ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:১৭:৫৮ পিএম

প্রশাসনিক সংস্কারে ডিসিদের আপত্তি!

২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:০ পিএম

প্রশাসনিক সংস্কারে ডিসিদের আপত্তি!

ছবি: সংগ্রহ

বাংলাদেশের জনপ্রশাসনে ব্যাপক সংস্কারের জন্য সরকারের নানা উদ্যোগ চলমান। সম্প্রতি, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন একটি নতুন প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে, যার মাধ্যমে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার এবং অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ৫০:৫০ ভাগে নির্বাচন করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে, এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে, বিশেষ করে জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পক্ষ থেকে।

 

বর্তমানে, ২৬টি ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মধ্যে উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য ৭৫ শতাংশ নির্বাচন হয় প্রশাসন ক্যাডার থেকে, যা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনেকটা বৈষম্যমূলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করে ৫০:৫০ ভাগের অনুপাতের প্রস্তাব দেয়ার ফলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা না করে, নিজেদের প্রভাবের কারণে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার আশঙ্কা করছেন। তাদের মতে, এমন পরিবর্তন তাদের বিশেষ মর্যাদা কমিয়ে দেবে এবং আন্তক্যাডার বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাবে।

 


প্রশাসনের ক্ষেত্রে আন্তক্যাডার বৈষম্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের এক পুরনো সমস্যা। বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত হন, এবং তারা পদোন্নতি, পদায়ন, এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে অন্যান্য ক্যাডারের তুলনায় বেশি সুবিধা পান। যার ফলে, প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি সাধারণ জনগণের ক্ষোভ ও বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়।

 

এছাড়া, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রভাব এবং ক্ষমতা বাড়ানোর ফলে তারা স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমীহও করছেন না। স্থানীয় সেবা প্রদানকারীরা, বিশেষ করে ইউএনও ও ডিসিরা অনেক সময় নিজেকে 'জমিদার' মনে করেন, যার ফলে জনগণকে সেবা দিতে তাদের পক্ষ থেকে কোনো মানবিকতা বা দায়িত্ববোধ দেখা যায় না। এর ফলে জনগণ হেনস্থা হয় এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে আরও ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়।

 


এখন সময় এসেছে জনবান্ধব প্রশাসন গড়ার, যেখানে সাধারণ মানুষ সেবা পেতে গিয়ে হয়রানি, ঘুষ বা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার শিকার হবে না। প্রশাসনিক কাজকর্ম ডিজিটালাইজড করা হলে এমন সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হতে পারে। তবে, এটা বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের সক্রিয় সহযোগিতা এবং সংস্কার প্রক্রিয়া সমর্থন করা জরুরি।

 

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উচিত নিজেদের ক্ষমতা এবং মর্যাদা ছাড়িয়ে গিয়ে সরকারের চলমান সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা করা, যেন দেশের সাধারণ জনগণ প্রশাসনিক সেবা পেতে গিয়ে কোনো ধরনের হেনস্তা বা দুর্নীতির শিকার না হয়। তারা যদি এখন সংস্কারে সহযোগিতা না করেন, তবে জনগণের ক্ষোভ আরও বাড়বে এবং জনস্বার্থে পরিবর্তন আনতে তারা বাধ্য হবে।

 


প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংস্কারের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এজন্য সকল স্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে সংস্কারের প্রতি সদর্থক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে, যেন জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা বাড়ে এবং তারা আর ‘জমিদার’ হয়ে না উঠেন।

অতএব, সরকারের উচিত হবে প্রশাসনিক সংস্কারের পথে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে, বরং এটি সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে জনগণের স্বার্থে কাজ করা।

প্রশাসনিক সংস্কারে ডিসিদের আপত্তি!