ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১:৫৫:১১ পিএম

যমুনা সেতু থেকে রেল তুলে দিয়ে সড়কপথ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৩৩ এএম

যমুনা সেতু থেকে রেল তুলে দিয়ে সড়কপথ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা

ছবি: সংগ্রহ

উত্তরবঙ্গকে রাজধানীর সঙ্গে সংযোগ করে ১৯৯৮ সালে চালু হয় যমুনা বহুমুখী সেতু। তবে রেলকে জায়গা দিতে গিয়ে কমিয়ে ফেলা হয়েছিল সড়কপথের প্রশস্ততা। উদ্বোধনের ২৭ বছর পর এ সেতুর ৩০০ মিটার উজানে রেলের জন্য চালু হচ্ছে একটি স্বতন্ত্র সেতু। তাই বিদ্যমান বহুমুখী সেতু থেকে রেলপথ তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। রেলপথের জায়গায় সড়কপথ বানিয়ে যমুনা সেতুর প্রশস্ততা ‘আদর্শ মানে’ ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।


রেল তুলে দিয়ে সড়কপথ সম্প্রসারণের কাজটি শুরুর জন্য পরামর্শক নিযুক্ত করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। আর পরামর্শক হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) মতো প্রতিষ্ঠানকে তারা দায়িত্ব দিতে চায়।


যমুনায় স্বতন্ত্র রেলসেতুর নির্মাণকাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চলতি ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে এটি উদ্বোধনের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা। এর পরই বহুমুখী সেতু থেকে রেলপথ তুলে দেয়া হবে। এ তথ্য নিশ্চিত করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বিদ্যমান বহুমুখী সেতু থেকে রেলপথ তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

 

রেলপথ তুলে দিয়ে সড়কপথ প্রশস্ত করা হলে সেতুতে যানবাহন চলাচলের সক্ষমতা বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে সেতুটির সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ‘রাস্তার ক্ষেত্রে আদর্শ দুই লেন বলতে বোঝায়, সর্বনিম্ন প্রশস্ততা থাকতে হবে ৭ দশমিক ২ মিটার। কিন্তু যমুনা সেতুর সড়কপথের প্রশস্ততা এখন আছে ৬ দশমিক ৩ মিটার। আদর্শ মানদণ্ডের চেয়ে বিদ্যমান সেতুর প্রশস্ততা এক মিটারের বেশি কম। যদি আমরা রেল ট্র্যাকটা পুরো ব্যবহার করতে পারি, তখন প্রশস্ততা বেড়ে ৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটারে উন্নীত হবে।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘‌২০২৩ সালে জুলাইয়ে সেতুর সাইট অফিস থেকে রেল তুলে দিয়ে সড়ক সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তারপর কিছুদিন বিষয়টি ঝুলে ছিল। এখন আবার গতি পেয়েছে।’

 

সেতুটির নির্মাণকাজ ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে শুরু হয়ে ১৯৯৮ সালের জুনে শেষ হয়েছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনের একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের এ সেতুটি নির্মাণ করে। চালুর পর থেকে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক ও রেল যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে সেতুটি। তবে ঈদ কিংবা কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে দুই লেনের সরু সেতুটি তা সামাল দিতে হিমশিম খায়। সেতু এলাকায় তৈরি হয় যানজট, যা জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

সম্প্রসারণের মাধ্যমে যমুনা সেতুর সক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস। তিনি বলেন, ‘‌যমুনা সেতুর রেলপথ তুলে দিয়ে সড়কপথের প্রশস্ততা বাড়ানোর কাজের অংশ হিসেবে আমরা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কারণ কাজটি “‍শেপড ওয়ে”-তে করতে হবে। বুয়েট, বিআইটি, এমআইএসটি—ওদের কাছ থেকে প্রস্তাব নিয়ে কাজটি শুরু করে দেব। আমরা বুয়েটকে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নির্দেশনা এল শুধু বুয়েট নয়, আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রস্তাব নিতে। এখন আমরা সেভাবেই কাজটি এগিয়ে নিচ্ছি। সম্প্রসারণ প্রক্রিয়াটি আগেই শুরু হয়েছিল। মাঝে বিভিন্ন কারণে উদ্যোগটি ধীরগতিতে এগিয়েছে। এখন আবার আমরা শুরু করেছি।’

 

সেতুটি সম্প্রসারণে কী পরিমাণ টাকার দরকার হবে এবং সেই অর্থের সংস্থান কীভাবে করা হবে—এমন প্রশ্নে কাজী মো. ফেরদাউস বলেন, ‘‌সম্প্রসারণে কত টাকা লাগবে, তা সমীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব নয়। এজন্য আমরা পরামর্শক নিয়োগ দিচ্ছি। ব্যয় কত হবে, সেটা তারাই সমীক্ষা করে বের করবে। আর সম্প্রসারণকাজের জন্য আমরা সরকারের কাছে অর্থ চাইব। সরকার যদি না দেয় তাহলে সেতু কর্তৃপক্ষকেই অর্থায়ন করতে হবে।’

যমুনা সেতু থেকে রেল তুলে দিয়ে সড়কপথ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা