ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২:৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
তারল্য সংকটে দেশের ব্যাংকিং খাত: খেলাপি ঋণ ও আস্থার অভাবে বেড়েছে চাপ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২:৩ পিএম
![তারল্য সংকটে দেশের ব্যাংকিং খাত: খেলাপি ঋণ ও আস্থার অভাবে বেড়েছে চাপ](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/11/27/20241127120323_original.gif)
ছবি: সংগ্রহীত
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে তারল্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ব্যাংকগুলোর দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা থেকে শুরু করে নতুন ঋণ বিতরণ, এমনকি আমানতকারীদের চাহিদা পূরণেও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। এই সংকটের পেছনে রয়েছে কয়েকটি প্রধান কারণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ, যা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে এই সংকট আরও তীব্র। উদাহরণস্বরূপ, এস আলম গ্রুপ গত ছয় বছরে ছয়টি ব্যাংক থেকে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার ৭৯ শতাংশই ইসলামী ব্যাংক দিয়েছে। খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ বিতরণে অক্ষম হয়ে পড়ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবস্থাও খুবই নাজুক। বেক্সিমকো গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির মূলধনের তুলনায় প্রায় ৯৫০ শতাংশ বেশি। এ ধরনের ঋণ পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম, যা ব্যাংকিং খাতের আর্থিক ভারসাম্যকে আরও দুর্বল করে তুলছে।
ব্যাংকিং খাতের আর্থিক কেলেঙ্কারি এবং অনিয়মের ফলে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমে গেছে। এই আস্থাহীনতা ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। গ্রাহকরা তাদের সঞ্চয় ব্যাংকে রাখার পরিবর্তে বিকল্প পথে সংরক্ষণ করছেন, যা তারল্য সংকটকে আরও গভীর করে তুলছে।
এই অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে আমানতের সুদের হার বাড়াতে বাধ্য করা হয়েছে। কিছু ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। তবে উচ্চ সুদের হারও এখনো আমানতকারীদের আগ্রহ ফেরাতে পারেনি।
ব্যাংকগুলো তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালানোর জন্য অন্তঃব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই ঋণের সুদহার গত নভেম্বর মাসে ১৩.৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এমনকি এক দিনের ঋণের (ওভারনাইট লোন) গড় সুদহারও ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ গ্রহণ করতে গিয়ে আরও বেশি চাপে পড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ধারাবাহিকভাবে সুদহার বাড়াচ্ছে। সর্বশেষ অক্টোবরে সুদহার ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। তবে এর ফলে ঋণের চাহিদা কমে গেছে এবং ব্যাংকগুলো তারল্যের ঘাটতিতে ভুগছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার নীতিমালাও কঠোর করা হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলো সপ্তাহে মাত্র একবার ঋণ নিতে পারে, যা আগে সপ্তাহে দুইবার নেওয়ার সুযোগ ছিল।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক ব্যক্তি তাদের অর্থ বিদেশে পাচার করছেন বা নিরাপদ মনে করে দেশে ব্যাংকে জমা রাখছেন না। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে অনেক ঋণ অনাদায়ী থেকে গেছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এ ধরনের কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের ব্যাংক হিসাব তদন্ত করা হচ্ছে। এতে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে তাদের অর্থ ব্যাংকের বাইরে রাখছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্যাংকিং খাতের এই সংকট সমাধানে কয়েকটি প্রধান উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রথমত, খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যাংক ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক এবং নিরাপদ করতে হবে।
এর পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা বাড়ানো এবং অন্তঃব্যাংক ঋণ সহজলভ্য করা অত্যন্ত জরুরি।
- ট্যাগ সমূহঃ
- তারল্য সংকট
- ব্যাংকিং খাত
- চাপ
![তারল্য সংকটে দেশের ব্যাংকিং খাত: খেলাপি ঋণ ও আস্থার অভাবে বেড়েছে চাপ](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)