ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:২৫:৩৮ এএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১০:৮ এএম

অনলাইন সংস্করণ

সম্পদের হিসাব চাওয়ায় আতঙ্কে সরকারি চাকুরেরা

৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১০:৮ এএম

সম্পদের হিসাব চাওয়ায় আতঙ্কে সরকারি চাকুরেরা

ছবি: সংগ্রহ

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দিতে হয়। এরপর পাঁচ বছর অন্তর সম্পদ কমা বা বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দেওয়ার নিয়ম আছে। দুর্নীতি রোধ ও চাকরিজীবীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আচরণবিধিমালায় এমন নিয়ম থাকলেও তা দীর্ঘ দিন ধরেই মানা হয় না। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও অগ্রগতি হয়নি।

 

বিগত সরকারের সময় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের অঢেল সম্পদ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। ক্ষমতার পালাবদলের পরও প্রশাসন, পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মচারীদের দুর্নীতির খবর আসছে গণমাধ্যমে। সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমেছে দুদকও। এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব চাওয়ায় অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। সোমবার সচিবালয়সহ বিভিন্ন অধিদফতর ও সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বিষয়টি জানান।

 

এদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোন ফরম্যাট বা অভিন্ন ফরমে সম্পদের তথ্য বা বিবরণী সরকারের কাছে দাখিল করবেন, তা ঠিক করতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিবকে আহ্বায়ক করে গঠিত এ কমিটির সদস্যসচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা শাখার অতিরিক্ত সচিব। কমিটিতে আছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অর্থ বিভাগ এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের প্রতিনিধি।

 

সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, কমিটিকে একটি ন্যূনতম বা সংক্ষিপ্ত সময় দেওয়া হবে। এ সময় সাত দিনের বেশি নয়। কমিটি একটি ফরম্যাট তৈরি করবে। সাত দিন পর ফরম অফিসে অফিসে পৌঁছানোর জন্য আরও সাত দিনের মতো সময় নেওয়া হবে। বলে দেওয়া হবে, কে কোথায় কবে জমা দেবেন। বছরে একবার এ বিবরণী জমা দিতে হবে। ফরমটি বাংলায় করে দেওয়া হবে। বিবরণী জমার পর দুদক বিবেচনা করবে, কার সম্পদের হিসাবের জন্য তলব করা হবে।

 

সচিব বলেন, দেশে ১৫ লাখের মতো সরকারি কর্মচারী আছেন। সম্পদের বিবরণী জমা না দিলে দণ্ড কী হবে, সেটিও বলে দেওয়া হবে। সোজা কথা, জমা না দিলে আইনানুগ ‘খবর আছে’। যত বড় যেই হোক, চোরকে চোর বলতে হবে। আগে আমরা মনে করতাম, শুধু কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে, যারা কর দেন। কিন্তু দেখা গেছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পিয়ন অথবা ড্রাইভারেরও ৪০০ কোটি টাকা বা ৯ কোটি টাকা, এ রকম তো পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য মডার্ন ও আপডেটেড ওয়েতে যাতে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে পারে, সে জন্যই কাজটা শুরু করেছি। এর মূল মেসেজটা রোববার দেওয়া হয়েছে।

 


রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের তথ্য বা বিবরণী দাখিল করার নির্দেশ দেয় সরকার। সোমবার সচিব বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে এটি একটি বার্তা। আয়করের বিবরণী সবাই জমা দেন না। যাদের করযোগ্য আয় আছে, তারাই কেবল দেন। আর এখন যাদের কোনো সম্পদ নেই, তাদেরও তথ্য বা বিবরণী জমা দিতে হবে। এটি জনস্বার্থে দিতে হবে। তিনি বলেন, দিন শেষে এবারও প্রমাণিত হলো, যার সম্পদ কম, যার স্বচ্ছতা আছে, যার লোভ নেই, তারাই সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। মোখলেস উর রহমান বলেন, সরকার তো বহুবার পরিবর্তন হয়েছে। এভাবে কেউ পালায়। বায়তুল মোকাররমের খতিব কেন পালাবেন। উনিও তো পালিয়েছেন। আমার ব্যাচমেট কয়েকজন সংসদ সদস্য হয়েছেন, তারাও পালিয়েছেন।

 

গত ২৬ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভাষণে তিনি বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সব উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করবেন। পর্যায়ক্রমে সব সরকারি কর্মচারীর ক্ষেত্রে তা নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক করা হবে।

সম্পদের হিসাব চাওয়ায় আতঙ্কে সরকারি চাকুরেরা