ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৯:১২ এএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. ইউনূসকে সর্বাত্মক সমর্থন দেবেন বাইডেন
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৯:১২ এএম
![ড. ইউনূসকে সর্বাত্মক সমর্থন দেবেন বাইডেন](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/09/25/20240925091140_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে তাদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনের কূটনীতিকদের মতে, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন বৈঠক বিরল! আর বাংলাদেশের জন্য এটা ছিল অনেকটা স্বপ্নের মতো। সেটা সম্ভব হয়েছে কেবল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য। পুরো বিশ্ব সেই বিরল ঘটনাই প্রত্যক্ষ করল।
বৈঠকে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের আমলে সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা ও বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে জানান ড. ইউনূস। এ সময় ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, দেশ পুনর্গঠনে তাঁর সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে। তখন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে কোনো সাহায্যে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি দেশের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাহলে তাদেরও (যুক্তরাষ্ট্র সরকার) পূর্ণ সহযোগিতা করা উচিত।
পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ড. ইউনূসের এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক বাংলাদেশের জন্য বিরল সুযোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে এ ধরনের বৈঠক বিরল ঘটনা।
শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশ যে মুহূর্তে গণতন্ত্র উত্তরণের পথে রয়েছে তখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থেকে সহযোগিতা করছে এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ নতুন বাংলাদেশ গঠনে তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ কর ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৮ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। ৫ শতাংশ না হলেও অন্তত ভিয়েতনামের (৭ শতাংশ) সমান দাবি করেছে বাংলাদেশ। বৈঠক সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টায় গ্রাউন্ড হায়াত হোটেলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতন ও পলায়নের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টার এটাই প্রথম বিদেশ সফর।
স্থানীয় সময় ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। তাঁর বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ়প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়গুলো তাঁর বক্তব্যে স্থান পাবে।
তা ছাড়া ড. ইউনূস ডাচ প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএসএইডের প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এছাড়া কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে। এ ছাড়া চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি অধ্যাপক শওকত আলী বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি হারিয়েছি। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন ৬০ শতাংশ তৈরি পোশাক ভারত থেকে আমদানি করে। ভিয়েতনাম যেখানে ৭ শতাংশ শুল্কে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে আমাদের সেখানে দিতে হয় ১৮ শতাংশ! এটা চরম বৈষম্য। আমরা আশা করব বাইডেন-ইউনূসের বৈঠকে জিএসপি ফেরত এবং তৈরি পোশাক রপ্তানি ফিরে পাওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে।’ প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশন ঘিরে বিশ্বনেতাদের নজর থাকবে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকটি সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্থানীয় সময় গত সোমবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালে অবতরণ করে। সেখান থেকে মোটরশোভাযাত্রা সহকারে তাকে ম্যানহাটনের অভিজাত একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত জানাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। অন্যদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র আগমনের প্রতিবাদে জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টের ৮ নম্বর টার্মিনালে পৃথক স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন। সামান্য দূরত্বে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পরস্পরবিরোধী কর্মসূচি পালিত হলেও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।
- ট্যাগ সমূহঃ
- সমর্থন
![ড. ইউনূসকে সর্বাত্মক সমর্থন দেবেন বাইডেন](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)