ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৯:১৫:১৪ পিএম

বাতিল হচ্ছে রিটার্ন অ্যাসেসমেন্ট প্রথা, হয়রানি কমবে করদাতাদের

৭ মে, ২০২৪ | ৯:৪৩ এএম

বাতিল হচ্ছে রিটার্ন অ্যাসেসমেন্ট প্রথা, হয়রানি কমবে করদাতাদের

প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কর-জিডিপি অনুপাতে পিছিয়ে বাংলাদেশ। অর্থপাচার, কর ফাঁকি ও অবৈধ পুঁজিপ্রবাহ, কর আহরণে সনাতনী পদ্ধতি, করদাতাদের আস্থার সংকট এবং করছাড় নীতির কারণেই দেশে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণ হচ্ছে না। আর জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আহরণও হতাশাজনক। তাই রাজস্ব বাড়াতে করদাতাদের হয়রানি কমাতে বিশেষ উদ্যাগ নিচ্ছে এনবিআর। আর জিডিপির অনুপাতে করের অংশ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।

 

জানা গেছে, গত এক দশকে কর-জিডিপি অনুপাত না বেড়ে উল্টো কমেছে। ২০২৩ সালে জিডিপির অনুপাতে করের অংশ দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। আর ২০২২ সালের কর-জিডিপি অনুপাতে বাংলাদেশে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা ভারতে ছিল ১৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

 

এমন পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিসহ করদাতাদের হয়রানি কমাতে নতুন উদ্যোগ

নিচ্ছে এনবিআর। আগামী বাজেটে ব্যক্তি ও কোম্পানি সব শ্রেণির করদাতাকে স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে হবে। এ পদ্ধতিতে রিটার্ন অ্যাসেসমেন্ট করা হয় না। বর্তমানে ব্যক্তি করদাতাদের স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে হয়। অন্যদিকে কোম্পানি করদাতারা স্বনির্ধারণী ও সাধারণ- দুই নিয়মেই রিটার্ন জমা দিতে পারেন। সাধারণ নিয়মে জমা দেওয়া রিটার্ন অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে চূড়ান্ত কর আদায় করা হয়। আর স্বনির্ধারণী পদ্ধতির রিটার্ন অডিট করা হয়।

 

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, অ্যাসেসমেন্ট প্রথা বাতিল হলে কমপ্লায়েন্ট করদাতাদের হয়রানি কমবে। তবে এক্ষেত্রে রাজস্ব ঝুঁকির প্রবণতাও তৈরি হবে। যেমন অডিটে না পড়লে অস্বচ্ছ কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমাফিক রিটার্ন জমা দিয়ে পার পেতে পারে। অর্থাৎ আইনের মধ্য থেকে কোম্পানি কর ফাঁকির সুযোগ পাবে।

 

 

অন্যদিকে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। বর্তমানে বছরে যাদের সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয়, তাদের ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। এটিকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে।

 

জানা গেছে, বর্তমানে দেশে এক কোটির বেশি টিআইএন-ধারী আছেন। তাদের মধ্যে ৪০ লাখ টিআইএন-ধারী আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী এখন ৪৪ ধরনের সেবা পেতে আয়কর রিটার্ন স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে রিটার্ন জমা দেওয়ার সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশে করদাতার সংখ্যা অনেক থাকলেও কম সংখ্যক লোক আয়কর দিয়ে থাকেন। এ জন্য তারা করজাল বিস্তারের পরামর্শ দিয়েছেন।

 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট- পিআরআইর এক গবেষণয় বলা হয়েছে, আয়করযোগ্য হলেও অনেকেই নিয়মিত কর দেন না। ব্যক্তিপর্যায় থেকে রাজস্ব আদায় বছরে আরও ৬৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

 

এ বিষয়ে পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কর আদায় ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় করাসহ রাজস্ব খাতের মৌলিক সংস্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। ব্রিটিশ আমলের ব্যবস্থাপনা দিয়ে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আয় কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

বাতিল হচ্ছে রিটার্ন অ্যাসেসমেন্ট প্রথা, হয়রানি কমবে করদাতাদের