ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ২:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
দুই কারণে অস্থির ডলারের বাজার
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ২:২০ পিএম
![দুই কারণে অস্থির ডলারের বাজার](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/12/20/20241220110818_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
গত কয়েক মাস ধরে দেশের ডলার বাজার কিছুটা স্থিতিশীল ছিল। তবে এখন আবার ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দাম অস্থির হয়ে উঠেছে। আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে প্রতি ডলার ১২৫ টাকা ছাড়িয়েছে, যা ১২০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। অন্যদিকে খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১২৭ টাকা ছাড়িয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধি করা ও রমজান
মাস সামনে রেখে আমদানি বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাকে কেন্দ্র করেই মূলত ডলার বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।
চলতি বছরের মে মাসের শুরুতে টাকা ও ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সেই পদ্ধতি এখনও কোনো কাজে আসেনি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আবারও ডলারের দরে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এজন্য ডলারের দর নির্ধারণে ‘নিলাম পদ্ধতি’ চালু করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবারই প্রথম বাংলাদেশ ব্যাংক এ পদ্ধতিতে ডলার কেনাবেচা করতে চাচ্ছে।
ডলার বাজারের নিলাম পদ্ধতি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিলামে সর্বনি¤œ যে দর হবে, সেই দামে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার সর্বোচ্চ যে দর উঠবে, সেই দরে ডলার বিক্রি করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা শেয়ার বিজকে বলেন, ডলারের দর বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ তৈরি করে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য আমরা নীতি সুদহার বাড়িয়েছি। আর নীতি সুদহার বাড়তির দিকে থাকবে বলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করব যাতে ডলারের চাহিদা ও জোগানে সামঞ্জস্য থাকে। জানা গেছে, ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের জন্য রিজার্ভ বৃদ্ধি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এর প্রভাবও ডলারের দরের ওপর পড়েছে।
খোলাবাজারে ডলারের দর বৃদ্ধির বিষয়ে জানান মানি চেঞ্জিং হাউসের স্বত্বাধিকারী এমএস জামান শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের ক্যাশ কারেন্সির ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রবাসী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই মূলত আমরা ডলার কিনে থাকি। তবে এখন ডিসেম্বর ক্লোজিং হওয়ায় ডলার আসা কমে গেছে। ব্যাংকগুলো প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্সের প্রতি ডলার ১২৬ টাকার বেশি দিয়ে ক্রয় করে। এর ফলে গ্রাহকদের কাছ থেকে ডলার কিনতে হলে আমাদেরও ব্যাংকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হচ্ছে। আমরা এখন ১২৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৭ টাকায় ডলার বিক্রি করছি।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, রমজান মাস সামনে রেখে আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাবে। এজন্য ডলারের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণেই ডলারের দর বেড়েছে। রমজান মাস সামনে রেখে পণ্য আমদানি বাড়ছে। এতে ডলারের ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ১২০ টাকায় ডলার বিক্রি করেছে, কিনেছে ১১৯ টাকায়। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক ১২০ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি করেছে, এদিন ব্যাংকটি ডলার কিনেছে ১১৯ টাকা ৫০ পয়সায়। এছাড়া সিটি ব্যাংক ১২০ টাকায় ডলার বিক্রি করেছিল, কিনেছিল ১১৯ টাকায়। ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটে ডলার কেনাবেচার এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্ত দিয়ে রেখেছে আইএমএফ। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনেছে। এতে বাজারে ডলারের জোগান কমেছে। অন্যদিকে রমজান সামনে রেখে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এতেই মূলত ডলার বাজার আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের একাধিক বৈঠক শেষে রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বর শেষে ন্যূনতম নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। সেটি কমিয়ে এখন ১৭ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া চলতি ডিসেম্বর শেষে ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার সংরক্ষণ করার শর্ত ছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই শর্ত পূরণ করতে না পারলেও আইএমএফের কিস্তি ছাড়ের ক্ষেত্রে এটিকে বাধা হিসেবে ধরা হয়নি বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ ডিসেম্বর আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৯৯৫ কোটি ডলার। এক সপ্তাহ আগে ১১ ডিসেম্বর ছিল ১ হাজার ৯২০ কোটি ডলার।
রমজান সামনে রেখে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এলসি খোলায় উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে দেশের মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন ধরে দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ডলারের দর বেড়েছে। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতিতে চাপ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফের প্রতিনিধিরা দীর্ঘদিন ডলারের দর ১২০ টাকায় স্থিতিশীল থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ডলার দর আরও কীভাবে বাজারভিত্তিক করা যায়, সে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তারা এমন একটি ব্যবস্থা চাইছেন যেন ডলারের দর ওঠানামা করে। আর এজন্যই ডলার বেচাকেনার দর ঠিক করতে নতুন পদ্ধতির দিকে এগোচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
![দুই কারণে অস্থির ডলারের বাজার](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)