ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
১৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
শেখ পরিবারের নামে সকল প্রকল্প বাদ দিতে জাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার
১৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২:৩১ পিএম
![শেখ পরিবারের নামে সকল প্রকল্প বাদ দিতে জাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/11/13/20241113122317_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের প্রকল্পগুলো বাদ দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশেষ করে যে প্রকল্পগুলোর নামের শুরুতেই ‘শেখ’ রয়েছে এবং কার্যক্রম শুরু হয়নি সেগুলোই বাদ দেওয়া হবে। তবে ‘শেখ’ নামে থাকা যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে বা যেগুলোর কাজ চলমান রয়েছে সেগুলোর নাম পরিবর্তন করা হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া, অলাভজনক ও গুরুত্বহীন বিবেচনায় বাদ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া শুধু ‘শেখ’ নামের প্রকল্পই নয়-রেল, সড়ক, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি), দুর্যোগ, পরিবেশ, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া, অলাভজনক ও গুরুত্বহীন’ প্রকল্প বাতিল করতে যাচ্ছে সরকার। প্রকল্প বাদ দেওয়ার তালিকা আরও বাড়তে পারে বলেও জানা গেছে।
জানা যায়, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ৮২টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩৮টি প্রকল্পের কাজ শেষ, বাকি ৪৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান।
পরিকল্পনা কমিশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, শেখ পরিবারের নামে নেওয়া যেসব প্রকল্প কাটছাঁট বা বাদ দেওয়া হবে তার মধ্যে রয়েছে-শেখ হাসিনা নকশী পল্লী-যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। দুর্যোগ ও চরাঞ্চলের মানুষের আশ্রয়ের জন্য মুজিব কিল্লা নির্মাণÑযার ব্যয় ১ হাজার ৯৯৭ কোটি, শেখ জহুরুল পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রকল্প (১৯৮ কোটি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক (৩৬৪ কোটি), শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার প্রকল্প (১৫০০ কোটি) এবং শেখ হাসিনা সরণি জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্প (৫৬৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা)। এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৪৫৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, জামালপুরের কমপুর এলাকায় কারিগর, হস্তশিল্প এবং তাঁতিদের জন্য একটি বিশেষ অঞ্চল তৈরির লক্ষ্যে ‘শেখ হাসিনা নকশী পল্লী’ প্রকল্পটি আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৯ সালের মার্চ মাসে অনুমোদন দেয়। পরে পাঁচ বছর পার হলেও প্রকল্পটির উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের চাপের কারণেই এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এর আগে প্রকল্পের শুরুতে কারিগর ও কারিগরদের প্রশিক্ষণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখার উদ্দেশ্যে ৭৭২ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পটির অধীনে ঝিনাই নদীর তীরে ৩০০ একর কৃষি জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এতে মোট ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তবে প্রাথমিকভাবে জমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটের জন্য প্রথম ধাপে ৭৭২ কোটি টাকা একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে এসব ভবন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি ভবনের সামনের খোলা জায়গা ব্যবহার করা হবে খেলাধুলায়। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে দেশের ১৬ জেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা।
এদিকে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা বনে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার (প্রথম পর্যায়)’ শিরোনামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২৩ সালে। জুড়ী তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের নির্বাচনী এলাকা। পার্কটি হওয়ার কথা ছিল সংরক্ষিত বনের ৫ হাজার ৬৩১ একর জমিতে। ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৬৪ কোটি টাকা।
এছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার পিতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা শেখ জহুরুল হকের নামে যশোরে ‘পল্লী উন্নয়ন একাডেমি’ প্রকল্প নেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ), বগুড়ার। এ প্রকল্পেও লুটপাটের সুযোগ রাখা হয়েছিল। যার বাস্তবায়ন কাজ এখনও শুরুই হয়নি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রযুক্তির বিকেএসপি হিসেবে পদ্মা সেতুর পাশে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুরে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি (শিফট) গড়ে তোলার প্রকল্প নেয় বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ৭০.৩৪ একর জমির ২০ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে ভিশন-২০৪১ নামক ৪১ তলাবিশিষ্ট টাওয়ার। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। প্রকল্পটি এখন বাদের তালিকায় পড়ে যাচ্ছে।
এ ছাড়া ‘শেখ হাসিনা সরণি জাতীয় মহাসড়ক (এন-১১৬) সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নতিকরণের প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। দুই বছর এই প্রকল্পের পুরো অর্থ খরচ করবে সরকার (জিওবি)। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। সম্প্রতি প্রকল্পটির ওপরে পরিকল্পনা কমিশনে যাচাই-বাছাইয়ে মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রকল্পটি নিয়ে কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শেখ নাম জড়িয়ে প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া হতো যাতে করে খুব সহজেই প্রকল্প পাস করানো যায়। আর এসব প্রকল্পের আড়ালে লুটপাটের সুযোগ রাখা হতো।
সম্প্রতি এক বৈঠকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের তালিকা করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই নির্দেশনার পর ভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রকল্পের তালিকা তৈরি শুরু করে। এতে ৩৫টি প্রকল্প বাতিল অথবা স্থগিত হতে যাচ্ছে।
প্রকল্প বাদ ও কাটছাঁটের ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী সময়ের আলোকে বলেন, শেখ হাসিনা বা তার পরিবারের সদস্যদের নামে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেটা জরুরি নয়।
নতুন প্রকল্প নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে যেসব প্রকল্প দ্রুত সময়ে মধ্যে শেষ করে ফলাফল তাৎক্ষণিক পাওয়া যাবে এসব প্রকল্প হাতে নিতে হবে। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এসব প্রকল্পকে আগে প্রাধান্য দিতে হবে। বড় মেয়াদের প্রকল্প অনুমোদনে এড়িয়ে চলা জরুরি।
![শেখ পরিবারের নামে সকল প্রকল্প বাদ দিতে জাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)