষম্যবিরোধী সংগঠন আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটি (এডিসি) বলেছে, আদর্শিক পার্থক্যের যুক্তিতে এটি বৃহৎ পরিসরে বৈষম্যের সুযোগ দেবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে। যা ২০১৭ সালের ‘মুসলিম ব্যান’ এর চেয়েও বড় হতে চলেছে। মতাদর্শ বা সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণ উল্লেখ করে অনেকের ভিসা আবেদন যেমন প্রত্যাখ্যান করা হবে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রে যারা অবস্থান করছেন, তাদেরকেও বহিষ্কার করা হবে।

 

সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, সম্পূর্ণ কমিউনিটিগুলোকে এভাবে চিহ্নিত করা ও কলঙ্কিত করার প্রচেষ্টা বন্ধ করতে এডিসি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, কেননা এটি শুধু বিভেদই বাড়াবে। এডিসি আরও বলে, আমেরিকা বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দেয়-এই মূল্যবোধকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও দীর্ঘদিন ধরে উল্লেখ করেছেন কিন্তু তার নির্বাহী আদেশটি এর সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

 

২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনি প্রচারের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত দেশের মানুষের ওপর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন তিনি। তিনি আরও বলেছেন, সাম্যবাদী, মার্ক্সবাদী ও সমাজতান্ত্রিকরা যেন যুক্তরাষ্ট্রে না ঢুকতে পারে, তা নিশ্চিত করতে তিনি উদ্যোগ নেবেন।

ট্রাম্পের ডিক্রিতে প্রশস্ত হলো মুসলিম নিষেধাজ্ঞা