ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৮:২০:০০ পিএম

ব্যাংকে তারল্য সংকট: টাকা উত্তোলনে ভোগান্তিতে গ্রাহক

১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:২৯ এএম

ব্যাংকে তারল্য সংকট: টাকা উত্তোলনে ভোগান্তিতে গ্রাহক

ছবি: সংগ্রহীত

বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংক খাতে চরম তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়েও সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না এসব ব্যাংক। ফলে গ্রাহকরা তাদের আমানতের টাকা তুলতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা নতুন টাকা ছেপে সরবরাহ করা হয়েছে, বাকি সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে গ্যারান্টি হিসেবে ধার দেওয়া হয়েছে।

 

 

সরেজমিনে বেশ কয়েকটি শাখায় দেখা গেছে, জরুরি প্রয়োজনে টাকা তুলতে গিয়ে গ্রাহকরা হতাশ হচ্ছেন। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম তার অসুস্থ বাবার চিকিৎসার জন্য ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা তুলতে গিয়ে দুই মাস ধরে ব্যর্থ হচ্ছেন। এমনকি ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেও তিনি কোনো সমাধান পাননি।

 

 

অপরদিকে, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান সৈকত তার কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলতে চেয়ে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছেন। এই অবস্থায় তিনি তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

 

একজন আইনজীবী তার ডিপিএসের বিপরীতে নেওয়া ঋণ থেকে মেয়ের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত টাকা তুলতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যাংক শাখাগুলোতে দিনে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা উত্তোলনের নিয়ম চালু করায় এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।

 

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, বছরের পর বছর ধরে ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। খেলাপি ঋণ আর লুটপাটের কারণে ব্যাংকগুলো রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং অনিয়মে জড়িতদের আইনি সুরক্ষা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, "গ্রাহকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সবাই তার আমানতের টাকা পাবেন। তবে একসঙ্গে সব টাকা তোলা হলে সংকট কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। আমরা ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছি এবং অনিয়ম তদন্তে কাজ করছি।"

 

 

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে এই সংকট সবচেয়ে বেশি প্রকট। ক্ষমতাসীন সরকারের পতনের আগে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নগদ অর্থ সরবরাহ করলেও গ্রাহকদের চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে পারছে না।

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা বিতরণ করা ঋণের ১৬.৯৩ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবস্থাও নাজুক।

 

 

সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দুর্বল ব্যাংকগুলোর সহায়তায় সবল ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই সংকট সমাধানে আরও কার্যকর ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ প্রয়োজন।

ব্যাংকে তারল্য সংকট: টাকা উত্তোলনে ভোগান্তিতে গ্রাহক