ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৯:১২:১৪ পিএম

বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে লোকসান ঠেকানোর উদ্যোগ

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:৪১ এএম

বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে লোকসান ঠেকানোর উদ্যোগ

ছবি: সংগ্রহ

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে লোকসানের বোঝা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিশেষত, উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কম দামে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করায় এই সমস্যা প্রকট হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী ভর্তুকি কমানোর লক্ষ্য থাকলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নিতে রাজি নয়। ফলে অভ্যন্তরীণ ব্যয় সংকোচন এবং সিস্টেম লস কমানোর মাধ্যমে ক্ষতি মোকাবিলার চেষ্টা চলছে।


বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর মতে, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ এখন ১১ টাকার বেশি, কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য এর তুলনায় অনেক কম।


২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে পাইকারি বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ১৭ পয়সা। পরে তিন দফায় বেড়ে ৭ টাকা ৪ পয়সা হয়, যা উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম।


প্রয়োজন বিবেচনা না করেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং জ্বালানি ঘাটতি থাকায় অনেক কেন্দ্র উৎপাদন না করলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে।


বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি নির্ভর জ্বালানির খরচ বেড়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো একের পর এক লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছে।


২০২১-২২ অর্থবছরে মুনাফা ছিল ১৬৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এটি ৬৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা লোকসানে রূপান্তরিত হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লোকসান কমে ৩০২ কোটি ৯৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।


২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা লাভ করে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৫৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা লোকসান হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে ৫১৮ কোটি ৪ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।


২০২১-২২ অর্থবছরে লোকসান ছিল ৫২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ২,৪৯২ কোটি ৪১ লাখ টাকা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই লোকসান আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৭২৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা।


লোকসান কমাতে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিতরণ কোম্পানিগুলো সিস্টেম লস কমানো ও অভ্যন্তরীণ ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগ নিয়েছে।


ডিপিডিসি সিস্টেম লস কমিয়ে এবং অপারেশনাল খরচ সংকোচন করে লোকসান অর্ধেকে নামিয়েছে। সাধারণ গ্রাহকদের ওপর চাপ না দিয়ে নির্দিষ্ট শ্রেণির গ্রাহকের জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।


আইএমএফের শর্ত ছিল ভর্তুকি কমিয়ে তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে লোকসানমুক্ত করা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারণ তা জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

 

পিডিবি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম জানান, দাম না বাড়িয়ে লোকসানমুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। তবে সরকারের নির্দেশনা পেলে নির্দিষ্ট শ্রেণির ট্যারিফ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা যেতে পারে।


লোকসানের এই ধারা থেকে বের হতে বিদ্যুৎ বিভাগের উচিত ট্যারিফ কাঠামো পুনর্বিবেচনা করা এবং সিস্টেম লস আরও কমিয়ে আনা। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনায় দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে লোকসান ঠেকানোর উদ্যোগ