ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:২১:৫৯ পিএম

ডলারের বাজার ফের অস্থির, অনিশ্চয়তা-উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা

৮ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৫৫ এএম

ডলারের বাজার ফের অস্থির, অনিশ্চয়তা-উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা

ছবি: সংগ্রহ

গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশে মার্কিন ডলারের দর অস্থিরভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ২০২২ সালের মার্চ থেকে এই বৃদ্ধি তীব্রতর হয়েছে, যার ফলে দেশীয় অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও রপ্তানি খাতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নতুন নির্দেশনা জারি করেছে, যার ফলে আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে ডলারের দাম নির্ধারণের একটি নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হতে যাচ্ছে।

 


২০২২ সালের ৩০ মার্চ ডলারের অফিসিয়াল দাম ছিল ৮৬.২০ টাকা, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৩ টাকায়। অর্থাৎ, গত ৩৩ মাসে ডলারের মূল্য ৪২.৬৯ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমেই বাড়ছে এবং এতে ডলারের চাহিদা আরও বাড়ছে। এই পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ আমদানিনির্ভর পণ্যের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার প্রভাব স্থানীয় বাজারে দাম বৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

 


বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে ডলারের দাম ১২৩ টাকার বেশি হবে না এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের জন্যও একই দাম প্রযোজ্য হবে। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে, এবং যারা এর ব্যত্যয় ঘটাবে তাদের জরিমানা করা হবে। তবে, ব্যাংকগুলো গোপনে সরকারি দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনছে, এমন অভিযোগ রয়েছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকে দৈনিক দুইবার ডলারের দাম নির্ধারণ করবে এবং বাজারের ওপর ওঠানামাকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১২ জানুয়ারি থেকে এই প্রক্রিয়া কার্যকর হবে। এর মধ্যে, ৫ জানুয়ারি থেকে ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিন দুইবার ডলারের কেনাবেচার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠানোর শর্ত দেওয়া হয়েছে।

 


ডলারের অস্থিরতা শুধু রপ্তানির জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে না, আমদানিনির্ভর পণ্যগুলোও এর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের আমদানির খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে স্থানীয় উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পে সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু শর্ত আরোপ করেছিল, কিন্তু সেই শর্ত শিথিল করার পর আবারও ডলারের খরচ বাড়ছে।

 


ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক গোপনে সরকারি দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনছে, এবং সেগুলো বিক্রি করছে অনেক বেশি দামে। এ কারণে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে জরিমানা করে এবং ৭টি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। এই ধরনের কারসাজি বাজারের স্বাভাবিক প্রবাহকে ব্যাহত করছে এবং ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়িয়ে তুলছে খরচ ও অস্থিরতা।

 


বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, "কিছু ব্যাংক সম্প্রতি ডলার বাজার নিয়ে গেম খেলছিল, যার কারণে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। আমরা ব্যাংকগুলোকে সাবধান করেছি, এবং এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে।"

 


এদিকে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডলার বাজারে আরও অস্থিরতা তৈরি হলে এর সরাসরি প্রভাব পড়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর ওপর। বিশেষ করে আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হতে পারে। ব্যবসায়ীরা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, "ডলারের দামের আরও ওঠানামা হলে স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হয়ে পড়বে, এবং অধিকাংশ উদ্যোক্তা বাধাগ্রস্ত হবে।"

 


ডলারের অস্থিরতা বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে অস্থিরতা সামলাতে এবং ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে সরকারের পদক্ষেপ অবশ্যই প্রয়োজন, তবে পর্যাপ্ত কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে এর প্রভাব আরও ব্যাপক হতে পারে।

ডলারের বাজার ফের অস্থির, অনিশ্চয়তা-উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা