ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৭:৫২:০১ পিএম

ভ্যাট বন্ধু নিউজ প্রতিবেদক

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১১:১৬ এএম

অনলাইন সংস্করণ

সিআইডি-পিএসসি , তদন্ত নিয়ে মুখোমুখি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস:

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১১:১৬ এএম

সিআইডি-পিএসসি , তদন্ত নিয়ে মুখোমুখি  নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস:

ছবি: সংগ্রহ



চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার বিষয়টি গত জুলাইয়ে প্রকাশ্যে আনে সিআইডি। ওই ঘটনার পর তদন্ত কমিটি করে পিএসসি। তবে সে তদন্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ মেলেনি। এমনকি গ্রেপ্তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায় স্বীকার করে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিও আমলে নেয়নি তদন্ত কমিটি।


পিএসসি অভিযোগ করেছে, তিন দফায় সিআইডি কর্মকর্তাদের বক্তব্যের জন্য ডাকলেও তাতে সংস্থাটির কেউ সাড়া দেননি। সিআইডির অভিযোগ, শুরু থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে পিএসসি। সিআইডির তদন্তেও তারা সহযোগিতা করছে না।


গত ৫ জুলাই রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পিএসসি যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, তার প্রধান ছিলেন কমিশনের যুগ্ম সচিব ড. আব্দুল আলীম খান। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন কমিশনের পরিচালক দিলাওয়েজ দুরদানা ও মোহাম্মদ আজিজুল হক। গত সোমবার ওই কমিটি পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

 

এ বিষয়ে পিএসসির তদন্ত কমিটির প্রধান ড. আব্দুল আলীম খান  বলেন, ‘আমরা তদন্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো ঘটনা পাইনি। তা আমরা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিয়েছি। কিছু সুপারিশ করেছি।’ তিনি অভিযোগ করেন, পিএসসির তদন্তে কমিটি সিআইডিকে তিন দফায় চিঠি দিয়ে তাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত ও বক্তব্য চেয়েছে। তবে সিআইডির কর্মকর্তারা তাঁদের কোনো সহযোগিতা করেননি।

 

সিআইডি অভিযোগ করেছে, ঘটনার শুরু থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে পিএসসি। শুরুতেই তারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। সিআইডির তদন্তেও তারা সহযোগিতা করছে না। যে জায়গা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, সেই কক্ষের সামনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চাইলেও তা সরবরাহ করেনি পিএসসি।

 

 


রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গত ৮ জুলাই দিবাগত রাতে পিএসসির সাবেক ও বর্তমান ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তাঁরা হলেন পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবীর, পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, ডেসপাস রাইডার সাজেদুল ইসলাম, পানি ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন, সাখাওয়াতের ভাই সায়েম হোসেন, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী লিটন সরকার, পিএসসির অফিস সহায়ক মো. মোজাহিদুল ইসলাম, সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দিকী, প্রতিরক্ষা ও অর্থ বিভাগ এসিসিডিএফের (বিওএফ) অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তাপ্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসের মুদ্রাক্ষরিক মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান ও সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম।

 

এ ঘটনায় ৯ জুলাই পল্টন থানায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইনে মামলা করে সিআইডি। ওই মামলায় ১০ জুলাই আদালতে সাতজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁদের মধ্যে চারজনই পিএসসির সাবেক ও বর্তমান কর্মচারী। তাঁরা হলেন সৈয়দ আবেদ আলী, মোজাহিদুল ইসলাম, খলিলুর রহমান ও সাজেদুল ইসলাম।

 

মোজাহিদুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ২০ বছর ধরে পিএসসিতে চাকরি করেন। গত ৫ জুলাই পিএসসির মেম্বার সৈয়দ গোলাম ফারুকের চেম্বারের ট্রাংক থেকে রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার চার সেট প্রশ্নপত্র চুরি করেন তিনি। সেগুলো চুক্তি অনুযায়ী ৯৮ জন ব্যক্তিকে বিভিন্নজনের মাধ্যমে দেন। চাকরিপ্রার্থীদের ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ভাড়া বাসায় রেখে তা মুখস্থ করানো হয়। এই বাবদ খলিল তাঁকে ৩৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন।

 

পিএসসির আলোচিত গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর জবানবন্দিতেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা উঠে এসেছে। তিনি বলেন, রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি ৪৪ জনের কাছ থেকে ১০ লাখ করে টাকা নেন। পরীক্ষার দুদিন আগে ডেসপাস রাইডার সাজেদুল ইসলামের কাছ থেকে রমনা পার্কের গেট থেকে তিনি প্রশ্নপত্র নেন। প্রশ্নপত্রের জন্য সাজিদুলকে তিনি ৭৫ লাখ টাকা দেন। পরীক্ষার্থীদের সাভারের একটি রিসোর্টে রেখে সেগুলো মুখস্থ করান।

 

প্রশ্নপত্র ফাঁসসংশ্লিষ্ট কারও বক্তব্য, তথ্য ও উপাত্ত আমলে নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পিএসসির তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলীম খান বলেন, ‘আমরা নির্বাহী বিভাগ যে তদন্ত করেছি, সেখানে ফৌজদারি অপরাধের বিষয়টি আসেনি। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না। জবানবন্দি গোপনীয় বিষয়, তা আমরা দেখিনি। ওটা আদালতের বিচারের বিষয়, সেখানেই বিচার হবে। আমাদের তদন্তের বিষয় ছিল প্রতিষ্ঠান। নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।’

সিআইডি-পিএসসি , তদন্ত নিয়ে মুখোমুখি  নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস: