ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১:০১:০৬ পিএম

বেড়ায় মুড়িকাটা পেঁয়াজে উঠছে না উৎপাদন ব্যয়

৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৫৩ এএম

বেড়ায় মুড়িকাটা পেঁয়াজে উঠছে না উৎপাদন ব্যয়

ছবি: সংগ্রহ

পাবনা জেলার বেড়া উপজেলা উত্তরাঞ্চলের মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা হিসাবে সুপরিচিত। এ এলাকার পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর আগাম জাতের (মুড়িকাটা) পেঁয়াজ আবাদে কৃষকরা লাভের মুখ দেখা তো দুরের কথা, উৎপাদন খরচ উঠানোই দায় হয়ে পড়েছে।


বর্তমান বাজার মূল্যের নিম্নমুখী হওয়ার কারণে লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষকদের। এ কারণে বেশিরভাগ কৃষকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এ বছর পেঁয়াজের আবাদে প্রত্যাশিত মুনাফা তো দূরের কথা, লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং বাজারে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের প্রতি বিঘায় গড়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে।


স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয়, বাজারমূল্যের অস্থিরতা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যই এই লোকসানের প্রধান কারণ। এসব কারণে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারাতে পারেন বেড়ার কৃষকরা। কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বেড়া উপজেলার অধিকাংশ কৃষক জানিয়েছেন, জমি প্রস্তুত, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক এবং শ্রমিক খরচ মিলে এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে যা খরচ হয়েছে, তার অর্ধেক দামেও পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন না তারা।

 

বেড়া পৌর এলাকার করমজা চতুরহাটে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা সাঁথিয়া উপজেলার বায়া গ্রামের কৃষক শামছুর রহমান বলেন, এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজ বীজ প্রতি মণ ৮ হাজার ৫০০ টাকা দরে ৬ মণ পেঁয়াজ বীজ কিনে আমার এক বিঘা জমিতে লাগিয়েছিলাম। তাতে শুধু বীজ বাবদ ৫১হাজার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার সঙ্গে সার, কীটনাশক, সেচ কামলাসহ বিঘায় খরচ দাঁড়িয়েছে ৯০ থেকে ১ লাখ টাকা। আমার এক বিঘা জমিতে মোট ৪৩ মণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। আজকের বাজারে প্রতি মণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে।' কৃষক শামছুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'ব্যাংক থেকে মোট ১ লাখ টাকা ঋণ করে আমার এক বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করেছিলাম। ভেবেছিলাম পেঁয়াজ বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করব, এখন সেটাও হলো না।'


বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান জানান,

 

জমিতে বিঘাপ্রতি পেঁয়াজের ফলন হয়েছে ৪৫ মণ। বর্তমান বাজারে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তাতে প্রতি বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করে তিনি ৫৪ হাজার থেকে ৬৩ হাজার টাকা পাচ্ছেন। অর্থাৎ বিঘায় তার গড়ে লোকসান হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।

 

সরেজমিনে বেড়া পৌর এলাকার করমজা চতুরহাটের বেশ কয়েটি আড়ৎ ঘুরে দেখা যায় প্রতি মণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রকার ভেদে পাইকারি: হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চতুরহাটের আড়ৎদার মো. আলম মোল্লা জানান, আজকের হাটে প্রচুর পরিমাণ মুড়িকাটা পেঁয়াজের আমদানি হয়েছে। ব্যাপারিরা সেগুলো কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির উদ্যেশে নিয়ে যাচ্ছেন। এবছর মুড়িকাটা পেঁয়াজের ফলন ভালো হওয়ায় আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাটে দাম অনেকটাই কম।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত কবীর বলেন,

 

এ বছর বেড়া উপজেলায় ১৯৮৮ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এ বছর ফলন অত্যন্ত ভালো, তাই বাজারে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম অনেকটা কমে গেছে। তবে সরকার যদি যাথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুমে ভারত বা অন্য কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখে, তবে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক থাকবে বলে মনে করি। এছাড়াও মূলকাটা পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসাবে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেও কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।

বেড়ায় মুড়িকাটা পেঁয়াজে উঠছে না উৎপাদন ব্যয়