ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ২:২২:৩১ এএম

বাংলাদেশে আটকে আছে বিদেশী এয়ারলাইনসের ৩২ কোটি ৩ লাখ ডলার

২৫ এপ্রিল, ২০২৪ | ৯:৬ এএম

বাংলাদেশে আটকে আছে বিদেশী এয়ারলাইনসের ৩২ কোটি ৩ লাখ ডলার

বিভিন্ন বিদেশী এয়ারলাইনসের ৩২ কোটি ৩০ লাখ ডলার রাজস্ব প্রত্যাবাসন আটকে আছে বাংলাদেশে। বৈশ্বিক আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলোর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন এড়াতে বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুতই এ অর্থ ছাড়ের অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।

 


বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, কিছু বিদেশী এয়ারলাইনস দেশের বাজারে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ প্রত্যাবাসন করতে চায়। শুল্ক-কর ফাঁকি দিতেও বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। এসব কারণে কিছু বিল পরিশোধে অনেক সময় বিলম্ব হয়ে যায়।

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকিট বিক্রিসহ নানা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো। সেখান থেকে আয় হওয়া রাজস্ব কোম্পানিগুলো নিজ দেশে নিয়ে যায়। এজন্য যে দেশ থেকে রাজস্ব নিয়ে যাওয়া হবে, সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগে। বাংলাদেশে বিদেশী এয়ারলাইনসের রাজস্ব প্রত্যাবাসনের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

বাংলাদেশে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের রাজস্ব আটকে থাকার বিষয়টি গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে আইএটিএর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সংস্থাটির এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিলিপ গোহর বরাতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এয়ারলাইনসগুলোকে উড়োজাহাজ লিজের অর্থ পরিশোধ, যন্ত্রাংশ, জ্বালানি তেলসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন ব্যয় ডলারে পরিশোধ করতে হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে আয় হওয়া রাজস্ব সময়মতো প্রত্যাবাসনের ওপর এসব বিষয় নির্ভর করে। আর তা বিলম্বিত হলে মুদ্রা বিনিময় হারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে এয়ারলাইনসগুলো। নিরবচ্ছিন্ন উড়োজাহাজ চলাচল অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশকে আটকে থাকা রাজস্ব দ্রুত প্রত্যাবাসনের অনুমতি দিতে হবে। পাকিস্তানেও ৩৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার রাজস্ব আটকে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় আইএটিএর ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

 

বিশ্বের প্রায় ৩২০টি আকাশ পরিবহন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন আইএটিএ, যা বৈশ্বিক উড়োজাহাজ চলাচলের ৮৩ শতাংশকে প্রতিনিধিত্ব করছে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারে আকাশ পরিবহন খাতকে আরো গুরুত্ব দেয়া উচিত উল্লেখ করে সংস্থাটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‌বিদেশী মুদ্রার কৌশলগতভাবে ব্যবহারে বিভিন্ন দেশের সরকার চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ মূলত ডলার সংকটের কারণে সময়মতো এয়ারলাইনসগুলোর রাজস্ব প্রত্যাবাসনে বিলম্ব করছে। বাংলাদেশ ডলার বরাদ্দের সময় যেন আকাশ পরিবহন খাতকে অগ্রাধিকার দেয়, সেজন্য সরকারের সঙ্গে কাজ করছে আইএটিএ। এ উদ্যোগ বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোর রাজস্ব প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখবে। আইএটিএ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশের সব অনুমোদিত ডিলার ব্যাংককে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আটকে থাকা রাজস্ব দ্রুত প্রত্যাবাসনের অনুরোধ করছে।

 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সময়মতো এয়ারলাইনসগুলোর রাজস্ব প্রত্যাবাসন না হলে বাংলাদেশে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ চলাচল ব্যাহত হতে পারে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আইএটিএর এমন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরাও।

 

এ প্রসঙ্গে আকাশ পরিবহন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘রাজস্ব প্রত্যাবাসন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে বাংলাদেশ থেকে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলো মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। আগামীতে যদি এটা চলমান থাকে, তাহলে অনেক এয়ারলাইনস বাংলাদেশ থেকে ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের জন্য এটা বড় ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে।’

 

বাংলাদেশে বিদেশী এয়ারলাইনসের রাজস্ব আটকে থাকার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আইএটিএ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার রাজস্ব আটকে থাকার কথা জানিয়েছিল। গত বছরের জুনে আটকে থাকা রাজস্বের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ডলার। এবার তা ৩২ কোটি ৩০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

 

দীর্ঘ সময় ধরে এয়ারলাইনসের রাজস্ব প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এক্ষেত্রে কোনো জটিলতা নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌যেসব এয়ারলাইনস রাজস্ব প্রত্যাবাসনের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে, তাদের অর্থ সঠিক সময়েই পরিশোধ করা হচ্ছে। আর যেগুলো প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায়, সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে ছাড় করা হবে।’

বাংলাদেশে আটকে আছে বিদেশী এয়ারলাইনসের ৩২ কোটি ৩ লাখ ডলার