ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:৩৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ
এ সম্পর্কিত আরো খবর
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপড়েন: পর্যটন ও চিকিৎসা ব্যবসায় বড় ধস
৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:৩৪ এএম
ছবি: সংগ্রহীত
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতির ফলে ভারতের পর্যটন ও চিকিৎসা খাতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ভারতের চিকিৎসা ও পর্যটন খাতের একটি প্রধান ডলার আয়ের উৎস হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা এই খাতগুলোর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা এবং কিছু ভারতীয় নেতার বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য এই পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করেছে।
কলকাতার নিউমার্কেট এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক এলাকার হোটেল ও দোকানগুলো বাংলাদেশি ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে। সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে এসব এলাকায় বাংলাদেশি ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও এই বছর ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। হোটেলগুলোয় বোর্ডার কমে যাওয়ায় ৩০-৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দিয়েও বুকিং হচ্ছে না। কলকাতার অভিজাত হোটেল ও’পার্কে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
চিকিৎসা খাতেও ধস নেমেছে। ভিসা জটিলতা ও সীমান্ত উত্তেজনার কারণে বাংলাদেশি রোগীরা ভারতে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। প্রতিবছর গড়ে ৮ লাখ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান, যার অর্ধেকের বেশি ভারতে চিকিৎসা নিতে যান। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগীরা থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।
তবে ভারতীয় পর্যটন ও চিকিৎসা খাতের এই ক্ষতি শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিকভাবেও প্রভাব ফেলছে। কলকাতার নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার পরিবার বাংলাদেশি পর্যটক ও ক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল। এসব ব্যবসায়ী পরিস্থিতি উন্নতির জন্য দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের মেরামত প্রত্যাশা করছেন।
বাণিজ্যিক সম্পর্কের অবনতির ফলে আমদানিতেও প্রভাব পড়েছে। গত আগস্ট থেকে ভারত থেকে আমদানি প্রায় ১৮ শতাংশ কমেছে, আর রপ্তানি কমেছে ২৮ শতাংশ। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পণ্য আমদানি না করে মিশর, তুরস্ক এবং পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কূটনৈতিক উত্তেজনার দীর্ঘায়িত প্রভাব ভারতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। বাংলাদেশের পর্যটক, রোগী এবং ক্রেতারা ভারতের বিভিন্ন খাতে বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন, যা ভারতের ডলার আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ক্ষতি শুধুমাত্র ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক ভারসাম্যেও প্রভাব ফেলবে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপড়েন দূর করতে উভয় দেশের কূটনীতিক এবং ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে কার্যকর আলোচনা এবং সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবি।