ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১০:১১ এএম
অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ আজ বিশ্বের নজরে
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১০:১১ এএম

ছবি: সংগ্রহ
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের নজরে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানকালে তিনি ১২টি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ ছাড়াও অধিবেশনসহ উচ্চ পর্যায়ে আরও ৪০টি বৈঠক করেছেন। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছেন।
ছাত্র-জনতার রক্তস্রোতে বিজয় পাওয়া ইতিহাস উপস্থাপন হয়েছে বিশ্বসভায়। বিগত সরকারের শাসনামলে ভঙ্গুর হওয়া দেশকে নতুনভাবে সাজাতে চেয়েছেন সহযোগিতা। দীর্ঘসময় ধরে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত ও অর্থনৈতিক সহযোগিতায় পেয়েছেন আশ্বাস।
এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শেষে আজ ঢাকায় ফিরছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রেস সচিব শফিকুল আলমের দাবি, বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান সফরগুলোর সবচেয়ে সফলতম এই সফর। প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশন ঘিরে নজর ছিল বিশ্বনেতাদের। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকটি সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।
শফিকুল আলম দাবি করেছেন; মাত্র চার দিনের এই সফরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, আইএমএফের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জজিয়া মেলোনি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইসহ মোট ১২টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অংশ নিয়েছেন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনসহ ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে।
ফলে এই সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি প্রেক্ষাপট হিসেবে দেখছেন অনেক বিশ্লেষক। বাংলাদেশে জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ায় এবারের অধিবেশন ছিল বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রধান উপদেষ্টার সফরকালীন কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, যে এই একটি সফর থেকে যা যা অর্জন বা প্রাপ্তির কথা ছিল, তার প্রায় সবই পূরণ হয়েছে। জাতিসংঘের অধিবেশনের আগে রোহিঙ্গা, পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কয়েকটি বৈঠক করেছেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন কর্মসূচিকে গতিশীল করতে জাতিসংঘের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মন্ত্রীদের সঙ্গে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন তিনি। পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নেপালের সঙ্গে জ্বালানি, বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করতে বৈঠক করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির সঙ্গে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে যে বৈঠকটি তিনি করেছেন, সেটি প্রায় পুরোপুরি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ওপর হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের ওপর ধার্য করা রপ্তানি শুল্ক কমানো এবং জিএসপি সুবিধার জন্য দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্কিনবিরোধী নীতির জন্য এতদিন এসব দাবি তোলা সম্ভব হয়নি।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেয়া ভাষণে বাংলাদেশের সামপ্রতিক অভ্যুত্থানের চিত্র তুলে ধরেছেন এই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতন ও পলায়নের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৮ আগস্ট সরকার গঠনের পর ড. ইউনূসের এটাই প্রথম বিদেশ সফর।
এ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদুল আলম বলেন, অধ্যাপক ইউনূস মার্কিন রাজনীতির পরিচিত মুখ। অনেকটা সে কারণেই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের খুব একটা দৃষ্টান্ত না থাকলেও এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের শুরুতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ড. ইউনূসকে বুকে টেনে নেন, বাংলাদেশের বর্তমান সংস্কার নিয়ে ধারণা নেন এবং সর্বশেষ ড. ইউনূস সরকারের ওপর তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। ।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি ইস্যু তুলে ধরায় প্রধান উপদেষ্টার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জনপ্রিয় ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে দেয়া প্রধান উপদেষ্টার বলিষ্ঠ বক্তব্যে বাংলাদেশের মানুষের হূদয়ের কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। ধন্যবাদ তাকে।’
