ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৬:৪৭:১৬ এএম

মসলার বাজারে অস্থিরতা: বাড়ছে দাম, ব্যবসায়ীরা দুষছেন কর ও আমদানি সংকট

১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:৫৮ এএম

মসলার বাজারে অস্থিরতা: বাড়ছে দাম, ব্যবসায়ীরা দুষছেন কর ও আমদানি সংকট

ছবি: সংগ্রহীত

পবিত্র রমজান আসতে বাকি আর কয়েক মাস। এ সময়ে মসলার চাহিদা সবসময়ই বাড়ে। ব্যবসায়ীরা এখন থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কিন্তু বাজার পরিস্থিতি তাদের চিন্তায় ফেলছে। বিশেষ করে এলাচের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। অন্যান্য মসলার মধ্যে জিরা, গোলমরিচ, কাজুবাদাম, জয়ত্রী, জায়ফলের দামও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

 

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত কর, আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার ঊর্ধ্বগতি এবং ডলারের মুল্যবৃদ্ধি তাদের আমদানিতে বাধা দিচ্ছে। একই সঙ্গে ভারত থেকে আমদানি কমে যাওয়ায় দেশীয় বাজারে মসলার সংকট দেখা দিচ্ছে।

 

 

ঢাকার মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এলাচের দাম দেড় থেকে দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দুই মাস আগে প্রতি কেজি এলাচের দাম ছিল ১,৮০০ থেকে ২,৫০০ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,৮৫০ থেকে ৪,৪৫০ টাকায়।

 

 

জিরার দামেও বড় পরিবর্তন এসেছে। ছয় মাস আগে জিরার দাম প্রতি কেজি ১,০০০ টাকার ওপরে ছিল। বর্তমানে পাইকারি বাজারে ৬২০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে তা ৮৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগের বছরগুলোতে জিরার দাম ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

 

 

গোলমরিচ, কাজুবাদাম, জয়ত্রী, এবং জায়ফলের দামও একই রকমভাবে বেড়েছে। তবে কিছু মসলার দাম কিছুটা কমেছে। পেস্তাবাদাম, চিনাবাদাম, এবং আলুবোখারার দাম সামান্য কমেছে, কিন্তু তা মোট বাজার পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল করতে পারছে না।

 

 

পুরান ঢাকার সাথী এন্টারপ্রাইজের মো. সালাম বলেন, "মানুষের হাতে টাকা নেই। আগে যারা পাঁচ কেজি মসলা কিনতেন, এখন তারা দুই কেজি কিনছেন।" তিনি আরও জানান, ভারত থেকে বৈধ পথে মসলা আসা বন্ধ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ডলার ও আমদানির উচ্চ খরচের চাপে রয়েছেন।

 

 

অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা মসলার দাম ঈদের আগে বাড়িয়ে দেয়। পরে তারা সামান্য কমিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সহানুভূতির পরিবেশ তৈরি করে। এ বিষয়ে হেদায়েত অ্যান্ড ব্রাদার্সের ম্যানেজার মো. বিলাল হোসেন জানান, "সবকিছু ডলারের ওপর নির্ভর করে। দাম কমাতে হলে ডলারের স্থিতিশীলতা ও শুল্কের নীতি নিশ্চিত করতে হবে।"

 

 

বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, "মসলার বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে দীর্ঘমেয়াদি শুল্কনীতি প্রয়োজন। বর্তমানের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক।"

 

 

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. গোলাম মাওলা বলেন, "আমাদের মসলার বাজার মূলত আমদানি-নির্ভর। কিন্তু আমদানির ওপর অতিরিক্ত কর আরোপের ফলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়েছে। একটি কেজি এলাচ আমদানিতে ৫৭০ টাকা কর দিতে হয়।"

সরকারের শুল্কনীতি ও ডলারের দাম স্থিতিশীল না হলে মসলার বাজারের এই অস্থিরতা চলতেই থাকবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

মসলার বাজারে অস্থিরতা: বাড়ছে দাম, ব্যবসায়ীরা দুষছেন কর ও আমদানি সংকট