ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:২৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশের সামনে তিন নতুন চ্যালেঞ্জ দেখেছেন বিশ্বব্যাংক
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:২৭ এএম
![বাংলাদেশের সামনে তিন নতুন চ্যালেঞ্জ দেখেছেন বিশ্বব্যাংক](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/10/16/20241016102734_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
বাংলাদেশে উন্নয়নের পথে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক খাতের নাজুকতার পাশাপাশি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে এখনো বড় বাধা মনে করে বিশ্বব্যাংক।
এসব চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশে অর্থনীতির উপর গতি ধীর করে দিতে পারে, যা ডেকে আনতে পারে মন্দা। এজন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো এক বছর চাপে থাকবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন কমে ৪ শতাংশ হবে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে।
বিশ্বব্যাংকের এই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত জানিয়েছেন দেশের বিশেষজ্ঞরাও। তাদের মতে, বিশ্বব্যাংক যে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেছে, তাতে দ্বিমতের কোনো কারণ নেই। বিশ্বব্যাংকের চিহ্নিত দুর্বলতার বাইরেও আরো কিছু দুর্বলতা রয়েছে। প্রবৃদ্ধি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে যে রোডম্যাপ দরকার- সেটা দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করেন তারা।
গত দুবছর ধরে আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি গড়ে ১০ শতাংশের কাছাকাছি অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক স্তরে নামিয়ে আনতে পারিনি। এমনকি সঠিকভাবে এড্রেস করতেও সক্ষম হইনি। বিশ্বব্যাংক অর্থনীতির যে চাপের কথা বলছে এর বাইরেও কিছু চাপ রয়েছে। আমাদের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ- দুই খাতেই স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে।
বিশ্বব্যাংকের ত্রক প্রতিবেদনে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এ মুহূর্তে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বহিস্থ খাতের চাপ, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এসব কারণে প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বাড়বে না। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেননা, এখনো ৮৪ দশমিক ৯ শতাংশ কর্মসংস্থান অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্ব ব্যাংকের কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করেন। এতে ওয়াশিংটন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ধ্রæব শর্মা, অর্থনীতিবিদ নাজমুস খান ও বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে থাকবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, মধ্যবর্তী পয়েন্ট হবে ৪ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংক এপ্রিলে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। চলমান অর্থবছরের বাজেটে সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সেই হিসাবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সরকারি লক্ষ্যের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম হবে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী কমে গেলে তা হবে কোভিড মহামারির পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরের পূর্বাভাস কমানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনও কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়েছে। গত অর্থবছরের জন্য সরকারের সাময়িক প্রাক্কলন ছিল ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কর্মের বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে গ্যাপ রয়েছে। সেটি একটি বড় সমস্যা। এক্ষেত্রে রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষার মান বাড়াতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেশকে একটি শক্তিশালী, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে ফিরিয়ে আনার সহায়তার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জরুরি এবং সাহসী সংস্কারগুলো তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৬ এবং ২০২২ এর মধ্যে সামগ্রিক বেকারত্বের হার হ্রাস হওয়া সত্ত্বেও, তরুণরা বিশেষ করে শহরাঞ্চলে উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ বেকারত্বের সম্মুখীন। শহুরে শিক্ষিত যুবকদের জন্য কাজের প্রাপ্যতা হ্রাস পেয়েছে এবং তৈরি পোশাক খাতের মতো বড় শিল্পে কর্মসংস্থান স্থবির হয়ে পড়েছে। ২০১৬ সাল থেকে, ঢাকায় বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও তিনটি বিভাগ-চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং সিলেটে উল্লেখযোগ্য প্রকৃত কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, সামপ্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেনি। অথচ প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ শ্রম বাজারে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে শিক্ষিত ও শহুরে বেকার বেড়ে যাওয়া একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তিনি আরো বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জন্য অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। নানা উদ্যোগ নিয়েও এটি কমানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি অনেক।
বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আর্থিক বছর ’২৩-তে ৮৫ দশমিক ২ শতাংশের তুলনায় ’২৪-এ ৮০ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। আমদানিতে সংকোচন এবং শক্তিশালী রেমিট্যান্সের কারণে আর্থিক বছর ’২৪-এ চলতি অ্যাকাউন্টের ঘাটতি ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে সংকুচিত হয়েছে। প্রতিবন্ধকতার কারণে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে কিন্তু পুনরুদ্ধার হয়েছে। পেমেন্ট ঘাটতির ভারসাম্যও উন্নত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট এবং প্রতিবেদনের সহলেখক ধ্রুব শর্মা বলেন, বৈশ্বিক অবস্থার উন্নতি হলে এবং বিনিময় হারের নমনীয়তা বাড়লে বাহ্যিক খাতের ওপর আর্থিক বছর ’২৫ তে চাপ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
![বাংলাদেশের সামনে তিন নতুন চ্যালেঞ্জ দেখেছেন বিশ্বব্যাংক](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)