ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:২৭:৩০ পিএম

বিনিয়োগ আস্থায় কয়েক ধাপ এগিয়ে যুক্তরাজ্য

২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৯:০ পিএম

বিনিয়োগ আস্থায় কয়েক ধাপ এগিয়ে যুক্তরাজ্য

ছবি: সংগ্রহ

আগের বছর শীর্ষে থাকা জার্মানি, চীন ও ভারতকে ছাপিয়ে বিনিয়োগের জন্য বিশ্বের দ্বিতীয় আকর্ষণীয় দেশ এখন যুক্তরাজ্য। প্রথম অবস্থানটি যুক্তরাষ্ট্রের। পরামর্শক সংস্থা পিডব্লিউসির বার্ষিক ইউকে সিইও জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। 


২০২৪ সালে এ তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে ছিল যুক্তরাজ্য। তবে সাম্প্রতিক পিডব্লিউসির জরিপ অনুসারে, বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা ২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরো উজ্জ্বল দেখছেন।


এ জরিপ মতে, বিশ্বের ১৪ শতাংশ সিইও মনে করেন, চলতি বছর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সবচেয়ে বড় অংশীদার হবে যুক্তরাজ্য। সিইওদের ৩০ শতাংশ ভোট নিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তৃতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে জার্মানি ১২ শতাংশ, চীন ৯ ও ভারত ৭ শতাংশ।

 

জরিপের এ ফলকে ‘যুক্তরাজ্যের প্রতি আস্থা ভোট’ হিসেবে বর্ণনা করেছে পিডব্লিউসি। ব্রিটিশ সিইওদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬১ শতাংশ) আগামী ১২ মাসে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্পর্কে আশাবাদী, যা ২০২৩ সালে ছিল ৩৯ শতাংশ।

 

যুক্তরাজ্যের ক্রমহ্রাসমান প্রবৃদ্ধি, সাম্প্রতিক বাজেট প্রভাব এবং বাড়তে থাকা ঋণ সম্পর্কে সমালোচনার মুখে পড়েছেন চ্যান্সেলর র‍্যাচেল রিভস। এমন সময় জরিপ ফল প্রকাশ হলো, যখন পাউন্ডের দরপতন ও সরকারের ঋণ নেয়ার খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।

 

প্রত্যাশার চেয়েও দুর্বল ছিল গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান। কারণ নভেম্বরে দেশটিতে মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা অর্থনীতি স্থবির হয়ে যাওয়ার ভয় আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

 

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সরকারি বন্ড গিল্টস বিক্রির ঝোঁক কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত বাণিজ্যনীতির কারণে বন্ড বিক্রির প্রবণতা আবার শুরু হতে পারে।

 

পিডব্লিউসি ইউকের সিনিয়র পার্টনার মার্কো অ্যামিত্রানো বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্যকে ব্যবসা ও বিনিয়োগের আদর্শ স্থান হিসেবে দেখানোর জন্য সিইও জরিপ আস্থা ভোটের কাজ করেছে। খুব অস্থির এ সময়ে যুক্তরাজ্যের তুলনামূলক স্থিতিশীলতা ও প্রযুক্তিসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে শক্তিমত্তাকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। তবে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাজ্যের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে হলে প্রবৃদ্ধির একটি স্পষ্ট পথ এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য ধারাবাহিক সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।’

 

দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভায় ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে র‍্যাচেল রিভস বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক জরিপ দেখাচ্ছে যে বৈশ্বিক সিইওরা ব্রিটেনকে সমর্থন দিচ্ছেন এবং যুক্তরাজ্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্যের একটি। এ বিনিয়োগই যুক্তরাজ্যজুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করবে।’

 

র‍্যাচেল রিভস ঘোষিত বাজেট মজুরি ব্যয় বাড়িয়ে দেবে এবং নিয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে উদ্বেগ রয়েছে। তবে জরিপটি বলছে, ২০২৩ সালের ৪৮ শতাংশের তুলনায় এ বছর ৫৩ শতাংশ ব্রিটিশ সিইও তাদের কর্মী বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। অবশ্য দীর্ঘমেয়াদে সিইওদের আত্মবিশ্বাস কিছুটা কমেছে। ২০২৩ সালে ৬১ শতাংশের তুলনায় এ বছর ৫৭ শতাংশ ব্রিটিশ সিইও তাদের প্রতিষ্ঠানের তিন বছরের সম্ভাবনা সম্পর্কে খুবই ইতিবাচক।

 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গ্রহণে নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ী নেতারা। সেখানে ৯৩ শতাংশ সিইও জানিয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান কোনো না কোনোভাবে প্রযুক্তিটি গ্রহণ করেছে। এর পরিমাণ ২০২৩ সালের ৪২ শতাংশের দ্বিগুণ এবং বৈশ্বিক হার ৮৩ শতাংশের চেয়ে বেশি।

 

তবে ৩৬ শতাংশ ব্রিটিশ সিইও মনে করেন, এআই আগামী বছর তাদের মুনাফা বাড়াবে। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক আস্থার হার ৪৯ শতাংশ। গত ১২ মাসে শুধু ১৪ শতাংশ ব্রিটিশ সিইও এআই থেকে মুনাফা বাড়তে দেখেছেন।

 

জরিপে আরো দেখা গেছে, প্রতিযোগিতায় শক্তভাবে টিকে থাকতে ৯৮ শতাংশ ব্রিটিশ সিইও তাদের ব্যবসার মডেলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছেন।

 

পিডব্লিউসি ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ১০৯টি দেশ ও অঞ্চলের ৪ হাজার ৭০১ সিইওর ওপর জরিপটি পরিচালনা করেছে।

 

বিনিয়োগ আস্থায় কয়েক ধাপ এগিয়ে যুক্তরাজ্য