ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১:৪৭:০৯ পিএম

ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ কেনার বেঞ্চমার্ক দাম নির্ধারণ করবে সরকার: জ্বালানি উপদেষ্টা

উপদেষ্টা বলেন, “অনেক চাপ সত্ত্বেও আমরা বিদ্যুতের দাম বাড়াইনি। এই মুহূর্তে দাম বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই। নিকট ভবিষ্যতেও বিদ্যুতের দাম বাড়বে না। শুধু নতুন গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম নির্ধারণের যে

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১:৩ এএম

ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ কেনার বেঞ্চমার্ক দাম নির্ধারণ করবে সরকার: জ্বালানি উপদেষ্টা

ছবি: সংগ্রহ

বিদ্যুতের ভর্তুকি নিয়ে সরকার অনেক চাপে থাকলে নিকট ভবিষ্যতে দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই জানিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, "বিদ্যুতের ভর্তুকি কমাতে সরকারের পাওয়ার পারচেজ রেট কমানোর জন্য বেঞ্চমার্ক প্রাইস নির্ধারণ করে তা কার্যকর করা হবে।"

 

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্ম মওসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে প্রস্তুতি মিটিং শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

 

বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

উপদেষ্টা বলেন, "অনেক চাপ সত্ত্বেও আমরা বিদ্যুতের দাম বাড়াইনি। এই মুহূর্তে দাম বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই। নিকট ভবিষ্যতেও বিদ্যুতের দাম বাড়বে না। শুধু নতুন গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম নির্ধারণের যে উদ্যোগ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন নিয়েছে, সেটি কার্যকর হবে।"

 

"কারণ, গ্যাস আমদানিতে সরকারের ব্যয় হয় ৭২ টাকা, শিল্পখাতে সেই গ্যাস সরবরাহ করা হয় ৩০ টাকায়। এই ব্যবধান কমানো হবে," বলেন তিনি।

 

বিদ্যুতের ট্যারিফ সমন্বয় করতে সরকার গঠিত টাস্কফোর্স দ্রুত কাজ শুরু করবে জানিয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, "বিদ্যুৎ কেনার বেঞ্চমার্ক রেট ঠিক করতে চাই। মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট তৈরি করা হয়েছে, সেখানে প্রতি ইউনিটের ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে ৮.৪০ টাকা। সকল কয়লভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এই রেট বেঞ্চমার্ক হিসেবে কাজ করবে।"

 

"অন্যান্য সকল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে আমরা বলবো, মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ৮.৪০ টাকা রেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারলে অন্যদের রেট এতো বেশি কেন? তারাও যাতে এই রেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, সেজন্য আলোচনা করা হবে," যোগ করেন উপদেষ্টা।

 

একইভাবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য একটি বেঞ্চমার্ক নির্ধারণ করে তা সকল গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান উপদেষ্টা।

 

তিনি আরও বলেন, "এছাড়া লিকুইড ফুয়েল বেজড পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর জন্যও পৃথক বেঞ্চমার্ক রেট নির্ধারণ করে তা কার্যকর করার মাধ্যমে বিদ্যুতে সরকারের ব্যয় কমানো হবে।"

 

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থাপিত পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর মধ্যে যেগুলোর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং নতুন করে চুক্তি নবায়নের করার প্রস্তাব আসছে, তার কোনোটিই নবায়ন করা হচ্ছে না বলে জানান ফাওজুল কবির। ৫ আগস্টের আগে যেসব চুক্তি নবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

গ্যাস-বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধে কত দিন লাগবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, "ভারতের আদানিসহ যেসব সরবরাহকারীর কাছ থেকে আমরা গ্যাস-বিদ্যুৎ আমদানি করি, তাদের পাওনা পরিশোধ না করলে তারা সরবরাহ করবে না। এ অবস্থায় আমরা হয়তো এখন পুরোটা পরিশোধ করবো না, তবে এই পরিমাণ বকেয়া পরিশোধ করবো, যাতে সরবরাহকারীরা গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে উৎসাহী হয়।"

 

"অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে। তাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা বলেছে, গ্যাস ও বিদ্যুৎ আমদানিজনিত বকেয়ার পাশাপাশি আইপিপিগুলোর বকেয়া যতোটা সম্ভব কমিয়ে আনা হবে। আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্ম মওসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার যোগান প্রয়োজন হবে, তা বাংলাদেশ ব্যাংক সরবরাহ করবে বলে গভর্নর আশ্বস্ত করেছেন," বলেন উপদেষ্টা।

 

গ্যাস, বিদ্যুৎ, সার ও খাদ্যপণ্য আমদানিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গেও মিটিং হওয়ার তথ্য তুলে ধরে ফাওজুল কবির খান বলেন, "এসব অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখতে যে টাকা লাগবে, অর্থ মন্ত্রণালয় তা দেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে জরুরি এসব পণ্য আমদানিতে সরকার গ্যারান্টার দেবে, এক্সচেঞ্জ রেটে ফ্লেক্সিবিলিটি (নমনীয়তা) দেবে।"

 

রমজানে লোডশেডিং হবে না

 

আসন্ন রমজানে দেশজুড়ে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে জানিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, "অন্যবছরের মতো এবার রোজার মাসে রাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ করার বিধান আরোপ করা হবে না।"

 

বুধবার বিদ্যুৎ ভবনে সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে সভা শেষে উপদেষ্টা এ তথ্য জানান।

 

তিনি বলেন, "রমজান মাসে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৫,৭০০ মেগাওয়াট। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। কোথাও টেকনিক্যাল কোনো সমস্যা দেখা না দিলে রমজান মাসে কোথাও কোনো লোডশেডিং হবে না।"

 

তিনি বলেন, "চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য রাখা হবে। রমজানে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১,২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। বর্তমানে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট।"

 

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "অন্যবছর যেভাবে রাত ৮-৯টায় মার্কেট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়, এবার রমজানে তেমন নির্দেশনা থাকবে না। তবে মার্কেটে বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে যদি রমজানে লোডশেডিং দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে বা সেচ কাজ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়– তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মার্কেট বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে।"

 

তবে রমজান শেষে এপ্রিল মাস থেকে লোডশেডিং হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, "গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১,৮০০ মেগাওয়াট। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ করা হবে ১,১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তখন ৭০০ মেগাওয়াট থেকে ১৪০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হতে পারে।"

 

"সেচে বিদ্যুতের চাহিদা কমানোর কোনো ইচ্ছা নেই। তবে গ্রীষ্মকালে এয়ারকন্ডিশনগুলোর জন্য বাড়তি ৬,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। মসজিদ, মার্কেটসহ অফিস-আদালতগুলোতে এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চালানো হলে ২,০০০ মেগাওয়াট থেকে ৩,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে," যোগ করেন তিনি।

 

গ্রীষ্মে কুলিং লোড কমাতে ব্যবসায়ী ও মসজিদের ইমামদের সঙ্গে সচেনতনতামূলক মিটিং করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এজন্য জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সরকার বিজ্ঞাপন প্রচার করবে। এছাড়া, গ্যাস ও বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা।

ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ কেনার বেঞ্চমার্ক দাম নির্ধারণ করবে সরকার: জ্বালানি উপদেষ্টা