ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:৪১:৩৩ এএম

ভূরাজনীতি ও বাংলাদের গুরুত্ব : মোঃ আলীমুজ্জামান

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১:৪৮ পিএম

ভূরাজনীতি ও বাংলাদের গুরুত্ব : মোঃ আলীমুজ্জামান

ভূরাজনীতি হল পৃথিবীর মোড়ল রাষ্ট্রসমূহের স্বার্থ ও প্রতিবেশী দেশ সমূহের স্থিতিশীলতা উপর নির্ভর করা বিষয় সমূহ। দেশের তিন দিকে ভারতের স্থল সীমানা থাকায় ভারত চাইবে না বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হয়ে তার দেশের ভিতরে সেই অবস্থা তৈরি হয়। ঠিক তেমনি ভাবে মায়ানমার অস্থিতিশীল হওয়ায় আরাকান রাজ্য থেকে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। আবার ভারতের সাথে চীনের সীমান্ত থাকায় দুই পরাশক্তির প্রভাব বিস্তারের  স্বার্থে  বাংলাদেশ উভয় দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র  রাশিয়া হওয়ায় তারাও এদেশে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে তাদের প্রভাব বাড়ানোর স্বার্থে।

 

পূর্বের সরকার ভারত ও ময়নমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে কেস করে বিশাল সমুদ্রসীমা জয় করার ফলে বাণিজ্য প্রভাব বিস্তার করতে আমেরিকার সেটা প্রয়োজন হওয়ায় দেশ তাদের নিকট গুরুত্ব পূর্ণ। চিন যে এশিয়ান হাই ওয়ে করছে, সেটার মূল করিডোর হল বাংলাদেশ। আমেরিকা এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব মুক্ত রাখতে আসিয়ান তৈরি করেছে, ঘোষণা করেছে ইন্দো পেসফিক অঞ্চল, যার মূল সদস্য হল বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা। বাংলাদেশ বহু দিন যাবৎ সেই চুক্তি স্বাক্ষর করতে গড়িমসী করে ছিল কারণ সেটা করলে পুরাপুরি চীনের স্বার্থের পরিপন্থী হবে। পৃথিবীর মাপে বাংলাদেশের অবস্থান ডটের সমান মনে হলেও অবস্থান গত কারণে পৃথিবীর সকল পরাশক্তির নিকট গুরুত্বপূর্ণ।

 

ভারত অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ থেকে উজানে হওয়ার কারণে প্রায় সকল নদী ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আন্তর্জাতিক নদী প্রবাহ আইন অনুসারে সেই নদী সমূহের উপর বাঁধ দিতে পারে না কিন্তু তারা সেটা করে অন্যায় করেছে জেনে বুঝে। আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করে পারব না, তাহলে আমাদের চলতে হবে কূটনৈতিক চাল খেলে। সে কারণে চীনের সাথে তিস্তা মহা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা ও বাস্তবায়নের চুক্তি করার কথা হয়। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভারত কারণ তার দেশের পাশে চিন যদি এ কর্মযজ্ঞ চালায় তাহলে তাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভমত্তের জন্য হুমকির কারণ হবে। সেটা কোন ভাবেই ভারতের সরকার সহ কেউ মেনে নিবে না। এই প্রথম ভারত ও চীনের উভয়ের স্বার্থের পরিপন্থী প্রোজেক্ট, যা বাংলাদেশ গ্রহণ করে ভারতকে কূটনৈতিক ভাবে পরাস্ত করার চাল হিসাবে।

 

ভারত নিজের দেশের স্বার্থে তিস্তা মহা প্রকল্পে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। বাংলাদেশ কূটনৈতিক চালে সফল হলে প্রতিবেশী দেশের সার্বভমত্তে ও পানি দেওয়ার বিষয়টি ভারতের উপর নির্ভরশীল তাই উইন উইন পজিশনে তিস্তা মহা প্রকল্প চুক্তি ভারতের সাথে করার আগ্রহ প্রকাশ করে। এখানে চীনকে না আনলে ভারত কোন দিন এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করত না। ভূরাজনৈতিক কারণে গুরুত্ব থাকা দেশ গুলো পরাশক্তি সমূহের সাথে খেলে সুবিধা আদায় করতে দক্ষ কূটনৈতিক চালে চলতে হয়। যেমন রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের রাশিয়ার বিনিয়োগ ভারতের মধ্যস্তা ও নিশ্চয়তা দেওয়ার ফলে হয়েছে। সেটা বাস্তবায়িত হলে প্রায় ৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে, যার মূল্য হবে বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ।

 

পূর্বে আমেরিকা ও পশ্চিমাদের উপর নির্ভরশীল পরাষ্ট্র নীতির কারণে তাদের প্রভুত্ব মেনে নিয়ে চলতে হতো। পদ্মা সেতুর অর্থ ছাড়ের আগে দুর্নীতির প্রশ্ন তুলে জাইকা ও বিশ্ব ব্যাংক অর্থ প্রত্যাহার করলেও, ভূবস্থানগত কারণে চিন এগিয়ে আসে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে। চীনের সহযোগিতায় নিজস্ব অর্থের দ্বারা নির্মাণ করা সম্ভব হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। চীনের বিনিয়োগে বাংলাদেশের উপর আমেরিকার প্রভাব ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে কারণে তার বন্ধু রাষ্ট্র জাপানের বিনিয়োগে তৈরি হয় মেট্রো রেল সমূহের প্রকল্প। বিভিন্ন ইপিজেড এলাকায় প্রতিযোগিতা শুরু হয় পরাশক্তি সমূহের প্রভাব বিস্তার করার শিল্প কারখানা গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা।

 

কোন রাজনৈতিক দলের বা ব্যক্তির একক প্রভাবে নয়, শুধুমাত্র ভূরাজনৈতিক কারণে সকল পরাশক্তির কাছে গুরুত্ব বহ দেশ হিসাবে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সমূহের কাছে রোল মডেল হয়ে যায়। কিন্তু ভূরাজনৈতিক কারণে কোন মোড়লের স্বার্থের হানি হওয়ায় শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরবর্তী লেখায় শেখ হাসিনার স্বৈরাচার, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার নিয়ে লিখব ইনশাআল্লাহ।

ভূরাজনীতি ও বাংলাদের গুরুত্ব : মোঃ আলীমুজ্জামান