ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১১:০৪:১৪ পিএম

পানির সংযোগ না থাকলেও গুনতে হচ্ছে বিল

২০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৮:০ পিএম

পানির সংযোগ না থাকলেও গুনতে হচ্ছে বিল

ছবি: সংগ্রহ

বরিশাল নগরীতে নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে না পারলেও বিল আদায় করছে সিটি করপোরেশন। এমনকি যেসব এলাকায় পানির লাইন পর্যন্ত এখনও স্থাপন করা হয়নি সেখান থেকেও পানির বিল আদায় করা হচ্ছে। বরিশাল সিটি কপোরেশন (বিসিসি) বলছে এটা বিধিসম্মত, তবে সিটি কপোরেশনের এ কথা মানতে নারাজ নগরবাসী।

 

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৬৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে মাত্র ৩১ বর্গকিলোমিটার এলাকায় পানির সংযোগ আছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পুরো ১০০ ভাগ এলাকা থেকেই আদায় করছে পানির বিল। কখোনো তা ‘বিল’ নামে কখনো বা ‘রেট’। মোট ৩৪ হাজার পানির লাইন বাবদ বছরে আদায় করা হচ্ছে অন্তত ১০ কোটি টাকা। লাইনে একফোঁটা পানি না এলেও এই বিল দিতে হবে আর পানির লাইন না থাকলেও রেট দিতে হবে। বর্ধিত এলাকার পানির গ্রাহক জব্বার মিয়া বলেন আমরা সমস্যায় আছি। বাড়ির প্লান পাস হওয়ার পর থেকেই মাসে ২০০ টাকা পানির বিল দিতে হচ্ছে। অথচ আমরা একফোঁটাও পানি পাই না। শুধু শুধু ওরা এই বিল নিচ্ছে। যেখানে পানির কোনো সংযোগ নেই, পানি ব্যবহার হয় না সেখানে কেন একজন বাসিন্দা পানির বিল দেবে এটাই আমার প্রশ্ন।

 

অপর এক বাসিন্দা মাসুদ আহমেদ বলেন, আমাদের এই এলাকায় ৫ থেকে ৬০টি উঁচু ভবন আছে, একটি বাড়িতেও পানির লাইন নেই। আমরা সিটি করপোরেশনের কোনো পানিও পাই না। অথচ ওরা বিল দিতে বলে। আমরা কিছু বিল দিয়েছি, আর দিতে চাই না।

 

পানির লাইন থাকা না থাকার বিষয়টি নিয়ে নগরবাসী যখন নাকাল তখন নিজের পানি নিজে তুলতে যারা টিউবওয়েল বসাচ্ছে তাদের ওপরও চার্জ ধার্য করা হয়েছে। যেসব স্থানে পানির লাইন নেই সেখানে নতুন রাস্তা করা হলেও নেওয়া হচ্ছে না পানির লাইন। বহু ধরনা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ভুক্তভোগী রিয়াজ বলেন, এমনিতেই পানির লাইন নেই, পানিও পাই না। নিজের পানি নিজে পেতে যখন টিউবওয়েল বসাতে চাই, সে ক্ষেত্রেও বিসিসিকে ৩৫ হাজার টাকা চার্জ দিতে হচ্ছে।

 

বিসিসির দাবি হলো তারা পাইপের ব্যাস ও ভবনের উচ্চতা অনুযায়ী পানির বিল ধার্য করে থাকে। এত কিছুর পরও বছরে অন্তত ৩৫ ভাগ পানির বিল আদায় করা যাচ্ছে না।

 

এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের পানি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, আমরা লাইনপ্রতি সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা পানির বিল আদায় করে থাকি। পাইপের ডায়া এবং বাড়ির তলা হিসেবে এ বিল ধার্য করা হয়। মাসিক হিসেবে প্রতি তিন মাসে গ্রাহকদের বিল দিয়ে থাকি। বছরে ৩৫ ভাগ বিল বকেয়া থাকে।

 

বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন ৭ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হয়। ৫টি ওভার হেড ও ৩৬টি পাম্প ও পানির গাড়ির সাহায্যে রোজ সাড়ে তিন কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পানি চাহিদায় কাতর নগরবাসী ইতিমধ্যে প্রায় ২৮ হাজার নলকূপ বসিয়েছে। বিসিসির দরকার আরও অন্তর ১০টি উচ্চ ক্ষমতার পাম্প।

 

বিসিসির পানি বিভাগের কর্মী আবু বক্কর দিদ্দিকী বলেন, আমরা চাহিদার চেয়ে অর্ধেক পানি সরবরাহ করতে পারি। উৎপাদনমুখী ১০টি টিউবওয়েল পাওয়া গেলে বিসিসি এলাকায় পানির পরিপূর্ণ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

 

এদিকে পানির সংকটের মুখেও পানি না দিয়েও জনগণের কাছ থেকে পানির বিল আদায় করাকে বিধিসম্মত বলে দেখছেন বিসিসির এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তার মতে, বিসিসি এলাকায় যে মাধ্যম থেকে পানি নেওয়া হোক না কেন তার কর বিসিসিকে দিতে হবে।

 

এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারি বলেন, যেখানে পানি সরবরাহ করা হয় না সেখান থেকে আমরা পানির রেট আদায় করে থাকি। অর্থাৎ বিসিসি এলাকায় ভবনের নকশা পাস হলেই এটা ধার্য হয়ে যায়। একই সঙ্গে টিউবওয়েল স্থাপনেও আমাদের ধার্য আছে। এ ছাড়া যেখানে পানি সরবরাহ করা হয় সেখান থেকে আমরা বিল আদায় করে থাকি। বিসিসির বিধি অনুযায়ী এসব কিছুই ধার্য হয়ে থাকে।

পানির সংযোগ না থাকলেও গুনতে হচ্ছে বিল