ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:২৪:৫২ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

২৭ এপ্রিল, ২০২৪ | ৯:৫২ এএম

অনলাইন সংস্করণ

ধুঁকছে পর্যটনের মেয়াদোত্তীর্ণ পাঁচ প্রকল্প

২৭ এপ্রিল, ২০২৪ | ৯:৫২ এএম

ধুঁকছে পর্যটনের মেয়াদোত্তীর্ণ পাঁচ প্রকল্প

দেশের পর্যটনে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সেই সম্ভাবনা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেখানে ভালো ব্যবসা করছে, সেখানে সরকারের হোটেল-মোটেল ও পর্যটন কেন্দ্র লোকসান গুনছে।

 

এদিকে বেশ কিছু পর্যটন এলাকার উন্নয়নে কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হলেও বছরের পর বছর ধরে সেগুলো ধুঁকছে। সরকার বরাদ্দ দিলেও খরচ করতে না পারায় প্রতিবছরই বরাদ্দের বড় অংশ ফেরত যাচ্ছে।

 


নোয়াখালীর হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। প্রতিবছর লাখো পর্যটক হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্য দেখতে ঘুরতে যান।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, এই এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৮ সালে ৪৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পেলেও ছয় বছরে ১০ শতাংশও কাজ হয়নি। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটির আওতায় চার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও খরচ করতে না পারায় ১০ লাখ টাকা রেখে বাকিটা ফেরত নেওয়া হয়েছে।

 


পর্যটন করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরে পর্যটন আকর্ষণীয় এলাকায় ট্যুর পরিচালনার লক্ষ্যে ২০২১ সালে ২২৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ট্যুরিস্ট কোচ সংগ্রহ প্রকল্প নেওয়া হয়। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েও নির্দিষ্ট সময়ে কোচ কিনতে পারেনি পর্যটন করপোরেশন। চলতি অর্থবছরে কোচ কেনার জন্য ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও কেনা যায়নি কোচ। ফেরত নেওয়া হয়েছে টাকা।

 


এদিকে জুনে শেষ হবে প্রকল্পের মেয়াদ। অর্থাৎ ফের মেয়াদ বাড়বে। এদিকে চট্টগ্রামের পারকিতে পর্যটন সুবিধা প্রবর্তনে ২০১৭ সালে ৭১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে প্রকল্পটিতে এখনো অর্ধেক কাজই সম্পন্ন হয়নি। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটিতে ১৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

 


পঞ্চগড়ে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৮ সালে ৩৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয় পর্যটন করপোরেশন। তবে ছয় বছর পেরোলেও এখনো প্রকল্পটিতে কোনো কাজ হয়নি। চলতি অর্থবছরে তিন কোটি টাকা প্রকল্পটিতে বরাদ্দ দিলেও খরচ করতে না পারায় ফেরত নেওয়া হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দায় শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণে ৪৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। ছয় বছরে প্রকল্পটির এখনো ১০ শতাংশ কাজও হয়নি। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটিতে চার কোটি টাকা দেওয়া হলেও তা ফেরত গেছে।

 

 

তবে দুটি প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারলেও চলতি অর্থবছরে প্রকল্প দুটি শেষ করতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরিশাল জেলার দুর্গাসাগর এলাকায় পর্যটন সুবিধা সৃষ্টি করতে ২০১৮ সালে ১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরে শেষ করতে পাঁচ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর পর্যটন বর্ষ উপলক্ষে দেশের কিছু পর্যটন আকর্ষণীয় এলাকার পর্যটন সুবিধার উন্নয়নে নেওয়া ৫২ কোটি ৮৪ লাখ টাকার প্রকল্পটিকে জুনের মধ্যে শেষ করতে ১৩ কোটি ৪৯ লাখ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

 

এদিকে গত কয়েক বছর ধরেই তেমন লাভ দেখছে না পর্যটন করপোরেশন। সংস্থাটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে পাঁচ কোটি ২৫ লাখ টাকা লোকসান হয়। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে লোকসান হয় চার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যদিও এক কোটি ৩০ লাখ টাকা লোকসান দেখিয়েছে সংস্থাটি।

 

প্রকল্প বাস্তবায়নে এই বেহাল দশার বিষয়ে পর্যটন করপোরেশনের পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মাহমুদ কবীর বলেন, চলতি অর্থবছরে দুটি প্রকল্প শেষ হবে। সে অনুযায়ী তাঁদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চগড়ে পর্যটনকেন্দ্রের স্থান পরিবর্তন করতে সময় লেগে গেছে। সেটির ডিপিপি সংশোধন করতে হবে। নিঝুম দ্বীপ ও হাতিয়ায় ডিজাইন পরিবর্তন করতে গিয়ে ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল। সেটা আবার ব্যয় কমিয়ে প্রকল্প সংশোধন করে অনুমোদন নিতে হবে। কোচ কেনার প্রকল্পটি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আটকে আছে। ডলার রেট বেশি হওয়ায় অনেকে আগ্রহী হচ্ছে না।

পর্যটন লোকসানে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বড় বাণিজ্যিককেন্দ্রগুলো অনেক পুরনো। সেখানে ভালো আয় হচ্ছে না। আবার নিজেদের অর্থ না থাকায় সংস্কারও করতে পারছি না। সেগুলো বেসরকারি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার পরিকল্পনায় কাজ চলছে।’

ধুঁকছে পর্যটনের মেয়াদোত্তীর্ণ পাঁচ প্রকল্প