ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:১৬:১৬ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

২৬ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:২ এএম

অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশের জন্য সহসা পর্যটক ভিসা চালু করছে না ভারত

২৬ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:২ এএম

বাংলাদেশের জন্য সহসা পর্যটক ভিসা চালু করছে না ভারত

ছবি: সংগ্রহ

আগস্টে বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট থেকে ভারতে অবস্থান করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

 

সময় যত যাচ্ছে টানাপড়েন ততই বাড়ছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে ভারত। বিশেষ করে নিরাপত্তা, ইসলামিক জাগরণ এবং সংখ্যালঘু ইস্যুতে প্রকাশ্যেই উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যমান সংকট কাটিয়ে উঠে প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।

 

দুপক্ষের সম্পর্কে গতি ফেরাতে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে গত রোববার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার বৈঠক হয়। বৈঠকে আগামী ডিসেম্বরে ঢাকায় ফরেন অফিস কনসালটেশন অনুষ্ঠানের বিষয়ে উভয়েই একমত পোষণ করেন। বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে ভারতীয় ভিসা পেতে ভোগান্তির বিষয়টি উপস্থাপন করে দ্রুত তা সমাধানের প্রত্যাশা করা হয়। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ৫ আগস্ট এবং পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তার কারণে ভারতীয় হাইকমিশনের ভিসাসহ বিভিন্ন বিভাগের জনবল বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরে গেছে। তারা আবার ফিরতে শুরু করেছে। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে।

 

পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনারের বৈঠক সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লোকবলের অভাবে দ্রুত ভিসা দিতে পারছে না ভারত। তারা এ মুহূর্তে জরুরি মেডিকেল ভিসা দেওয়ায় অগ্রাধিকার দিচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জরুরি ভিসার কোনো নির্দেশনা থাকলে ভারতীয় দূতাবাস গুরুত্ব দেবে। হাইকমিশনার নিশ্চিত করেছেন, ভবিষ্যতে এ অবস্থার উন্নতি হবে। ভারতের সঙ্গে রিভাইজড ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্টের মেয়াদ গত জুলাইয়ে শেষ হয়ে গেছে। এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ছয় মাস পরপর রিনিউ হয়। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দুদেশের জল সীমানায় দুদেশের জেলেরা আটক হয়েছে। তাদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

 

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ যেমনটা ভারতের আস্থায় ছিল, এখন সেখানে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টা এমন যে, শূন্যতা হলেও ভালো; কিন্তু ভারত এখন বাংলাদেশকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। মূলত শেখ হাসিনার পতনের পর তারা আহত হয়েছে। তারা মনে করছে, তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা ও উন্নতির জন্য গত ১৫ বছর ধরে যে কৌশল বাস্তবায়ন করে আসছিল তা বাধাগ্রস্ত হবে। গত ১৫ বছর ধরে দেশটি তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা ও উন্নতির জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেল, সড়ক ও নৌ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করেছে। এ লক্ষ্যে তারা বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে। সেই ঋণের অর্থ দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য যোগাযোগের পথ প্রতিষ্ঠা করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুদেশের নেতারা পারস্পরিক সম্পর্ককে সোনালি অধ্যায় নামে অভিহিত করতেন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারত তেমন সম্পর্ক স্থাপন করেনি।

 

এক যুগ আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে এসে স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন করে দেখাতে চান যে, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারত খুবই উদার এবং ভালো বন্ধু। অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে, এই স্থল সীমান্ত চুক্তি হওয়ার প্রায় ৪০ বছর পর তা বাস্তবায়ন করে ভারত। অর্থাৎ দীর্ঘ ৪০ বছর বাংলাদেশকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছিল দিল্লি। যেমনটি তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে করেছে তারা। তিস্তা ইস্যুতেও প্রায় এক যুগ আগে দুপক্ষের মধ্যে মতৈক্য হলেও ভারতের কারণেই বিষয়টি এখনও ঝুলে আছে। শুধু তা-ই নয়, তিস্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ বিকল্প সমাধানে যেতে চাইলেও হাসিনা সরকারে প্রভাব খাটিয়ে ভারত তা আটকে দিয়েছে।

 

এ মুহূর্তে বাংলাদেশকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে প্রতিবেশী দেশটি। সামনে কী হবে সে বিষয়ে ভারত স্পষ্ট কোনো বার্তা পাচ্ছে না। এ জন্যই তারা নিরাপত্তা উদ্বেগে আছে। এ নিরাপত্তা উদ্বেগের সঙ্গে আরও কিছু বিষয় যোগ হয়েছে। যেমন- হাসিনা সরকারে ভারত যেভাবে নাক গলাতে পারত এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না। হাসিনা সরকারের সময়ে ভারতের উন্নতিতে তাদের ঋণের অর্থে বাংলাদেশে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছিল তা অদূরভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা বাংলাদেশের বর্তমান নীতিনির্ধারকরা সেসব প্রকল্পের চুক্তি নতুন করে খতিয়ে দেখতে পারেন। 

 

সার্বিকভাবে বাংলাদেশ ইস্যুতে প্রতিবেশী দেশটিকে তাদের কৌশল বদলাতে হবে। তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে নাকি ভিন্ন কোনো কৌশল নেবে তা সময়ই বলে দেবে। দুপক্ষের সম্পর্ক ছিন্ন হবে না। কিন্তু সম্পর্ক কত মসৃণ হবে তা নির্ভর করছে দিল্লির ওপর। আগামী ডিসেম্বরে দুপক্ষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে বলে বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলে দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়টি আরও খোলাসা হবে। এরই মধ্যে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার জানিয়েছেন, তারা নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় ভুগছেন। সামনে এর উন্নতি হবে।

 

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা গত বুধবার বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল, ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, সেখানে উভয় দেশের জনগণই প্রধান অংশীদার।

 

আন্তর্জাতিক বিষয়ের বিশ্লেষক এবং সাবেক অধ্যাপক ড. ইতমিয়াজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহুমাত্রিক সম্পর্ক বিদ্যমান। পাশাপাশি ভারত আমাদের ঐতিহাসিক বন্ধুও বটে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ একাধিক খাতে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। আপাতত এ সম্পর্কে এক ধরনের অস্বস্তি চললেও তা সামনে কেটে যাবে। তবে সময় লাগবে। কেউ কাউকে বাদ দিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে না। তবে ভারতের দুর্বলতা হচ্ছে তারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করে একটি দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে। এখন পরিবর্তিত সময়ে ভারত যত তাড়াতাড়ি তাদের দুর্বলতা সংশোধন করতে পারবে তত তাড়াতাড়ি সম্পর্কের উন্নতি হবে।

 

সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ-ভারত উভয়েই উভয়ের ওপর নির্ভরশীল। দুদেশের সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে। দুদেশের মধ্যে সীমান্ত হত্যাসহ একাধিক ইস্যুতে বিতর্ক হয়। কিন্তু সম্পর্ক থেমে থাকে না। থেমে নেই ব্যবসা-বাণিজ্যও।

 

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল হক বলেন, বল এখন ভারতের কোর্টে। দুদেশের সম্পর্ক কোনদিকে যাবে তা দিল্লির ওপর নির্ভর করছে। ভারত সম্পর্ক ভালো না করলে তাদেরই ক্ষতি হবে। কেননা ভারত তার নিজের রাজ্য সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশকে ঋণ দিয়ে সে অর্থে তাদের রাজ্য সুরক্ষার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এখন যদি ভারত ভালো সম্পর্ক না গড়ে তবে তাদের সেসব প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশের জন্য সহসা পর্যটক ভিসা চালু করছে না ভারত