ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ৬:০৯:৩৪ পিএম

সুশাসন ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনে বড় অন্তরায় দ্বৈত নাগরিকত্ব

২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৪:৩০ পিএম

সুশাসন ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনে বড় অন্তরায় দ্বৈত নাগরিকত্ব

ছবি: সংগ্রহ

বর্তমানে বাংলাদেশীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার সুযোগ আছে বিশ্বের ১০১টি দেশে। সাধারণত বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস, ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি নিরাপত্তা ইস্যুতেও অনেকে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা নিয়ে থাকেন। তবে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশ থেকে সম্পত্তি স্থানান্তর, অর্থ পাচার ও গন্তব্য দেশগুলোয় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশী বিত্তশালীদের বড় একটি অংশ

 

আহমদ কায়কাউস বিগত সরকারের প্রশাসনের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা। প্রথমে জ্বালানি সচিব ও পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন।


দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে দায়িত্ব পালনকালে তিনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বদলে তাদের প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। অবসরের পর খবর চাউর হয়েছিল তার কানডায় বাড়ি আছে। তিনি সে দেশের নাগরিকও ছিলেন।


পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের আগেই দেশ ছেড়ে পালান। তিনি একাধিক দেশের নাগরিক ছিলেন।

 

জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০৯ নামে একটি বিশেষ আইন পাস করা হয় পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। বিশেষ এই আইনের সুবিধা ভোগ করতেন শেখ হাসিনা, তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা ও তার পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। এদের মধ্যে শেখ হাসিনা ছাড়া বাকিরা সবাই অন্য দেশের নাগরিক ছিলেন।

 

এছাড়া দেশের বড় বড় উদ্যোক্তা, ব্যাংকার, অলিগার্কদের বেশিরভাগই হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে অন্য দেশের নাগরিক হয়েছেন অথবা দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন।

 

এমনকি বিগত সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তাও দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন। পরবর্তীতে তাদের অনেককে নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে হয়েছে, অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি ও ভালো রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে না ওঠার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করছে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা। শক্তিশালী দেশ গঠনের পথে বড় অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে এটি।

 

২০২৩ সালের মার্চের আগ পর্যন্ত বিশ্বের ৫৭টি দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশীদের। এ সুযোগ প্রসারিত করে দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার তালিকায় গত বছরের ১২ মার্চ এক গেজেটের মাধ্যমে নতুন করে আরো ৪৪টি দেশ যুক্ত করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এতে দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চল ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার সুযোগ আছে বিশ্বের ১০১টি দেশে। সাধারণত বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস, ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি নিরাপত্তা ইস্যুতেও অনেকে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা নিয়ে থাকেন। তবে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশ থেকে সম্পত্তি স্থানান্তর, অর্থ পাচার ও গন্তব্য দেশগুলোয় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশী বিত্তশালীদের বড় একটি অংশ।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বৈত নাগরিকত্বে ভালো-মন্দ দুই ধরনের সুবিধা থাকলেও বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচক ব্যাপারগুলোয়ই প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে বেশি। আর এসব হচ্ছে মূলত দেশে সুশাসন ও জবাবদিহিতা না থাকায়। বর্তমানে এ দ্বৈত নাগরিকত্বই সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালী দেশ গঠনের পথে বড় অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে।

 

দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেয়া দেশের তালিকা বাংলাদেশ দীর্ঘ করলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের নাগরিকত্ব আইনে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। বরং ভারতের কোনো নাগরিক যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তার ভারতের নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় নেপাল-আফগানিস্তানের মতো দেশেও দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত রয়েছে।

 

প্রচুর বাংলাদেশী গত দেড় দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা নিয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশ থেকে অর্থ পাচার, বিদেশে স্থায়ী নিবাস, ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ বহু দেশে অর্থ ও সম্পদ সরিয়ে নিয়েছেন তারা। বিদেশী বাংলাদেশীদের অস্বাভাবিকভাবে সম্পদ বৃদ্ধি এমনকি বিলিয়ন ডলারের সম্পদ গড়ে তোলার ঘটনাও বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে আসছে। বিশেষ করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের বেশকিছু প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিলব্ধ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে।

 

দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগে আবেদন করতে হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নাগরিকত্ব আইন, বিধি ও পরিপত্র অনুসরণে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই শেষে দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদপত্র ইস্যু বা আবেদন বাতিল করা হয়। তবে বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধান অনুযায়ী, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেই।

 

আবার সংবিধানের ৬৬তম অনুচ্ছেদে দ্বৈত নাগরিকদের মন্ত্রী বা এমপি হওয়ার কোনো সুযোগ রহিত করা হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেকে দ্বৈত নাগরিক থাকাকালে মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে এর সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, বিগত সরকারের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও এমপিসহ ২৪ আওয়ামী লীগ নেতার দ্বৈত নাগরিকত্ব বা বিদেশে স্থায়ী নিবাসী হিসেবে অনুমতি গ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বড় করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব রয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বেলজিয়ামের ‘রেসিডেন্ট কার্ড’ রয়েছে।

 

এছাড়া মন্ত্রিপরিষদের সাবেক পাঁচ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামাল, মো. তাজুল ইসলাম, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মো. মাহবুব আলীর যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব রয়েছে। মাহবুব আলী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ তুরস্কের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। একই সঙ্গে স্পেনেও ‘স্থায়ী নিবাসী’ হওয়ার সুবিধা নিয়েছেন তিনি। সাবেক সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা কবির বিন আনোয়ার যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। তবে তার দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

 

