ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৯:২৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ
সি পার্লের ৩০০ কোটি টাকার কারসাজি
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৯:২৭ এএম
![সি পার্লের ৩০০ কোটি টাকার কারসাজি](https://i.vatbondhu.com/images/original-webp/2024/09/30/20240930092718_original_webp.webp)
ছবি: সংগ্রহ
শেয়ারবাজারে কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত করে তাদের পকেট থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লুটে নেওয়ার বড় উদাহরণ হতে পারে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড হোটেল। ২০২২ সালে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছরের (২০২৩) ৯ মার্চ এ ছয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য একটানা বেড়ে ৫৭ টাকা থেকে ৩২০ টাকায় উঠে যায়। তাতে মাত্র ছয় মাসে সি পার্লের শেয়ারের দাম ২৬৩ টাকা বা ছয় গুণ বেড়ে যায়।
আবার পাঁচ মাস পর ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর সি পার্লের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য নেমে যায় ৫৬ টাকায়। এ সময়ে কোম্পানিটির প্রায় ৩ কোটি শেয়ারের হাতবদল হয়। যার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এক ধরনের ফাঁদ তৈরি করা হয়েছিল।
সে সময় শুধু সতর্ক করে চিঠি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে কোম্পানিটি। এরপর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ৯ মার্চ এ ছয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য একটানা বেড়ে ৫৭ টাকা থেকে ৩২০ টাকায় উঠে যায়। তাতে মাত্র ছয় মাসে সি পার্লের শেয়ারের দাম ২৬৩ টাকা বা ছয় গুণ বেড়ে যায়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইসি) এ-সংক্রান্ত এক তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে পাঁচ তারকা রিসোর্টটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অভ্যন্তরীণ একটি গোষ্ঠীও জড়িত ছিল বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারসাজির মাধ্যমে কোম্পানিটি অবৈধভাবে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি মুনাফা অর্জন করেছে। যা মূলত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পকেটের টাকা।
এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে রিসোর্টটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। একই বিষয়ে জানতে বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়েত-উল ইসলামকে ফোন করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বিএসইসি ও ডিএসইসির কর্মকর্তারা বলছেন, তৎকালীন চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়েত ও ডিএসইসির কয়েকজন পরিচালকসহ একটি বলয় গড়ে তুলেছিলেন। যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হতো। এটা মূলত ছিল এক ধরনের ফাঁদ। এর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পকেট থেকে অর্থ লুট করা হতো। ফলে বিএসইসি সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনোরকম ব্যবস্থাই নিতেন না বলে জানান কর্মকর্তারা।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত (২০২৩) বছরের ১০ আগস্ট সি পার্লের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৫৬ টাকা। ১০ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর প্রায় এক মাস এটির শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন ৫৪ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫৭ টাকায় ঘুরপাক খায়। এ সময়ে কোম্পানিটির প্রায় ৩ কোটি শেয়ার হাতবদল হয়। অথচ তার আগে ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম উঠে যায় ৫৭ টাকা থেকে ৩২০ টাকায়। যা ছিল খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। মূলত এর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অধিক লাভের লোভে ফেলা হ
ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩১ জুলাই থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২-এর মধ্যে সি পার্লের শেয়ারের দাম ২১২ দশমিক ৭৩% বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪ টাকা থেকে ১৩৭ দশমিক ৬০ টাকায় ওঠে। এই মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল শেয়ারপ্রতি ৯৩ দশমিক ৬০ টাকা। এর জন্য ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল হককেই দায়ী করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, যদিও সি পার্লের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল হক সরাসরি তার নিজের বিও [বেনিফিশিয়ারি ওনার] অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার লেনদেন করেননি, তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে খোলা বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার লেনদেন করেছেন।
মাহমুদুল আহসানের দুটি বিও অ্যাকাউন্টের জন্য মনোনীত প্রার্থী হলেন আমিনুল-লুসির মেয়ে মাহজাবিন হক মাশা। এ ছাড়া আমিনুল হক অন্য একটি বিও অ্যাকাউন্টের জন্য মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। আর মাহমুদুল আহসানের চাচাতো ভাই মো. রোহুল আমিন আরেকটি ভিন্ন অ্যাকাউন্টের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। সি পার্লের আরেক প্লেসমেন্ট হোল্ডার মুহাম্মদ আহাসুন উদ্দিন দুটি বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার লেনদেন করেছেন, যার একটিতে মনোনীত প্রার্থী মাহজাবিন হক মাশা এবং অন্যটিতে মো. আমিনুল হক। আরেক প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডার কাওসার আহমেদ রনির বিও অ্যাকাউন্টেও মো. আমিনুল হককে নমিনি মনোনীত করা হয়েছে।
একইভাবে মো. কালাম হোসেন তার বিও অ্যাকাউন্টের জন্য মাহজাবিন হক মাশাকে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। কালাম ভেনাস বিল্ডার্স লিমিটেড এবং ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের বিও অ্যাকাউন্টের কন্ট্রাক্ট পারসন। উভয় কোম্পানিই সি পার্লের প্লেসমেন্ট হোল্ডার। বেঙ্গল ভ্যাকেশন ক্লাব লিমিটেডও সি পার্লের প্লেসমেন্ট হোল্ডার। মো. আমিনুল হক, তার স্ত্রী লুসি আক্তারী মহল ও ভাই একরামুল হক সি পার্লের স্পন্সর পরিচালক এবং তারা সবাই বেঙ্গল ভ্যাকেশনের পরিচালক। এ ছাড়া মো. আমিনুল হক আরও তিনজন প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডার মো. আশরাফ হোসেন, তফিকুল হাসান ও ইমতিয়াজ আহমেদের বিও অ্যাকাউন্টের জন্যও মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। অনিয়মের এত উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নেননি বিএসইসির চেয়ারম্যান। অভিযোগ রয়েছে তিনি নিজেও ছিলেন সি পার্লের একজন সুবিধাভোগী। যার ফলে ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক রাখা যায়নি কোনোভাবেই।
![সি পার্লের ৩০০ কোটি টাকার কারসাজি](https://i.vatbondhu.com/images/original/2024/04/22/20240422145104_original.png)