ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২:৪১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
দেশে ন্যূনতম আয় চালু হলে দারিদ্র্য কমবে ৬ শতাংশ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২:৪১ পিএম
ছবি: সংগ্রহ
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বলেছে, সর্বজনীন ন্যূনতম আয়ের প্রক্রিয়া বা ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম (ইউবিআই) পদ্ধতি চালু করা হলে দেশে ৬ শতাংশ পর্যন্ত দারিদ্র্য কমে আসবে; পাশাপাশি দূর হবে বৈষম্যও।
সংস্থাটি বলেছে, দেশের দারিদ্র্যপীড়িত ৩৬ জেলায় এই পদ্ধতি চালু করা গেলে দারিদ্র্য কমবে ৩.৭ শতাংশ। বৈরী আবহাওয়াপূর্ণ ৩৪ জেলায় বাস্তবায়ন করা গেলে ৩ শতাংশ দারিদ্য কমবে। আর অতিদারিদ্র্যপীড়িত ১১ জেলায় এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা গেলে দারিদ্র ১.৫ শতাংশ কমে আসবে।
রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে সিপিডি আয়োজিত 'অ্যাসেসিং দ্য ভিয়াবিলিটি অফ ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম (ইউবিআই) ইন বাংলাদেশ' — শীর্ষক অনুষ্ঠানে গবেষণা সংস্থাটির পক্ষ থেকে একটি স্টাডির রেফারেন্স দিয়ে এ কথা বলা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি পর্যালোচনার মাধ্যমে সিপিডি নতুন এই পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে। এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। যিনি আজকের সংলাপ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
এ সময় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, "বাংলাদেশের জনগণকে নাগরিক হিসেবে ন্যূনতম আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশ গণতন্ত্রে উন্নয়নের সন্ধিক্ষণে রয়েছে। এরকম সময়ই আকাঙ্খা তুলে ধরার সময়। উন্নয়ন ও বিকাশের নিশ্চয়তা পাবে মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধারণা আছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে এই প্রস্তাব করা হলো। এর অর্থ হচ্ছে, ন্যূনতম একটা আয়স্তর ঠিক করে তার নিচে যাদের আয় থাকবে, তাদেরকে সহায়তা করা।"
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, "সর্বজনীন ন্যূনতম আয়ের ছয়টি বিশেষ দিক রয়েছে। এতে বৈষম্যহীনতা সৃষ্টি হয়, অর্থনীতি বেগবান করে, সার্বিক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যারা বাদ পড়েন, তারা সুবিধা পান, শর্তছাড়া সকলের জন্য সমান ও নগদে সহায়তা দেওয়া হয় এবং ব্যক্তি পার্যায়ে সুবিধা পায়।"
তিনি বলেন, "ব্যক্তির ন্যূনতম জীবনমান নিশ্চিত করতে এটা সহজ করে। সিপিডি একটা মডেল ও এই ব্যবস্থার সম্ভাবনা কী আছে এবং এটি সুবিধাভোগীদের কাছে কীভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়— তার পদ্ধতি তুলে ধরেছে।"
জানুয়ারি থেকে জুন মাসে সিলেকশন পদ্ধতি করার সুপারিশ করে, অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন তিনি। ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে এই ধারণা অন্তর্ভূক্ত করার সুযোগ আছে বলে উল্লেখ করেন তৌফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, "ইউবিআইয়ের একটি প্রটেকশন সাইড আছে। প্রমোশন ও প্রটেকশন মাথায় রেখে করতে হবে। শুধুমাত্র প্রটেকশন, কিন্তু টেকসই হয় না। তবে এক্ষেত্রে ডেলিভারি গুরুত্বপূর্ণ। ডেলিভারি সিস্টেমে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা খুবই জরুরি।"
তিনি বলেন, "রাজনৈতিক দল হিসেবে কল্যাণ রাষ্ট্র নির্মাণে বিএনপি ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করছে। কারণ চিকিৎসার আউট অব পকেট খরচ ৭২ শতাংশ। এর সাথে বিনামূল্যে শিক্ষাও নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি।"
আমির খসরু বলেন, "সর্বজনীন ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করার জন্য সরকারের ব্যয় বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। রাজস্বের নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে। ইনোভেটিভভাবে রিসোর্স মোবিলাইজেশন করা যায় কি–না দেখতে হবে।"
"রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সম্পদ কোনো বিষয় না। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৩০ হাজার কোটি টাকা না করলে সম্পদের ঘাটতি হবে না," যোগ করেন তিনি।
আলোচনায় সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ১৯৮০ সালে ইউবিআই নিয়ে আলোচনা হয়। বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস জীবনের বড় অংশ দারিদ্র দূরীকরণে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী কাজ করছেন। ফলে বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণে ইউবিআয়ের গুরুত্ব তিনি বুঝবেন।
তিনি বলেন, "সামাজিক নিরাপত্তা যাতে দলীয় লোকদের সুবিধা দেওয়ার উপকরণ না থাকে। এজন্য এটিকে ইনস্ট্রুমেন্টাল ওরিয়েন্টেড সিস্টেমে নিতে হবে।"
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, "ডিজঅ্যাবিলিটিকে (প্রতিবন্ধকতা) প্রাধান্য দিয়ে এক কোটির বেশি লোককে সহায়তা করা হচ্ছে। ইউবিআই করা যেতে পারে। এতে কাজের প্রতি আগ্রহ কমবে কিনা, উৎপাদন কমবে কিনা, মূল্যস্ফীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে— সেগুলো আরও বিশ্লেষণ করা দরকার।"
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র সোশ্যাল প্রটেকশন স্পেশালিস্ট আনিকা রহমান বলেন, "ইউবিআই চালুর সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ দুটোই আছে। এটা ভিন্ন মডেল। ফলে প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ বেশি থাকবে। এখানে ক্যাশ ট্রান্সফারের ইস্যু রয়েছে। ফলে স্বচ্ছতা, সুবিধাভোগী নির্বাচন করার পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, শিশুদেরকে কীভাবে সম্পৃক্ত হবে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।"
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, "যেসব দেশ ইউবিআই বাস্তবায়ন করছে, তাদের ট্যাক্স-টু-জিডিপি রেশিও কমপক্ষে ১০ শতাংশের বেশি। এই কর আয় দিয়ে ইউবিআইয়ের মতো কাজে অর্থায়ন করা যাবে কিনা, তা দেখতে হবে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অদক্ষতা দূর করতে হবে।"
তিনি বলেন, "দোদ্যুল্যমান পরিস্থিতিতে আছি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্যাক্স নেট বাড়াতে হবে এবং অটোমেটেডভাবে করতে হবে। অর্থনীতিতে দুর্নীতি ভাইরাসের মতো ছাড়াচ্ছে। এটি বন্ধ করা গেলে ইউবিআই ফাইন্যান্স করা কঠিন হবে না।"
"সামাজিক সুরক্ষা কোনোভাবেই ন্যূনতম মজুরির ওপরে উঠে গেলে হবে না। ইংল্যান্ডে অনেকে চাকরি করতে চান না। কারণ তারা ইউবিআয়ের আওতায় যে অর্থ পান, তা চাকরির সমান," যোগ করেন তিনি।