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীরা বলছেন, দেশের বাইরে এক কোটির বেশি বাংলাদেশী বসবাস করছেন। তাদের বড় একটি অংশ ইউরোপ বা আমেরিকা মহাদেশের উন্নত দেশগুলোয় বসবাস করছেন। বিদেশে বসবাসের কারণে তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই আশঙ্কা থাকে কোনো এক সময় তারা হয়তো দেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাবেন। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধা থাকলে হয়তো তারা বা তাদের ছেলে-মেয়েরা দেশে ফিরে বসবাস বা ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন। এমনকি যারা বিদেশে ব্যবসা করছেন, তারা দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা নিয়ে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ টেনে আনতে পারবেন। কিন্তু এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশীদের বড় একটি অংশ এখন বিদেশে সম্পদ স্থানান্তর করেছেন। এটি দ্বৈত নাগরিকত্বের নেতিবাচক দিক। দুর্নীতি বা অসদুপায়ে অর্জিত সম্পদ বিক্রি করে অন্য দেশে যারা ব্যবসা গড়ছেন, তারা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে সুবিধামতো বাংলাদেশের নাগরিকত্বও ত্যাগ করছেন।

 

হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. তানভীর আহমেদ বলেন, ‘দ্বৈত নাগরিকত্বে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে সুবিধা-অসুবিধা দুটোই রয়েছে। তবে মোটা দাগে বলতে গেলে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা নিয়ে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী তারা দুর্নীতি হোক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে হোক, দেশ থেকে সম্পদ হস্তান্তর করছেন। এটি একটি খারাপ দিক। দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে আইনগতভাবে একটা বাধা তৈরি করা যেতে পারে। অর্থাৎ আইনে একটি প্রভিশন রাখা যেতে পারে, যেখানে কেউ দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধা নিলেও দেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর করতে পারবেন না। তাহলে দেখা যাবে দুর্নীতি বা অন্য কোনো মাধ্যমে বিদেশে সম্পদ হস্তান্তরের প্রবণতা কমে যাবে।’

 

গ্লোবাল সিটিজেন সলিউশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও আফগানিস্তানে দ্বৈত নাগরিকত্বের ওপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, পোল্যান্ডসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ একই নীতি অনুসরণ করে। এসব দেশের নাগরিকদের অন্য কোনো দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে বিশেষ কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এ সুযোগ রয়েছে।

 

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ দেয়া আছে, তার মধ্যে অনেকগুলোরই আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, আফ্রিকার নাইজেরিয়া, বুরুন্ডি, এশিয়ার সিরিয়া ইত্যাদি এসব দেশের অন্তর্ভুক্ত।

 

বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে আইনি ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করা উচিত বলে মনে করছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘‌অনেকেই দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধার অপব্যবহার করেছেন বলে মনে হচ্ছে। কারণ এর সুবিধা নিয়ে নিয়ে অর্থ পাচার কিংবা বিদেশে প্রপার্টি কেনার বিষয় গণমাধ্যমে বিভিন্ন খবর দেখা যায়। তবে দ্বৈত নাগরিকত্ব দেশের সুশাসন ও শক্তিশালী রাষ্ট্র বিনির্মাণের অন্তরায় কিনা তা গবেষণার বিষয়। অনেকেই বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পরিত্যাগও করছেন। অর্থ পাচার রোধের জন্য যে আইনি ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করা উচিত। অর্থাৎ আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন।’

 

অভিবাসনসংক্রান্ত সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান লন্ডনভিত্তিক অ্যাস্টনসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের বিদেশী প্রপার্টি ক্রেতাদের তালিকায় বাংলাদেশীদের অবস্থান নবম। ২০২০ সালের ওই নয় মাসে সেখানে ৯৮টি লেনদেনের মাধ্যমে বাংলাদেশীরা প্রায় ১২ কোটি ২৯ লাখ পাউন্ড মূল্যের প্রপার্টি কিনেছেন। এছাড়া দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের স্থানান্তরের মাধ্যমে অবৈধভাবে কাজ দেয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি সম্পদ বিক্রি করে অর্থ নিয়ে যাওয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে।

 

ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ড. সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘কোনো রাষ্ট্র সুসংহতভাবে গড়তে হলে সেদেশের নাগরিকত্বের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা দরকার। যখন একজন ব্যক্তি তার বশ্যতা অন্য কোথাও দিয়ে থাকে, তখন তাকে কোনো রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে দেয়া উচিত নয়। তাদের কোথায় সুবিধা পাওয়া উচিত, আর কোথায় উচিত না; সেটিও সুনির্দিষ্ট করা উচিত রাষ্ট্রের। কিন্তু নীতি প্রণয়ন এবং মূল কতগুলো কর্মকাণ্ডে তাদের জায়গা দেয়া উচিত না। সব থেকে বড় কথা তাদের আলাদাভাবে নিবন্ধীকরণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এগুলো না হলে রাষ্ট্র গঠন কোনোদিনই ঠিক হবে না।’

 

তিনি বলেন, ‘‌দ্বৈত নাগরিকদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের এবং নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নিয়ে অনেক অস্পষ্টতা আছে। অন্য দেশের নাগরিকত্ব নেয়া কোনো ব্যক্তি এ দেশে ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়ার পর নিজেদের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে দেন। এখানে আইনের প্রশ্রয় এবং এদেশের অনিয়মের কারণে অপরাধীদের দণ্ড প্রাপ্তির বিষয়টা সহজ থাকে না। দ্বৈত নাগরিকত্বের ভালো দিক আছে। তবে এটিকে খারাপভাবে ব্যবহারের প্রবণতা একটা গ্রুপের রয়েছে।’

সুশাসন ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনে বড় অন্তরায় দ্বৈত নাগরিকত্ব