ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২০ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:৩১ এএম
অনলাইন সংস্করণ
পাচার হওয়া অর্থের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রয়োজন
২০ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:৩১ এএম
![পাচার হওয়া অর্থের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রয়োজন](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/11/20/20241120093054_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
বিদেশে অর্থপাচার নিয়ে আমাদের দেশে আলোচনা দীর্ঘদিনের। দুই দশকের বেশি সময় ধরে শুনে আসছি যে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থেকেছে, তাদের বিরুদ্ধেই বিশাল অঙ্কের অর্থ পাচারের অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে এই অভিযোগ অনেক বেশি।
এর কারণও আছে। বিগত সরকার দেড় যুগের বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল, ফলে তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ অনেক বেশি ও লম্বা হবে, এটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া বিগত সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। বিশেষ করে বিশাল বিশাল অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে।
নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে বিশাল অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির অর্থই বিদেশে পাচার হয়েছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে।
সবচেয়ে হতাশার বিষয় হচ্ছে, আগের সরকারের সময় অর্থ পাচার হওয়া নিয়ে গুরুতর অভিযোগ ওঠা এবং ব্যাপক আলোচনা হওয়া সত্ত্বেও এই অপরাধ বন্ধ করতে সেই সরকারকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি। আবার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে অনেক আলোচনা করলেও সেই অর্থ ফিরিয়ে আনতে হলে যে ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হয় সেটিও আমরা লক্ষ করছি না।
তা না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো মহা ক্ষমতাধর দেশ তাদের দেশ থেকে অন্যত্র সরিয়ে রাখা শত শত বিলিয়ন ডলার অনেক আগেই ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হতো।
পাচার হওয়া অর্থের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রয়োজনবিদেশে অর্থ পাচার নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে, সে তুলনায় সঠিক তথ্য আমরা পাইনি। অর্থ অবশ্যই পাচার হয়েছে এবং এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। কিন্তু যে তথ্যটা জনসমক্ষে আসেনি তা হচ্ছে, কোন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণ অর্থ কোন বছর কোন দেশে কিভাবে অর্থাৎ ব্যাংক না হুন্ডির মাধ্যেম পাচার করেছে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঢালাও অভিযোগ আনা হয়েছে যে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এসব বক্তব্য যে শুধু রাজনৈতিক মহল থেকে এসেছে তেমন নয়, অনেক পেশাদার সংস্থা থেকেও একই রকম অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। বিশেষ করে সিপিডি (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) ও টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) একইভাবে বলে আসছে যে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ রকম ঢালাও বক্তব্য দিয়ে দেশ থেকে অর্থ পাচারের গুরুতর অভিযোগকে হালকা করে ফেলা হয়।
একজন পেশাদার ব্যক্তি বা সংস্থা কিভাবে অর্থপাচারের মতো অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে পারে তা জানতে হলে আমাদের গ্যাব্রিয়াল জাকম্যানের লেখা ‘দ্য হিডেন ওয়েলথ অব নেশনস’ বইটি পড়া উচিত। সেই বইয়ে লেখক স্পষ্টভাবে এবং তথ্যসূত্র উল্লেখ করে দেখিয়েছেন যে আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বের কোন কোন দেশ থেকে কারা কী পরিমাণ অবৈধ অর্থ অন্যত্র গোপন আস্তানায় সরিয়ে রেখেছে। বিষয়টি নিশ্চিত এবং পরিষ্কার। শুধু এ বইয়ের কথা বলি কেন, ক্যারিবীয় দ্বীপ দেশের কথা কমবেশি সবারই জানা।
ক্যারিবীয় দ্বীপ দেশ হচ্ছে অবৈধ এবং পাচার হওয়া অর্থ জমা রাখার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। সেসব দ্বীপ দেশে অসংখ্য শেল কম্পানি গড়ে উঠেছে, যেখানে শুধু অবৈধ অর্থ জমাই রাখা হয় না, সেখান থেকে অবৈধ অর্থ বৈধ করারও সুব্যবস্থা আছে। উল্লেখ্য, শেল কম্পানি হচ্ছে এমন এক ধরনের প্রতিষ্ঠান, যা কাগজে-কলমে থাকলেও এর অবস্থান খুঁজে পাওয়া কষ্টকর এবং এর পেছনে কারা আছে তা-ও জানার উপায় নেই। বেশির ভাাগ ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরাই এসব শেল কম্পানির মালিক এবং তারাই এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকেন।
গভর্নরের সুনির্দিষ্ট বক্তব্যের কয়েক দিন পরই টিআইবির প্রধান এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করে বলেছেন যে বিগত সরকার বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। অর্থাৎ আমরা যদি বিগত ১০ বছরের শাসনামল বিবেচনায় নিই, তাহলেও দেখা যাবে যে এই সময়ে দেশ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। বছরে যদি রপ্তানির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলার হয়, তাহলেও মোট রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ টিআইবির ভাষ্য অনুযায়ী বিদেশে পাচার হয়েছে। পরিমাণটি বিশাল। বাংলাদেশের রপ্তানির বেশির ভাগ তৈরি পোশাক, যা আমদানি করে বিশ্বের খ্যাতনামা সব প্রতিষ্ঠান, যাদের আছে নিজস্ব কঠোর কমপ্লায়েন্স পদ্ধতি। এমনকি তৈরি পোশাক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কমপ্লায়েন্স সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়; এবং এর মান ও কঠোরতা আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোর চেয়ে অনেক উন্নত।
যা হোক, টিআইবির প্রধান যেহেতু প্রকাশ্যে বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ১০ বছরে ১৫০ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচারের অভিযোগ করেছেন, তাই তাদের কাছে এই অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ নিশ্চয়ই আছে। কেননা টিআইবির মতো প্রতিষ্ঠান, যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার, তারা নিশ্চয়ই আন্দাজে কথা বলবে না। তাই তাদের প্রধান কাজ হবে এই ১৫০ বিলিয়ন ডলার পাচারের তথ্য-প্রমাণ অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া। এর ফলে তাদের কাজটা অনেক সহজ হবে এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ খুব দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ নিয়ে কাজ করার ফলে বিশ্বের অনেক দেশ তাদের পাচার হওয়া অর্থ নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে এবং এ রকম দৃষ্টান্ত যে একেবারে নেই, তেমন নয়। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে সঠিকভাবে এগোতে না পারলে পাচার হওয়া অর্থ তো ফেরত আনা সম্ভব হবেই না, উল্টো দেশ আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভাবমূর্তির সংকটে পড়তে পারে। আর এ কারণেই দেশ থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ পাচারের যে অভিযোগ তা সুনির্দিষ্ট ও তথ্য-প্রমাণভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন।
- ট্যাগ সমূহঃ
- সুনির্দিষ্ট
- তথ্য
![পাচার হওয়া অর্থের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রয়োজন](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)