ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৬:৫১:২১ পিএম

নিঃশর্ত-স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস

১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:৩০ এএম

নিঃশর্ত-স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস

ছবি: সংগ্রহ

ফিলিস্তিনের গাজায় নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার ইউএনআরডব্লিউএর সমর্থনেও আলাদা প্রস্তাব পাস হয়েছে। ইসরাইল আইন করে এই সংগঠনকে তাদের দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

 

স্থানীয় সময় বুধবার পাস হওয়া ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজা ভূখণ্ডে অবিলম্বে নিঃশর্তে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে। কর্মকর্তাদের মতে, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধের ফলে গাজায় ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এই প্রস্তাবকে অবশ্য প্রতীকী পদক্ষেপ মনে করা হচ্ছে। কারণ ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র তা খরিজ করে দিয়েছে। আর ইসরাইলের ওপর এই প্রস্তাব মানার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতাও নেই। তবে রাজনৈতিক দিক থেকে দেখতে গেলে এর একটা চাপ আছে। কারণ এতগুলো দেশ যখন কোনো প্রস্তাবে সমর্থন দেয়, তখন তাকে পুরো বিশ্বের মত প্রকাশ বলে বিবেচনা করা হয়।

 

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, তারা এই আগ্রাসনের প্রতিটি পর্যায়ে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে নেওয়া সমস্ত সিদ্ধান্ত বা উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। হামাসের দাবি, ‘যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহু এবং তার ফ্যাসিস্ট মন্ত্রীরা’ আন্তর্জাতিক উদ্যোগ এবং প্রস্তাবগুলোকে ধারাবাহিকভাবে উপেক্ষা করে গেছেন এবং মার্কিন প্রশাসনের সমর্থনে গাজায় নিরীহ বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা অব্যাহত রেখেছেন।

 

হামাস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে আরব ও ইসলামি দেশগুলো এবং প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা দখলদার ইসরাইলি সরকারকে এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগ করে। ফিলিস্তিনি সংগঠনটি এ সময় জাতিসংঘের প্রতি সাধুবাদ জানিয়ে বলেছে, গাজায় ‘বর্বর গণহত্যা বন্ধে’ বিশ্ব বিবেকের প্রতিফলন ঘটিয়ে এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে হামাস আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে এবং ইসরাইলি নেতাদের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

 

এদিকে সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ছিল, গাজায় ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্ত করার শর্তে যুদ্ধবিরতি হতে পারে। না হলে হামাস ওই বন্দিদের মুক্তি দেবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর রবার্ট উড বলেছেন, এই প্রস্তাবের ভাষা ভুল ও লজ্জাজনক। বুধবার যুদ্ধবিরতির ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৫৮টি দেশ। বিপক্ষে ভোট পড়ে ৯টি। আর ১৩টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত থাকে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অবিলম্বে নিঃশর্তে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে। বন্দিদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে।

 

এদিন সাধারণ পরিষদে আরেকটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। সেখানে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের নিয়ে জাতিসংঘের সংগঠন ইউএনআরডব্লিউএ নিয়ে এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৫৯টি দেশ ভোট দেয়, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্রসহ সাতটি দেশ এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়। ১১টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। এই প্রস্তাবে ইউএনআরডব্লিউএ নিয়ে ইসরাইলের আইনের নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইসরাইল যেন ইউএনআরডব্লিউএ-কে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় এবং তাদের কাজে যেন কোনো বাধা না দেয়।

 

এই প্রস্তাব পাস করার আগে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর অনেকেই তাদের ভাষণে ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানায়। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের দূত রিয়াদ মানসুর বলেন, গাজা এখন যন্ত্রণার ক্ষতচিহ্ন হয়ে

 

আছে। সেøাভেনিয়ার দূত বলেছেন, গাজা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আলজেরিয়ার ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর বলেছেন, ফিলিস্তিনের দুরবস্থা নিয়ে চুপ করে থাকার জন্য বিশ্বকে বড় মূল্য দিতে হবে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একই ধরনের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোয় বাতিল হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরই এই বৈঠকের বিষয়টি আলোচনায় আসে। সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলেও নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের মতো এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

 

সে্ভেনিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল জবোগার সাধারণ পরিষদের বৈঠকে বলেছেন, গাজার আর কোনো অস্তিত্ব নেই। এটা ধ্বংস হয়ে গেছে। বেসামরিক মানুষ ক্ষুধা, হতাশা এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে। তিনি বলেন, এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের এখন যুদ্ধবিরতি দরকার। আমাদের এখন জিম্মিদের বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতর থেকে আলজাজিরার গ্যাব্রিয়েল এলিজোন্ডো বলেছেন, এই দুইটি রেজুলেশনের সঙ্গে বার্তাটি পরিষ্কার। এক নম্বর, ইউএনআরডব্লিউএকে সুরক্ষিত করতে হবে এবং তাদের ম্যান্ডেটকে সুরক্ষিত ও শক্তিশালী করতে হবে। দ্বিতীয় বার্তাটি পাঠায় হলো বিশ্বের সিংহভাগই আবারও গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে।

 

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরেও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়েছিল। প্রস্তাবটির পক্ষে ১৫৩টি দেশ ভোট দেয় তখন। অন্যদিকে প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দেয় মাত্র ১০টি দেশ। যার মধ্যে ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম।

নিঃশর্ত-স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস