ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৩:২৪:১৭ পিএম

বাজেটের মৌলিক কাঠামোয় পরিবর্তন জরুরি

৩০ মে, ২০২৪ | ৮:২৩ এএম

বাজেটের মৌলিক কাঠামোয় পরিবর্তন জরুরি

দেশে বিরাজমান ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে ভাতাসহ দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য থাকা নানা সামাজিক সুরক্ষা মোটেও যথেষ্ট নয়। বাজেট আসে বাজেট যায়, কিন্তু বাজেটের মৌলিক কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন হয় না। বাজেটের মৌলিক কাঠামোতে পরিবর্তন জরুরি।

গতকাল জনবাজেট সংসদের আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এ মত দিয়েছেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অক্সফাম ও গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে এ জনবাজেট সংসদে মোট দুটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সহআয়োজক হিসেবে ছিল সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস), পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যাকশন অ্যান্ড নেটওয়ার্ক (প্রাণ) ও দ্য আর্থ।


বক্তারা আলোচনায় করমুক্ত আয়সীমা ন্যূনতম ৬ লাখ টাকা এবং অতিদরিদ্রদের জন্য দৈনিক ৫০০ টাকা হারে বছরে ন্যূনতম ১০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করারও জোর দাবি জানিয়েছেন।

উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, দিনাজপুরে পচনশীল ফসলের জন্য হিমাগার নির্মাণ, অটোরাইস মিলে বড় সমস্যা বয়লার পরিদর্শন কর্মকর্তা বৃদ্ধি এবং সুনামগঞ্জে হাওর এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবও আসে।

বক্তারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের সব মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তন, ন্যাশনাল ডাটাবেজ বানানোর কথাও বলেন। সরকার সবাইকে পেনশনে আনার যে লক্ষ্যমাত্রার কথা বলেছে, তাকে সত্যিকার অর্থে সর্বজনীন করতে হলে নিম্নআয়ের যাদের প্রিমিয়াম দেয়ার সামর্থ্য নেই, তাদের হয়ে সরকারই যেন তা দিয়ে দেয়, সেই দাবিও এদিনের প্রথম অধিবেশনে উঠে এসেছে।

প্রথম অধিবেশনের শিরোনাম ছিল মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক চাপ মোকাবেলায় জনপ্রস্তাবনা। এ অধিবেশনে অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ বলেন, ‘বাজেট আসে বাজেট যায়, কিন্তু বাজেটের মৌলিক কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন হয় না। গত দুই-তিন বছর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ১২ শতাংশ হারে বাড়ছে, তার মানে যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনেন তাদের প্রত্যেকের আয় ২০-২৪ শতাংশ হারে কমে গেছে। তাহলে আমাদের বাজেটে আমরা হিমশিম খাচ্ছি, সবাই কম-বেশি।’

জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক সংসদ সদস্য ড. শামিম হায়দার পাটওয়ারী বলেন, ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা আমলা ও ব্যবসায়ীমুখী না করে জনস্বার্থমূলক করা দরকার। ভুল জ্বালানি নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি ভয়াবহ চাপে পড়েছে।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নীতিগত দুর্বলতার কারণে বৈষম্য কমছে না, সম্পদেরও সুষম বণ্টন হচ্ছে না। রাজস্ব আয় না হওয়ার মূল কারণ করফাঁকি। কোটি টাকা আয় করা লোকও করজালের বাইরে। সম্পদে কর আরোপ করার সময় এসেছে।’

মূল প্রবন্ধে মো. শহীদুল্লাহ আসন্ন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা দ্বিগুণ করা এবং পেনশন ও সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেন। আর অ্যাকশনএইডের প্রতিনিধি মৌসুমি বিশ্বাস জেন্ডার বাজেটের প্রক্রিয়াগত সংস্কার ও জবাবদিহির সংস্কৃতি তৈরির প্রস্তাব রাখেন।

প্রথম অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ইঞ্জিনিয়ার দেবরাজ দে। তিনি অংশগ্রহণমূলক বাজেটের প্রয়োজনীয়তা এবং সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিতে তার সংস্থার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। সঞ্চালক ছিলেন গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের (ডিবিএম) নির্বাহী কমিটির সদস্য জাকিয়া শিশির এবং ডিবিএমের সহসভাপতি এআর আমান। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ডিবিএমের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা।

দ্বিতীয় অধিবেশনের শিরোনাম ছিল ইনভেস্টিং ইন গ্রিন ইকোনমি, জাস্ট ট্রানজেশন অ্যান্ড ইয়ুথ ডিভিডেন্ড। এ অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান, অক্সফাম বাংলাদেশের রুবাইয়া নাসরিন সেঁজুতি এবং দ্য আর্থের মোসলেহ উদ্দিন সূচক।

বাজেটের মৌলিক কাঠামোয় পরিবর্তন জরুরি