ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:২৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ
সংশোধিত এডিপিতে কমছে ৫০ হাজার কোটি টাকা
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:২৬ এএম
![সংশোধিত এডিপিতে কমছে ৫০ হাজার কোটি টাকা](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/12/31/20241231092649_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের আমলে প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পই বেশি নেওয়া হয়। এসব প্রকল্প মূলত রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। যেখানে লুটপাটের সুযোগ রাখা হয়েছিল। এমনকি দলীয় উন্নয়নের প্রচারেও নেওয়া হয়েছিল প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণের চাপ বেড়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের। ক্ষমতায় এসে প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই শুরু করেছে বর্তমান সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সংশোধিত বাজেটে ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ কমানোর চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে থমকে যাওয়া উন্নয়ন কাজের পালে এখনও হাওয়া লাগেনি। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ সময়ে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১০টি মন্ত্রণালয়-বিভাগের বাস্তবায়ন ৫ শতাংশের নিচে। চলতি বছর মোট বরাদ্দ ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। পাঁচ মাসে খরচ হয়েছে মাত্র ৩৪ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। বাকি সাত মাসে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৪ কোটি টাকা খরচ এক প্রকার অসম্ভব বলা চলে। ফলে বৈদেশিক ঋণের ২০ হাজার কোটি টাকাসহ এডিপি থেকে সরকারি অর্থায়ন মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
জানা যায়, এবার একটু আগেভাগেই এডিপি সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথমেই কমানো হচ্ছে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ। আগামী মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা। এডিপিতে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট নতুন প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর হচ্ছে ইআরডি। সরকারি অর্থায়ন কমতে পারে ৩০ হাজার কোটি টাকা : বিগত কয়েক বছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বৈদেশিক ঋণ কমলেও কমে না সরকারি অর্থায়ন। অথচ এবার সেই রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে। বড় আকারে কমতে পারে সরকারি অর্থায়ন। চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। এতে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা স্থানীয় উৎস থেকে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি উৎস থেকে এডিপি ৩০ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে।
সূত্র জানায়, এডিপি কাটছাঁটের কাজ শুরু করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ চাহিদা ও খরচের ওপর নির্ভর করে কমানো হবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি। শুধু সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রায় ১১ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা কাটছাঁট হচ্ছে। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় তাদের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের চাহিদা চূড়ান্ত করা হয়।
মূল এডিপিতে চলতি অর্থবছরের জন্য ৩২ হাজার ৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সভায় চলতি অর্থবছরে ৫ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে বিআরটিএ ৩ হাজার ৯৭১ কোটি এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ২ হাজার কোটি টাকা আদায় করবে। সংস্থাটির পরিচালন বাজেট ধরা হয় ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৫ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকাই সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের। সভায় সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ কমছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের। ডিটিসিএর কোনো বরাদ্দ না কমলেও বিআরটিসির প্রায় পুরো টাকাই কেটে নেওয়া হচ্ছে। এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ খরচ করতে পারবে না বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সওজ।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে এডিপিতে আমাদের ১২৪টি প্রকল্পটি চলমান। আরএডিপিতে আরও তিনটি প্রকল্প অর্থভুক্ত হয়েছে। মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১২৭টি। ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এ খাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না, তাই ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ কমানো প্রয়োজন।
মাঠ পর্যায়ের চাহিদা অনুযায়ী জিওবি খাতে ১২ হাজার ২৩৫ কোটি এবং প্রকল্প ঋণ খাতে ৩ হাজার ৭২২ কোটি টাকা নির্ধারণ করে সংশোধিত বাজেটে মোট ৭ হাজার ১২৭ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগের নির্মাণকাজের অনেক কম্পোনেন্টের এখনও টেন্ডার হয়নি, নতুন করে টেন্ডার করে এই অর্থবছরে খরচ করা সম্ভব হবে না।
এডিপি কাটছাঁট প্রসঙ্গে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, এডিপি কাটছাঁট করার কাজ শুরু হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয়গুলো সিঙ্গেলভাবে প্রস্তাব পাঠাচ্ছে। এই প্রস্তাবনা নিয়ে সভা হবে, এর পরেই সবকিছু চূড়ান্ত হবে। তবে সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত হতে এক মাস লেগে যাবে।
সংশোধিত এডিপি কমানো প্রসঙ্গে সচিব বলেন, আমরা এডিপি মনিটরিং করছি, যাতে সর্বোচ্চ উন্নয়ন ব্যয় করা যায় সেই চেষ্টা থাকবে। তবে এবার সংশোধিত এডিপি কমবে। এর প্রধান কারণ কিছু প্রকল্প শেষ পর্যায়ে, কিছু বরাদ্দ দিয়ে সমাপ্ত করা হবে। এবার বড় আকারে প্রকল্প কাটছাঁট হচ্ছে। সেগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হবে না।
২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে না উন্নয়ন প্রকল্পে : রাজনৈতিক পালাবদলে কমছে প্রকল্পের সংখ্যা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া অনেক প্রকল্প বাদ যাবে সংশোধিত এডিপিতে। এ ছাড়া অনেক ভাবনা-চিন্তা করেই বৈদেশিক ঋণের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্পে। এসব কারণে মূলত প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা কমতে যাচ্ছে বৈদেশিক ঋণ। প্রতি বছর গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা কমে বৈদেশিক ঋণ। এবার এ সংখ্যা দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে। গত অর্থবছর ছেঁটে ফেলা হয়েছিল ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ। এদিকে এরই মধ্যে সংশোধিত এডিপি তৈরির জন্য প্রকল্পভিত্তিক বৈদেশিক অর্থের বরাদ্দ নির্ধারণে বৈঠকও করেছে ইআরডি। চলতি মাসে ৫১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা অংশে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ৩৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বাদ দিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দাঁড়াতে পারে ৮০ হাজার কোটি টাকা।