ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:২৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে দাতা সংস্থাগুলো
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:২৮ এএম
![বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে দাতা সংস্থাগুলো](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/12/21/20241221092835_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এডিবির মতো দাতা সংস্থাগুলো এখন বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে। সংস্থাগুলো নতুন করে বাংলাদেশের জন্য ঋণ অনুমদোন দিচ্ছে। যেমন বিশ্ব ব্যাংক তিন প্রকল্পে ১১৬ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বৃহস্পতিবার। তার ঠিক দুই দিন আগে বাংলাদেশকে আরও এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়ার কথা জানায় আইএমএফ। একই দিন ৬০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেয় এডিবি।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দাতা সংস্থাগুলোর এভাবে বাংলাদেশের দিকে নজর দেওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো খবর। কারণ এসব ঋণে যেমন দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে, তেমনি রিজার্ভ সংকট দূর করতেও সহায়ক হবে। জানা যায়, বাংলাদেশের জন্য ৩ প্রকল্পে ১১৬ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, পানি ও স্যানিটেশনসেবার উন্নতি এবং সবুজায়ন ও জলবায়ুসহনশীলতা উন্নয়নে এই সহায়তা দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে গত বৃহস্পতিবার (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময়) ইস্যু করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বিবৃতিতে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বড় দূষণ-চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও রয়েছে দেশটি। এর ফলে প্রতিটি খাতে জলবায়ু সহনশীলতা উন্নত করা ও দূষণের দুর্যোগ মোকাবিলা করা গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, নতুন এই অর্থায়ন বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশনের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো উন্নত করবে। এর মাধ্যমে পরিষ্কার, জলবায়ু সহনশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপিত হবে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, ১১৬ কোটি ডলারের মধ্যে সবুজায়ন ও জলবায়ু সহনশীলতা উন্নয়নে ৫০ কোটি ডলার অর্থায়ন করা হবে। সেকেন্ড বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট ক্রেডিটের মাধ্যমে এই অর্থায়ন স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে সবুজায়ন ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপক হস্তক্ষেপের জন্য জনসাধারণের পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে উন্নতির জন্য নীতিসংস্কারকে সমর্থন করবে। এ ছাড়া ৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের ‘স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং জনসংখ্যা সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবায় জনগণের প্রাপ্যতা উন্নত করার পাশাপাশি সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এটি প্রায় ৫১ লাখ মানুষকে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা দেবে।
এই কর্মসূচি জনস্বাস্থ্য সুবিধায় স্বাভাবিক প্রসব ও সিজারিয়ান সেকশন ডেলিভারি-সব ক্ষেত্রেই জন্মের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে মা ও নবজাতকের মৃত্যুহার কমাতে সাহায্য করবে। ২৮ কোটি ডলারের ‘চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’-এর মাধ্যমে চট্টগ্রামের ১০ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হবে। প্রায় ২ লাখ নতুন পরিবারের পানির সংযোগ তৈরির পাশাপাশি নিম্ন আয়ের প্রায় ১ লাখ মানুষকে উন্নত স্যানিটেশনসেবা দেবে প্রকল্পটি। এটি ২০৩৫ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষকে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনসেবা প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক উদ্যোগ বা কর্মসূচির একটি অংশ।
আরও ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে আইএমএফ
এর আগে গত দাতা সংস্থা আইএমএফও বাংলাদেশকে আরও এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। চলমান ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের সঙ্গে নতুন করে এই ১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার ইঙ্গিত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলারের জন্য কিছু নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছে সংস্থাটি। নতুন ঋণ ছাড়ের জন্য বাড়তি ৬ মাস সময় চেয়েছে আইএমএফ।
সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে দর কষাকষির পর ২০২৬ সালের পরবর্তী ছয় মাসে নতুন ঋণ দিতে সায় দিয়েছে আইএমএফ। তবে অর্থ উপদেষ্টার নতুন করে চাওয়া ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বিষয়ে আইএমএফ আপাতত আগ্রহ দেখায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, গত ৫ আগস্ট সরকার বদলের পরেই অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আইএমএফের কাছে নতুন করে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণের প্রস্তাব দেন। এই ঋণ নিয়ে আইএমফের ঢাকায় সফররত মিশনের সঙ্গে কথা হয়। তারা চলমান ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের বাইরে নতুন করে ঋণে আগ্রহ দেখায়নি। তবে আইএমএফ প্রাথমিকভাবে এক বিলিয়নের একটি বিকল্প প্রস্তাব দেয়। এতে তারা চলমান ঋণের কিস্তি শেষ হওয়ার পরে বাড়তি ৬ মাস সময় চায়।
বাংলাদেশকে ৬০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি
অপরদিকে বাংলাদেশকে ৬০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। সংস্থাটির দেওয়া এ অর্থ দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলোর ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নীতকরণ এবং বাণিজ্য নীতি ও লজিস্টিক শক্তিশালী করা হবে।
গত বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) স্ট্রেনদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স প্রোগ্রামের আওতায় এ ঋণ চুক্তি হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী ও এডিবির পক্ষে অফিসার্স ইনচার্জ জিংবো নিং এ ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
ঋণ চুক্তি অনুযায়ী এ কর্মসূচির পূর্বশর্তগুলো ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতর, পরিকল্পনা কমিশনের আওতাধীন কার্যক্রম বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে। এ কর্মসূচির নীতি সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ এবং বেসরকারি খাতের উন্নয়নে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদারকরণ।
![বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে দাতা সংস্থাগুলো](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)