ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১:১১ এএম
অনলাইন সংস্করণ
বিদ্যুৎ-গ্যাস-সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ আইএমএফ’র
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১:১১ এএম
![বিদ্যুৎ-গ্যাস-সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ আইএমএফ’র](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/04/26/20240426105439_original_webp.webp)
বাজেট ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে অন্যান্য খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) অর্থবিভাগের বাজেট অনুবিভাগের সঙ্গে ভর্তুকি নিয়ে বৈঠক করে এ সুপারিশ করেছে ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে আসা আইএমএফ মিশন।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে আসা আইএমএফ মিশন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তাও জানতে চেয়েছে। এছাড়া লক্ষ্যভিত্তিক খেলাপিঋণ কমানো বিশেষ করে সরকারি মালিকানার ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ কমিয়ে আনা এবং প্রক্রিয়াধীন থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত আইনগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থবিভাগের বাজেট অনুবিভাগের সঙ্গে ভর্তুকি নিয়ে বৈঠক করে মিশনের একটি অংশ, ভর্তুকি কমিয়ে আনেত পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য একটি পর্যায়ক্রমিক সূত্র-ভিত্তিক মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সরকারকে স্বাগত জানায়।
তবে সার্বিক বাজেট ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে অন্যান্য খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আপাতত কৃষিতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিয়ে যাবে সরকার। তবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি কমাতে পর্যায়ক্রমে এসবের দাম বাড়ানো হবে।
আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট মাইক্রোইকোমিক্স ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউ–এর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে।
বৈঠকে সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। এ সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারাসহ সোনালী ব্যাংকের এমডি মো. আফজাল করিমসহ জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের এমডিরাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরকার যে ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে মিশন। তবে একীভূতকরণের পর ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা যেন খারাপ না হয়ে যায় এ সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তাড়াহুড়া না করে আন্তর্জাকিত মানদণ্ড মেনে একীভূকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করার ওপর তাগিদ দিয়েছেন প্রতিনিধিদলের কর্মকর্তারা। এছাড়া ঋণখেলাপিদের বিষয়ে বিশেষ করে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চেয়েছে মিশন।
এ প্রেক্ষিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জানিয়েছে এরই মধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সজ্ঞায়িত করে শাস্তির বিধান করা হয়েছে। এ আইনের ভিত্তিতে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে উচ্চ খেলাপিঋণ কমিয়ে আনা, মূলধন ঘাটতি, তারল্য সংকটের সমাধান এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এরই মধ্যে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে, আগামীতে তা আরও জোরদার করে খেলাপিঋণ কমানোসহ আর্থিক খাতের উন্নয়ন করা হবে। একই সঙ্গে বৈঠকে খেলাপিঋণসহ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক চিত্র, ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট, ব্যাংকগুলোকে দেওয়া পুনর্মূলধন এবং ব্যাংক তথা আর্থিক খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত আইন প্রণয়নের হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
]
আইএমএফের স্টাফ মিশনের কাছে গত অক্টোবরে জুন ভিত্তিক ছয় ব্যাংকের যে চিত্র তুলে ধরেছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, ছয় মাসের ব্যবধানে অনেক ক্ষেত্রে তা আরও খারাপ হয়েছে। যেমন ছয় মাস আগে বেসিক ব্যাংকে খেলাপিঋণের হার ছিল ৬২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৬৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অগ্রণীর ২৪ থেকে বেড়ে ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ, বিডিবিএলের ৪২ থেকে বেড়ে ৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের এই হার অবশ্য ১৪ দশমিক ৯৩ থেকে সামান্য কমে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ হয়েছে। একইভাবে রূপালীর ১৯ থেকে কমে ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং জনতার ৩৩ থেকে কমে ১৯ দশশিক ২০ শতাংশ হয়েছে।
আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির আওতায় আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের খেলাপিঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকে পাঁচ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামানোর লক্ষ্য রয়েছে।
এদিকে সংসদে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন এবং ফিন্যান্স কোম্পানি আইন পাস হয়েছে এবং আইএমএফের সুপারিশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইনগুলো এরই মধ্যে কার্যকর শুরু হয়েছে। তবে আর্থিক খাত সংক্রান্ত আরও তিনটি আইন প্রণয়ন ও সংশোধনের শর্ত রয়েছে, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে বাস্তাবয়নের তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ।
অর্থ বিভাগের সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত শাখার সঙ্গেও বৈঠক করে সফররত মিশন। এতে বাড়তি মূল্যস্ফীতির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে যেসব লক্ষ্যভিত্তিক দরিদ্র জণগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে আসা উচিত তাদের আওতায় এনে এর সম্প্রাসরণের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নানান অনিয়মের কারণে বিদ্যামান উপকারভোগীরাও সঠিভাবে ভাতা পান না- এ বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে মিশনকে জানানো হয় যে, আগামী বাজেটে এ কর্মসূচির আওতায় কয়েকটি কর্মসূচিতে আরও অন্তত সাড় পাঁচ লাখ নতুন ভাতাভোগী অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আগামী বাজেট অনেকটা সংকোচনমূলক হবে তাই ভাতার হার বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়া উপকারভোগী যেন সঠিকভাবে নগদ অর্থ পান তা নিশ্চিত করতে গত ১ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উদ্দেশে বলা হয়, সরকারের নগদ আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তিতে স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহি নিশ্চিতে নতুন করে চালু করা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির নগদ আর্থিক সুবিধা উপকারভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দিতে হবে। বিদ্যমান উপকারভোগীদের ক্ষেত্রে আগামী ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে অনেক কর্মসূচির ভাতা এমএফএসের মাধ্যমে দেওয়া হলেও অনেক সময় উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা হয় না। তাই টাকার অপব্যবহার হওয়া আশঙ্কা থাকে। তবে কোনো উপকারভোগীর আঙুলের ছাপ নেওয়া না গেলে বা তার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে এ নিয়ম শিথিল করা হতে পারে।
![বিদ্যুৎ-গ্যাস-সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ আইএমএফ’র](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)