ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ - ১:৩১:৪২ পিএম

সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি

৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬:০ এএম

সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি

ছবি: সংগ্রহ

প্রতিবছর নভেম্বরের শুরু থেকে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল পুরোদমে শুরু হয়।

কিন্তু সম্প্রতি সরকারের নেওয়া উদ্যোগ ও প্রশাসনিক বিধি-নিষেধের জটিলতার কবলে জাহাজ চলাচলে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কবে নাগাদ এ অনিশ্চয়তা কাটবে তাও বলা যাচ্ছে না।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণলয়ের সভায় সেন্ট মার্টিনের বিষয়ে নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ অক্টোবর একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অসমা শাহীনের সই করা একটি পরিপত্র জারি হয়।

 

তাতে বলা হয়েছে, সেন্টমার্টিনে নৌ-যান চলাচলের বিষয়টি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে অনুমতি দেবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ।

 

পর্যটকের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি হবে না। দ্বীপে রাতে আলো জ্বালানো যাবে না, শব্দদূষণ সৃষ্টি, বারবি কিউ পার্টি করা যাবে না।

 

সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য ইতোমধ্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় অনুমতি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন।

 

তার দাবি, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে জাহাজ চলাচলের কথা রয়েছে। কিন্তু দ্বীপে পর্যটক সীমিতকরণের সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াগত বিষয়টি সম্পাদনে কাজ চলছে।

 

এদিকে, প্রশাসনিক বিধি-নিষেধ বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় জাহাজ চলাচলের অনুমতির বিষয়টি আটকে গেছে বলে জানিয়েছেন সেন্ট মার্টিন পর্যটন খাতের সংশ্লিষ্টরা।

 

একটি জাহাজের মালিক পক্ষের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মূলত সেন্ট মার্টিনে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজারের বেশি পর্যটক না যাওয়া এবং নভেম্বরে যাওয়া পর্যটকরা রাত্রিযাপন করতে না পারার বিষয়টিকে বাস্তবায়ন করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

 

তিনি বলেন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ বিষয়ে একটি অ্যাপের আদলে ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে। এটি ব্যবহার করে বিষয়টি জাহাজ মালিকদের পক্ষে বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু জাহাজ মালিকরা এ দায়িত্ব নিতে রাজি নন।

 

সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, এটি জাহাজ মালিকরা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। দুই হাজারের বেশি পর্যটক না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি এখনও পর্যটন সংশ্লিষ্ট কেউ গ্রহণ করেননি। এরা ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বীপের মানুষ গণহারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এটার দায়িত্ব জাহাজ কর্তৃপক্ষ নিলে উল্টো দ্বীপবাসীসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা ক্ষুব্ধ হবেন।

 

 

যেখানে রয়েছে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার, হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব সেন্ট মার্টিন্স, সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব সেন্ট মার্টিন্স, বাংলাদেশ স্লিপার এসি বাস মালিক সমিতি, সেন্ট মার্টিন বাজার দোকান ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, বোট মালিক সমিতি, স্পিড বোট মালিক সমিতি, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সেন্ট মার্টিন্স, সেন্ট মার্টিন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি, সেন্ট মার্টিন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, ঢাকাস্থ বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সেন্ট মার্টিনের শিক্ষার্থী, সেন্ট মার্টিন অটোরিকশা মিনি টমটম ভ্যান মালিক সমবায় সমিতি।

 

এই জোটের চেয়ারম্যান শিবলুল আজম কোরেশী ও সভাপতি এম এম সাদেক লাবু বলছেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ এবং ভ্রমণ সীমিতকরণের কারণে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিন লাখের বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাই পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করে পর্যটক যাতায়াত অব্যাহত রাখতে সুপরিকল্পিত সংস্কার করতে হবে।

 

সেন্ট মার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকেদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের প্রথম দিন থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটনবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়ে আসছে।

 

এর মধ্যে সাড়ে ৩০০ যাত্রী ধারণ ক্ষমতার কেয়ারি সিন্দবাদ, সাড়ে ৭০০ যাত্রী ধারণ ক্ষমতার কর্ণফুলী, সাড়ে ৮০০ যাত্রী ধারণ ক্ষমতার বার আউলিয়া জাহাজ প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত এখনও পাওয়া যায়নি।

 

হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, মন্ত্রণালয়ের সম্মতির ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের প্রয়োজনের কথা বলা হচ্ছে। সম্মতি না পেলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেবে না। কবে থেকে এই অনুমতি পাওয়া যাবে তাও নিশ্চিত করা বলা যাচ্ছে না।

 

ইনানী সমুদ্র সৈকতের নৌ বাহিনীর জেটিটি ঘূর্ণিঝড় দানার আঘাতে খণ্ডিত হওয়ার পর একপক্ষ এটির সংস্কার, অন্যপক্ষ উচ্ছেদের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এ নিয়েও জাহাজ চলাচলে রয়েছে প্রতিবন্ধকতা।

 

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক নৌমহড়া উপলক্ষে উখিয়ার ইনানী এলাকায় নৌবাহিনী একটি জেটি নির্মাণ করে। নৌমহড়া শেষে নির্মিত এই জেটি দিয়ে পর্যটন মৌসুম নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সেন্ট মার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সাগরের ঢেউয়ের প্রচণ্ডতায় সংস্কারকাজে নিয়োজিত একটি বার্জের ধাক্কায় জেটিটির একটি অংশ ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়।

 

জেটি থাকা না থাকা নিয়ে দুপক্ষের দুই রকম অবস্থানের কারণও সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজ চলাচলের অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।ৃ

সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি