ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বাণিজ্যের পথ মসৃণ হচ্ছে
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭:৩০ পিএম
![বাণিজ্যের পথ মসৃণ হচ্ছে](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/12/11/20241211144732_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক এখন টানাপড়েনের মধ্যে যাচ্ছে। এর শুরু গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর থেকেই টানাপড়েন একেবারে তুঙ্গে ওঠে। তবে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা সম্পর্ক উষ্ণ করার জন্য বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় পণ্য বয়কটের প্রচার ছুঁয়েছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকেও। আবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বেশকিছু ঘটনাকে ভারতীয় পত্রিকায় অতিরঞ্জিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে দ্রুত শীতলতার পথে নিয়ে যেতে সহায়ক হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে তা বজায় রাখতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ঘাটতি যাই থাকুক না কেন, এ ক্ষেত্রে একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ইচ্ছে রয়েছে উভয় পক্ষেরই।
গত সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিস্ত্রি ঢাকা সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক হয় তার। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব টানাপড়েনে থাকা দুই দেশের সম্পর্ককে একটি উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আস্তে আস্তে উন্নত পর্যায়ে যাবে বলে আশা করছি। মূলত বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক স্বার্থেই দুই দেশের মধ্যে এ সম্পর্ক বজায় রাখা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
দেশের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি প্রাণ আরএফএল চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী জানান, আমার অনেক ব্যবসা রয়েছে ভারতের সঙ্গে। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য ভারতে কোনো কোনো অঞ্চলে রফতানি হয়ে থাকে। সম্প্রতি সম্পর্কে টানাপড়েনের ফলে বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ টানাপড়েন সম্পর্ককে ইতিবাচকের দিকে নিয়ে যাবে।
এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জানান, তুলা উৎপাদনে ভারত এখনও অন্য দেশের তুলনায় বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ কারণে অন্য দেশের তুলনায় কম মূল্যে ভারত থেকে তুলা আমদানি করা হয়। চীনের তুলার মূল্য ভারতের তুলনায় অনেক বেশি।
এদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের শীতল সম্পর্কের কারণে ভারত বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে খোদ ভারতের মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষ করে কলকাতার বাজারে এখন ক্রেতা নেই। সেখানকার অনেক ব্যবসায়ীর পথে বসার উপক্রম হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশিদের কোনো ধরনের চিকিৎসা করবে না বলে যারা হুংকার দিয়েছিলেন তাদের কণ্ঠও নিচু হয়ে এসেছে। সেখানকার চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশিদের চিকিৎসা দেওয়া বয়কটের ঘোষণার বিরোধিতা করেছে। অর্থাৎ ভারতও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তাদের বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, গত এক দশকে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানি তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের মোট আমদানির ১৮ শতাংশের বেশি আসে ভারত থেকে। বাংলাদেশের আমদানি করা ভারতীয় পণ্যের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে তুলা। মোট আমদানি ব্যয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চলে যায় বস্ত্র খাতের এ কাঁচামাল আমদানিতে। এরপর রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। এ ছাড়াও রয়েছে রেলের বগি, ইঞ্জিনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি।
তবে আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে। প্রথম দিকে বাংলাদেশ ভারত থেকে মূলত পেঁয়াজ, কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যই আমদানি করত। ভারত থেকে বাংলাদেশ যা আমদানি করে তার বড় অংশ রফতানি খাতে কাঁচামাল হিসেবে বা যন্ত্রপাতি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য বাংলাদেশ। দেশটির পণ্য সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ডস, চীন, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে পণ্য রফতানি হয়েছে ১২৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের পণ্য। আবার বাংলাদেশে রফতানি আগস্ট মাসে ২৮ শতাংশ কমে গেছে। এ মাসে বাংলাদেশ ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। গত বছরের আগস্টে এর পরিমাণ ছিল ৯৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ মাসে রফতানি কম হওয়া বিষয়ে খোদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হচ্ছে, বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘর্ষ ও বিক্ষোভের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আরও গভীর হয়। ফলে রফতানি কমে গেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য খুব বেশি নয়। তবে গত অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশে মোট রফতানি ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান নতুন কিছু নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের প্রচার দেখা গেছে। তবে সম্প্রতি ভারতের পণ্য বর্জনকে সমর্থন জানিয়ে বিএনপির রহুল কবির রিজভী বলেছেন, একটি আওয়াজ আজ সব মহলে সমাদৃত। আর তা হলো, ভারতীয় পণ্য বর্জন। এ দেশের মানুষ দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, অপমান, লাঞ্ছনা ও ক্ষোভ থেকে এটি করছেন। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিতে পারে। এটি এখন সব মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতকে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক দিকগুলো বিশেষ বিবেচনায় নিতে হবে। সে বার্তা ভারতের পররাষ্ট্রসচিব পেয়ে গেছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপড়েনের মধ্যে ভারতের বিকল্প হিসেবে পাকিস্তান থেকে বেশকিছু পণ্য আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ কয়েক দশক পর পাকিস্তান থেকে ২৫ হাজার টন চিনি কিনছে বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি অন্য দেশ থেকে আলু ও পেঁয়াজ কেনার পরিকল্পনা নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ভারতও বড় একটি বাজার হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আর আলু রফতানিকারক বৃহত্তম দেশ ভারত। এসব প্রেক্ষাপটকে ঘিরে ভারত চাইছে সম্পর্কের ইতিবাচক মোড়। সে ইঙ্গিতই দিয়েছেন সম্প্রতি ঢাকা সফরে আসা ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রি।
![বাণিজ্যের পথ মসৃণ হচ্ছে](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)