ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৬:২২:০০ পিএম

লোডশেডিং বেড়েছে, জনজীবন বিপর্যস্ত

১৪ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:২৮ এএম

লোডশেডিং বেড়েছে, জনজীবন বিপর্যস্ত

ছবি: সংগ্রহ

বিগত সরকারের আমলে রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ঘটা করে বারবার বলা হলেও দেশে বিদ্যুৎ সমস্যার নিরসন হয়নি। গ্যাস সংকট, কারিগরি ত্রুটিসহ নানা কারণে ঘাটতি থেকেই গেছে। ইদানীং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি আরো বেড়েছে। বেড়েছে লোডশেডিংও।

 

রাজধানীসহ দেশের সব জেলায়ই লোডশেডিং আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় চাহিদার তুলনায় প্রতিদিন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। যেসব এলাকায় ১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন, সেখানে সরবরাহ পাচ্ছে ৯ থেকে ১০ মেগাওয়াট।

 

একইভাবে রাতে চাহিদা ২৬ মেগাওয়াটের স্থলে মিলছে ১২ থেকে ১৪ মেগাওয়াট। কোথাও এক ঘণ্টা পরপর আবার কোথাও ২ ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে। কিছুদিন ধরে টানা বৃষ্টি থাকলেও গরম কমেনি। ভ্যাপসা গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কমেনি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবীর খান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছিলেন, তিন সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থার উন্নতি হবে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট হলেও কয়েক মাস আগে দিনের বেলায় সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল দুপুরে ১৪ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট। ওই সময়ে ১ হাজার ৭৯৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে।

 

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২৬ হাজার ৮৪৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে স্বাভাবিক সময় বিদ্যুতের চাহিদা থাকে সাড়ে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন তারও নিচে নেমে যাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সঠিক সময়ে গ্যাস না পাওয়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। দেশীয় গ্যাস উৎপাদন কমেছে।

 

অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস আমদানি করাও সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির জন্য সরকার টাকা দেয়। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৪০৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। কিন্তু তারপরও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি মিলছে না, ফলে বিদ্যুতের উৎপাদনও বাড়ছে না। পিডিবির সব বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত থাকলেও জ্বালানির অভাবে উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।

 

জ্বালানি উপদেষ্টা আরো জানান, বাংলাদেশ শিগগিরই নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করবে। এছাড়া ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্রে ২ টিসিএফ গ্যাস আছে। আরো ২ দশমিক ৬ টিসিএফ গ্যাস রিসোর্স আছে- যেটা পাওয়া সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে এলএনজি গ্যাস কেনা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। বড়পুকুরিয়ায় কারিগরি সমস্যা হয়েছে, যা দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে। রামপাল পুনরায় চালু হয়েছে। আদানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। দ্রুত গ্যাস আমদানির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

 

সাম্প্রতিক সময় রাজধানীতেও লোডশেডিং বেড়েছে। ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী দুই প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ডিপিডিসি গড়ে ১০০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম সরবরাহ পাচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন এলাকায় এক ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তবে ডিপিডিসির চেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে ডেসকো এলাকায়। ডেসকোর ১ হাজার ৩২৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাচ্ছে ১ হাজার মেগাওয়াট। গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায়ও ৫০ থেকে ৬৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

 

রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোতে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি আরো প্রকট। সব জেলাতেই লোডশেডিং চলছে। পল্লী বিদ্যুতের এলাকায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি। রাজশাহীতে লোডশেডিং দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এই এলাকার বাসিন্দারা। বৃষ্টির পরও ভ্যাপসা গরমে শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণিপেশার লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাজশাহী শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা নেসকো সূত্রে জানা যায়, শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ১২০ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে পাওয়া যায় ৮৫ থেকে ৯৫ মেগাওয়াট।

 

রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলার বাঘা, চারঘাট, দুর্গাপুর ও মোহনপুর উপজেলার পুরোটা এবং বাগমারার তাহেরপুর ও পুঠিয়ার বানেশ্বরের একটি করে ফিডারে সরবরাহ কম পাচ্ছে। যেমন বাঘায় বিদ্যুতের মোট চাহিদা ১৮ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে পাওয়া যায় ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট। জেলার লালপুরে দিনে-রাতে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।

 

নাটোরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ না পেয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলার গ্রামাঞ্চলের মানুষকে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না পাওয়ায় ১ ঘণ্টা আবার কখনো দুই ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। রাতে তিন-চারবার কোনো কোনো দিন ৫ বারও লোডশেডিং হয়। সিংড়া উপজেলাতেও একই অবস্থা। ৭-৮ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। সেচকাজের জন্য পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও বাগাতিপাড়ায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা শেডিং করা হচ্ছে। গুরুদাসপুর ৩৩ কেভি ফিডারের বর্তমান চাহিদা ২৩ মেগাওয়াট। বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ২৪ ঘণ্টায় ১০ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় প্রায় ১১ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে।

 

সিরাজগঞ্জ শহর ও আশপাশের এলাকায়ও লোডশেডিং বেড়েছে। কাজিপুর চরাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এই এলাকায় চাহিদা ১০ মেগাওয়াটের বিপরীতে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। চরাঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল হওয়ায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না।

 

এদিকে চরাঞ্চলে যাতায়াতের বাহন হিসেবে ব্যবহৃত অটোভ্যান, চায়না অটোভ্যান ও বিদ্যুৎচালিত রিকশা। এসব পরিবহন প্রতিদিন বিদ্যুতের সাহায্যে চার্জ করা হয়। ফলে কাগজে কলমে এক রকম বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে চাহিদার পরিমাণ অনেক বেশি। এতে লোডশেডিং আরো বেড়ে গিয়ে ৬ ইউনিয়নের গ্রাহকরা বিদ্যুৎ প্রাপ্যতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

 

বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতেও লোডশেডিংয়ে জনগণের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

লোডশেডিং বেড়েছে, জনজীবন বিপর্যস্ত