ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:০২:৪৭ পিএম

পিডিবির বকেয়া ৮৪৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোয় অর্থ পরিশোধের রোডম্যাপ চাইছে আদানি

ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি করা বিদ্যুতের ৮৪৫ মিলিয়ন (সাড়ে ৮৪ কোটি) ডলারের বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে স্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপ।

৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১:০ এএম

পিডিবির বকেয়া ৮৪৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোয় অর্থ পরিশোধের রোডম্যাপ চাইছে আদানি

ছবি: সংগ্রহ

ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি করা বিদ্যুতের ৮৪৫ মিলিয়ন (সাড়ে ৮৪ কোটি) ডলারের বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে স্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপ।

 

গত ৬ জানুয়ারি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মো. ফাওজুল কবির খানকে লেখা চিঠিতে আদানি গ্রুপ বকেয়া পরিশোধের পাশাপাশি ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত বিষয়গুলো আলোচনার তাগিদ দিয়েছে।

 

আদানির চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গতকাল বলেছেন, 'আমাদের কাছে তাদের পাওনা আছে, সেজন্য তারা বকেয়া পরিশোধ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে আলাপ-আলোচনার জন্য একটি চিঠি দিয়েছে। এটা একটা রুটিন বিষয়।'


চিঠিটি দেখেছে , সেখানে বলা হয়েছে: '২০২৩ সালে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) উত্থাপিত চালান (ইনভয়েস) পুরোপুরি পরিশোধ করতে পারেনি। এমতাবস্থায় মাসের পর মাস ধরে বকেয়া জমা হচ্ছে।'

 

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পিডিবির অর্থ পরিশোধের ধরনে উন্নতি হলেও – আদানি উল্লেখ করেছে যে, এসব অর্থ প্রদান বর্তমান মাসিক বিলগুলো কোনোভাবে পরিশোধ করতে পারছে। যেকারণে বিদ্যুৎ রপ্তানির বিল বাবদ বকেয়া ৭৭১ মিলিয়ন ডলারসহ – মোট ৮৪৫ মিলিয়ন ডলার আউটস্ট্যান্ডিং রয়েছে।

 

উভয় পক্ষের মতভেদ বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এবিষয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, 'পিডিবি এবং আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেড (এপিজেএল) এরমধ্যে বেশকিছু দাবি ও পাল্টা-দাবির ঘটনা ঘটেছে।' একারণে দুই পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হওয়ার ইঙ্গিতও দেয়া হয় চিঠিতে।

 

এসব সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে, গোড্ডা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিদ্যমান সকল বিষয় সমাধানের জন্য ঢাকায় একটি বৈঠকের আয়োজন করতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছে আদানি গ্রুপ।

 

১৭০ কোটি ডলারের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জ্বালানিখাতে সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাবে বলা হয়েছিল এমন কথাও। কিন্তু, তার বদলে এটি দুই দেশের মধ্যে আর্থিক ও কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কেন্দ্রে অবস্থান করছে।

 

বকেয়া পরিশোধের চাপ বাড়ছে

 

আগামী মার্চে বোরো ধানের মওসুম আর রমজান মাস শুরু হচ্ছে, যখন বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বাড়বে। এরমধ্যে দেশের বেসরকারিখাতের বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি আদানি পাওয়ারের মতো বিদেশি সরবরাহকারীদের থেকে বকেয়া পাওনা পরিশোধে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।

 

গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারহানা মমতাজের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সভায় বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা— আগামী রমজান ও বোরোর সেচের বিদ্যুৎ পেতে আগামী ১০ দিনের মধ্যে অন্তত বকেয়া পাওনার অর্ধেক পরিশোধ করতে সরকারকে অনুরোধ করেছে।

 

সভায় বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত বলেন, প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার বিল বকেয়া আছে। চুক্তিতে ৪৫ দিনের মধ্যে পরিশোধের কথা থাকলেও পেমেন্টের বিলম্ব ছয় মাস অতিক্রম করছে।

 

তিনি বলেন, 'স্থানীয় কোম্পানিগুলোর বকেয়া আছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে অন্তত অর্ধেক, বা সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা হলে— সময়মতো হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) আমদানি করা যাবে।'

 

বিআইপিপিএ'র সদস্যদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৯ হাজার মেগাওয়াট, যার প্রায় অর্ধেক এইচএফও-ভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্ভর।

 

স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছে বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেন, 'আইপিপি (স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী)-দের বকেয়া দাবি করাটা স্বাভাবিক। আমি তাঁদের সাথে দেখা করব, কীভাবে অর্থ পরিশোধ করা যায়— এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব।'

 

এদিকে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) অর্থমন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সময়মতো বিদেশি সরবরাহকারীদের প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন (৪৭ কোটি) বকেয়া পরিশোধ না করা হলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

 

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, চিঠিতে এলএনজি আমদানির ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ থেকে কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার অনুরোধ করা করেছে।

 

তবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ সংস্থাটির বৈদেশিক সরবরাহকারীদের কাছে দেনা রয়েছে ৭০ মিলিয়ন ডলার, তবে কোন বকেয়া নেই।

 

এবিষয়ে বিপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিন উল আহসান বুধবার বলেন, 'বর্তমানে বৈদেশিক সরবরাহকারীদের কাছে বিপিসির কোনো বকেয়া দেনা নেই। ডিসেম্বর মাসে ডলারের সংকট থাকায়– সকল সরবরাহকারীর বিল পরিশোধ করা হয়নি। এজন্য কিছু নিয়মিত বিল বকেয়া রয়েছে। যার পরিমাণ ৬০ থেকে ৭০ মিলিয়ন ডলার হতে পারে।

পিডিবির বকেয়া ৮৪৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোয় অর্থ পরিশোধের রোডম্যাপ চাইছে আদানি