ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:৩২ এএম
অনলাইন সংস্করণ
তিতাস গ্যাসে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ছে
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:৩২ এএম
![তিতাস গ্যাসে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ছে](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/11/26/20241126101328_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তিতাসের দেওয়া তথ্যমতে, ১৩ হাজার ৩৯১ দশমিক ৩২ কিমি পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রায় ২৯ লাখ গ্রাহককে গ্যাস সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এই কোম্পানির গ্রাহক সংক্রান্ত অধিকাংশ বিষয় সমাধানের জন্য বোর্ড এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্ভর হওয়ায় গ্রাহক হয়রানি সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অফিস করতে হয় তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১০০ গ্রাহক তাদের সমস্যা সমাধানে এমডির সাক্ষাৎপ্রার্থী থাকেন। এ অবস্থা চলছে দিনের পর দিন। পেট্রেবাংলাসহ কোম্পানির একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মনে করেন, তিতাসকে সুনির্দিষ্টভাবে অন্তত তিন ভাগে ভাগ করে সব কাজের দায়িত্বও হস্তান্তর করা জরুরি। তা না হলে গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার একজন পরিচালক বলেন, ২০২০ সালে গ্রাহকসেবা আরও নিশ্চিতে তিতাসে তিনটি আলাদা আলাদা কোম্পানি গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হলেও সেটি আর হয়নি। পরে নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে তিন ডিএমডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে আবাসিক গ্রাহকের সমস্যা সমাধানের এখতিয়ার তাদের নেই।
তিনি জানান, তিতাসের কার্যক্রম আগের চেয়ে বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হবে। এ জন্য আলাদা আলাদা তিনটি কোম্পানি না করলেও তিনটি জোনে বিভক্ত করা উচিত। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জোনকে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া উচিত।
বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ এলাকাজুড়ে তিতাস গ্যাসের কার্যক্রম বিস্তৃত। মুন্সীগঞ্জ থেকে শেরপুর, অন্যদিকে ভৈরব থেকে কেরানীগঞ্জ- বিশাল এলাকাজুড়ে এ কার্যক্রম। সীমিত লোকবলসহ নানা সংকটে প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে তিতাসের আওতায় থাকা এলাকায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগ এখন তিতাসের মাথাব্যথার কারণ। গত এক যুগ ধরে নিয়মিত অভিযান চালালেও কার্যত অবৈধ সংযোগ কমেনি।
চলতি বছরের এপ্রিলে পেট্রোবাংলা থেকে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় জ্বালানি বিভাগে। উদ্দেশ্য ছিল সিস্টেম লস কমানো, গ্যাসের চুরি ও অপচয় ঠেকানো এবং সরবরাহ ও গ্রাহক পর্যায়ে ব্যবহারের মধ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। গ্যাস খাতের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেও বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, গতানুতিক ধারায় বিভিন্ন কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা বন্ধ করার।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বছরের পর বছর অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জ্বালানি খাত চলছে। আশা করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার সঠিক সংস্কারের উদ্যোগ নেবে। কিন্তু কার্যত দেখা যাচ্ছে, তারাও সেই পুরনো ধারায় চলছে। আশা ছিল, জ্বালানি উপদেষ্টা অন্তত এ খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসবেন, কি করে সংস্কার করা যায়Ñ সেই ধরনের রূপরেখা তৈরি করবেন। কিন্তু বাস্তবে সেটা দেখছি না।
তিনি আরও বলেন, তিতাসকে তিনটি কোম্পানি যদি করা না যায় তবে অন্তত প্রতিটি পর্যায়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। মূল লক্ষ্য ও উদেশ্য হওয়া উচিত, গ্রাহকদের দ্রুত সেবা নিশ্চিত করা। তাছাড়া দেশের শিল্প কারখানার উন্নয়নই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, আমরা গ্রাহকদের যত দ্রুত সম্ভব সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করি। তবে তিতাস অনেক বড় এলাকা, গ্রাহক সংখ্যাও অনেক; ফলে প্রক্রিয়াগত কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। তিতাসকে তিন ভাগ ভাগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।
পেট্রোবাংলার উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা মনে করেন, পেট্রোবাংলার আওতাধীন বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এমন প্রক্রিয়ার মধ্যে কাজ করছেন যেখানে প্রকৃত অর্থে জবাবদিহিতা নেই। বছরের পর বছর গড়পড়তা কাজের ফলে গ্যাস সেক্টর বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছে। সিস্টেমলসের নামে গ্যাসের অপব্যহার, গ্যাসের চুরি জায়েজ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া কোনো কোনো সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিরামহীন কাজ করছেন আবার কিছু সেক্টরে তারা বছরের পর বছর তেমন কাজ করছেন না। ফলে এ খাতে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। এর মাধ্যমে গ্যাসের ব্যবহার প্রতিটি পর্যায়ে মনিটরিং হবে। প্রতিটি এলাকায় সরবরাহ, ব্যবহার এবং সেখান থেকে আদায়কৃত রাজস্বের হিসাব হবে। এলাকাভিত্তিক মিটারিং এবং সিস্টেম লস নির্ধারণ করে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনা যাবে।
![তিতাস গ্যাসে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ছে](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)