ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ২:১০:২৭ পিএম

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন জরুরি

১০ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:৩৪ এএম

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন জরুরি

ছবি: সংগ্রহ

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিসিআই) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন, যথাযথ বাস্তবায়ন, কৌশলগত বিনিয়োগ, সরকারি-বেসরকারিখাতসহ সব অংশীদারের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা জরুরি।

 

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।

 

প্রধান অতিথির লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে, সঠিক পরিসংখ্যান ছাড়া কখনোই যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ, রপ্তানি পরিসংখ্যানসহ অন্যান্য তথ্যে বেশ অসংগতি ছিল, যা নিরসনে বর্তমান সরকার বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

 

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, যার কার্যক্রম অব্যাহত আছে, যেখানে দেশের সব স্তরের নাগরিকদের পাশাপাশি বিশেষ করে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা নিজেদের প্রত্যাশার প্রস্তাব পেশ করতে পারে, যার ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম আরও জোরালো হবে বলে তিনি আশা করেন।

 

অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা, সফটওয়্যার, যন্ত্রপাতিসহ তথ্যপ্রযুক্তির বৈশ্বিক বাজার প্রায় তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, তবে বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৃহত্তম জনগোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও আমাদের আয় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। তিনি এ খাতে কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চতর মূল্য সংযোজন পরিষেবা প্রদানের দিকে মনোনিবেশ করাসহ সেমিকন্ডাক্টর ভ্যালুচেইনে উৎপাদন ক্ষমতা সম্প্রসারিত করার আহ্বান জানান। এছাড়া পণ্যের ডিজাইন, অ্যাসেম্বলি প্যাকেজিং ও টেস্টিং (এপিটি) প্রভৃতি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং এক্ষেত্রে উদীয়মান আইওটি বাজারের জন্য ইন্টিগ্রেটেড ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের (আইডিএম) সুযোগগুলো অনুসরণ করার পরামর্শ দেন তিনি।

 

বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের পর তথ্য-প্রযুক্তি খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়, যেখানে বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের পাশপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়াগ সম্প্রসারণ সম্ভব। দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের অনুমতি প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণের লক্ষ্যে বিডার পক্ষ থেকে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

 

বন্ডস্টেইন টেকনোলোজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর শাহরুখ ইসলাম সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, বাংলাদেশে দুই হাজার ৬০০টির বেশি আইটি কোম্পানি কাজ করছে, যা তিন লাখ ৫০ হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে এবং এ খাতের বাজারের আকার ২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে ৪৫০টি বাংলাদেশি কোম্পানি তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছে।

 

এ খাতের বিকাশে পণ্যের মেধাস্বত্ব অধিকারের সুরক্ষা অতীব জরুরি। সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) মোহাম্মদ জাকির হাসান, বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান এবং ওয়ালটন ডিজি টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী অংশগ্রহণ করেন।

 

 

তাইমুর রহমান বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য। বিশেষ করে তিনি টেলিকম অ্যাক্টের সংস্কারের প্রস্তাব করেন। লিয়াকত আলী বলেন, প্রতিযোগিতামূলক নীতির অভাবে আমরা দেশে এফডিআই আকৃষ্ট করতে পারছি না। তিনি আইটি ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য শুল্ক ও কর কাঠামো সংস্কারেরও অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন, সেমিকন্ডাক্টর সেক্টরে বাংলাদেশের ভালো ডিজাইনের হাউস রয়েছে, তাই সরকারি ও বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগ বাংলাদেশে হার্ডওয়্যার উৎপাদনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে।

 

ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করেন, যেখানে আলোচকরা অপ্রতুল অবকাঠমো, প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার অভাব, ঋণ প্রাপ্তিতে জটিলতা, দক্ষ জনবলের সংকট এবং সহায়ক কর ও শুল্ক কাঠমোর অনুপস্থিতির কারণে দেশে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে কাক্সিক্ষত বিকাশ পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে মত প্রকাশ করেন।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন জরুরি